
প্রকাশ: ১২:০০:০০ AM, শনিবার, ফেব্রুয়ারী ২৯, ২০২০ | |
স্বামী মারা যাওয়ার পর তার রেখে যাওয়া সামান্য অর্থ ডাকঘর স্কিমে বিনিয়োগ করেছেন সাহিদা খাতুন। মাস গেলে যে মুনাফা পান তা দিয়েই মেটানো হয় সংসারের ব্যয়। তিন সন্তানের লেখাপড়া এবং অন্যান্য চাহিদা মেটাতে হিমশিম অবস্থা। গেল বৃহস্পতিবার ডাকঘরে মুনাফার অর্থ তুলতে এসে বলেন, সুদ কমিয়ে দিলে কীভাবে চলবে সংসার?
শাহিদা খাতুনের মতোই অনেক বিনিয়োগকারী মুনাফা নিয়ে চিন্তিত। মুনাফার হার কমিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্তে সঞ্চয়কারীদের মধ্যে রয়েছে হতাশা। ডাকঘরে আমানতের সুদের হার কমিয়ে প্রায় অর্ধেক করেছে সরকার। তিন বছর মেয়াদি বিনিয়োগে এখন থেকে ৬ শতাংশ সুদ পাওয়া যাবে। এতদিন যা ছিল ১১ দশমিক ২৮ শতাংশ। অন্য স্কিমেও সুদ হারে পরিবর্তন হয়েছে। সমালোচনার মুখে বুধবার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেছে সরকার। বলা হচ্ছে, অটোমেশন বা স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থা চালু হলে আগের সুদ হারই বহাল থাকবে। কিন্তু বিনিয়োগকারীদের প্রশ্ন, এক্ষেত্রে নানা শর্ত যুক্ত করা হলে বিনিয়োগ কঠিন হবে।
ঢাকা জিপিওর ডেপুটি পোস্টমাস্টার জেনারেল খন্দকার শাহনুর সাব্বির জানান, ডাকঘর স্কিমে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থা চালুর উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। জাতীয় সঞ্চয়পত্র স্কিমে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে যেসব শর্ত পরিপালন করা হয়, এখানেও সে ধরনের শর্ত দেওয়া হতে পারে। তিনি বলেন, সরকার চায়Ñ কারা বিনিয়োগ করছে তা চিহ্নিত হওয়া দরকার। আগামী মাসে শুরু হবে পাইলট কার্যক্রম। জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের তথ্যমতে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ডাকঘরে সঞ্চয়ে নিট বিনিয়োগ ছিল প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে তিন বছর মেয়াদি সঞ্চয়পত্রে ৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগ করেছেন গ্রাহক।
সরেজমিন বৃহস্পতিবার জিপিওর নিচতলায় গিয়ে কথা হয় বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে। তারা জানান, ডাকঘর অটোমেশন হওয়ার পর গ্রাহকদের টিআইএন (ট্যাক্স আইডেন্টিফিকেশন নম্বর) ও আইডি নম্বর নেওয়া হবে। এতে অনেকেই দুর্ভোগে পড়বেন। শর্তযুক্ত করা হলে বিনিয়োগ কমে যাবে। সহজে বিনিয়োগের সুযোগ নিয়ন্ত্রণ করা হলে সাধারণ মানুষ আসবে না। যাত্রাবাড়ী থেকে আসা আবদুল আলিম জানান, বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বাড়তি করারোপ করা হলে মুনাফা কমে যাবে। পেনশনের অর্থ জমা রাখা তাসলিমা খান জানান, নতুন করে আবার জমা রাখার পদ্ধতি পরিবর্তন হলে সমস্যা বাড়বে। মুনাফা নিয়ে চিন্তিত নুরজাহান বেগম। তিনি বলেন, সরকার মুনাফার হার কমিয়ে দিয়েছে। কবে আবার আগের জায়গায় পৌঁছাবে তা বলা কঠিন।
স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থা চালু হলে কমে যায় বিনিয়োগ। যার প্রমাণ জাতীয় সঞ্চয়পত্র বিক্রি। গেল বছরের চেয়ে এ বছর সঞ্চয়পত্রের সুদের ওপর উৎসে আয়কর কর্তনের হার ৫ শতাংশ থেকে আমানত নিয়ন্ত্রণ
বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করা হয়েছে। অবশ্য ব্যাংকগুলোর স্থায়ী আমানতের ক্ষেত্রেও সুদের ওপর উৎসে করের হার ১০ শতাংশ এবং যাদের টিআইএন নেই, এ হার তাদের ক্ষেত্রে ১৫ শতাংশ। ৫ লাখ টাকার বেশি সঞ্চয়পত্রের সুদের ওপর উৎসে কর ৫ শতাংশের পরিবর্তে ১০ শতাংশ করা হয়েছে। এক লাখ টাকার বেশি সঞ্চয়পত্র কিনতে কর শনাক্তকরণ নম্বর বা টিআইএন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। ফলে চলতি অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় অর্ধেকে নেমে এসেছে সঞ্চয়পত্র বিক্রি। তথ্য বলছে, ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রথম ৫ মাসে গেল বছরের একই সময়ের তুলনায় সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে এক-তৃতীয়াংশের কিছু কম।
অর্থমন্ত্রী বুধবার সচিবালয়ে জানান, ১৭ মার্চ থেকে ডাকঘর সঞ্চয় স্কিমের সুদহার আবারও ১১ দশমিক ২৮ হবে। তবে এ ক্ষেত্রে অটোমেশনের শর্ত দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, এ সিদ্ধান্ত প্রথম পর্যায়ে বাস্তবায়ন হবে জেলায়; এরপর উপজেলা পর্যায়ে। অটোমেশন হওয়ার পর ডাকঘর সঞ্চয়পত্র স্কিমে টিআইএন ও জাতীয় পরিচয়পত্র লাগবে। তবে দুই লাখ টাকা পর্যন্ত কোনো টিআইএন বা জাতীয় পরিচয়পত্র লাগবে না। স্বয়ংক্রিয় করার ক্ষেত্রে কাজ শুরু করেছে সঞ্চয় অধিদপ্তর। ঢাকা জিপিওর ডেপুটি পোস্টমাস্টার জেনারেল খন্দকার শাহনুর সাব্বির জানান, বর্তমানে ডাকঘর সঞ্চয় স্কিমে মোট গ্রাহক সংখ্যা এক কোটি। তার মধ্যে ৫০ থেকে ৬০ লাখ গ্রাহক নিয়মিত অর্থ জমা এবং উত্তোলন করে থাকেন। তিনি বলেন, সরকারের যে প্রতিষ্ঠান জাতীয় সঞ্চয় স্কিমে স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থা চালুর ক্ষেত্রে পদক্ষেপ নেয়, সেই প্রতিষ্ঠানই ডাকঘর স্কিমে অটোমেশন ব্যবস্থা চালু করবে।
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ বা সিপিডির সিনিয়র রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান জানান, ডাকঘর সঞ্চয় স্কিমের গ্রাহক মূলত গ্রামের মানুষ। তাদের সঞ্চয়ের জায়গা কম। সুদ হার কমিয়ে দেওয়া এবং স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থার আওতায় এসে বিনিয়োগ নিয়ন্ত্রণ করা হলে তাদের জন্য সমস্যা তৈরি হবে। তিনি বলেন, সরকারের সব কাজের মধ্যে যুক্তি থাকে, কিন্তু কী কারণে সুদ হার হঠাৎ করেই কমানো হলো তার কোনো যুক্তি নেই। একটা প্রক্রিয়ার মধ্যে যাওয়ার প্রয়োজন ছিল। বর্তমান সময়ে ব্যাংক খাতের অবস্থা ভালো না, আমানত নিয়ন্ত্রণ হয়ে যাবে। সময় যেহেতু খারাপ, এ সময়ে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ার কোনো যুক্তিযুক্ত কারণ নেই।
![]() সম্পাদক ও প্রকাশক : কাজী রফিকুল আলম । সম্পাদক ও প্রকাশক কর্তৃক আলোকিত মিডিয়া লিমিটেডের পক্ষে ১৫১/৭, গ্রীন রোড (৪র্থ-৬ষ্ঠ তলা), ঢাকা-১২০৫ থেকে প্রকাশিত এবং প্রাইম আর্ট প্রেস ৭০ নয়াপল্টন ঢাকা-১০০০ থেকে মুদ্রিত। বার্তা, সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক বিভাগ : ১৫১/৭, গ্রীন রোড (৪র্থ-৬ষ্ঠ তলা), ঢাকা-১২০৫। ফোন : ৯১১০৫৭২, ৯১১০৭০১, ৯১১০৮৫৩, ৯১২৩৭০৩, মোবাইল : ০১৭৭৮৯৪৫৯৪৩, ফ্যাক্স : ৯১২১৭৩০, E-mail : [email protected], [email protected], [email protected] |