আজকের পত্রিকাআপনি দেখছেন ১২-০৩-২০১৬ তারিখে পত্রিকা

বকেয়া বিল চাওয়ায় ডিশ কর্মীকে গুলি পুলিশ গ্রেফতার

নিজস্ব প্রতিবেদক
| প্রথম পাতা

বদনাম যেন পিছু ছাড়ছে না পুলিশের। অনেক ভালো কাজের মধ্যে কিছু কিছু বেপরোয়া কর্মকান্ড গোটা বাহিনীর ভাবমূর্তি প্রশ্নবিদ্ধ করে চলেছে। এবার রাজধানীর খিলগাঁওয়ে ডিশ ভাড়ার বকেয়া টাকা চাওয়ায় ক্যাবল অপারেটর কর্মীকে গুলিবিদ্ধ করেছেন পুলিশের একজন সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই)। বংশাল থানায় কর্মরত পুলিশের এই সর্বনিম্ন পর্যায়ের কর্মকর্তার নাম শামীম রেজা। শুক্রবার সকালের এ ঘটনার পর অবশ্য খিলগাঁও থানা পুলিশ এএসআই শামীম রেজাকে গ্রেফতার করেছে। ফৌজদারি আইনে হত্যা প্রচেষ্টার মামলা হওয়ায় সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে তাকে। 
অপরদিকে গুলিবিদ্ধ ক্যাবল অপারেটর কর্মী আল আমিনকে (২৬) পুলিশের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা দেয়া হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। এর আগে সাম্প্রতিক সময়ে মোহাম্মদপুরে এক ব্যাংক কর্মকর্তা, যাত্রাবাড়ীতে সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তা এবং আদাবর এলাকায় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রীর শ্লীলতাহানির চেষ্টাসহ আরও কয়েকটি অভিযোগ ওঠে কয়েকজন পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে। এর মধ্যে অভিযুক্ত অধিকাংশ পুলিশ সদস্যকে সাময়িক বরখাস্ত বা প্রত্যাহার করাও হয়েছে। 
ঢাকা মহানগর পুলিশের গণমাধ্যম শাখার উপকমিশনার (ডিসি) মোঃ মারুফ হোসেন সরদার আলোকিত বাংলাদেশকে বলেন, ঘটনার পর এএসআই শামীম রেজার বিরুদ্ধে মামলা হয়। সেই মামলায় তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। কোনো পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে এ ধরনের মামলা হলে নিয়মানুসারে তিনি সাময়িক বরখাস্ত হয়ে যান। তবে ডিএমপির লালবাগ বিভাগের যুগ্ম কমিশনার মফিজউদ্দিন আহমেদ স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন, খিলগাঁওয়ের ওই ঘটনায় এএসআই শামীম রেজাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এ বিষয়ে বিভাগীয় তদন্তসহ আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
গুলিবিদ্ধ আল আমিনের স্বজনরা হাসপাতালে সাংবাদিকদের জানান, আল আমিন খিলগাঁও নন্দীপাড়ায় ‘ঢাকা ইস্ট ক্যাবল ভিশন’ নামে ডিশ সংযোগ পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। প্রতিষ্ঠানটির মালিক সবুজবাগ থানা আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক লুৎফর রহমান। বংশাল থানায় কর্মরত এএসআই শামীম খিলগাঁও নন্দীপাড়ার পাঁচ নম্বর সড়কের ৯ নম্বর ভবনের চতুর্থ তলায় পরিবার নিয়ে থাকেন। 
আহতের স্বজন ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বিগত পাঁচ-ছয় মাস ধরে শামীম তার বাসার টিভির ডিশ সংযোগের বিল দেননি। বকেয়া বিল নিতে বারবার ক্যাবল অপারেটর কর্মীরা শামীমের বাসায় গেলেও নানা অজুহাতে ঘুরাচ্ছিলেন। শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে আবারও আল আমিন ওই ভবনের নিচে যান বকেয়া টাকার জন্য। এ সময় এএসআই শামীম বের হচ্ছিলেন। টাকা চাইতেই শামীম বলে দেন, কোনো টাকা দেয়া হবে না। আল আমিন তখন তাকে জানান, টাকা না দিলে লাইন কেটে দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রতিষ্ঠানের মালিক। বাকবিত-াকালে শামীম তখন বলেন, টাকা দেব না, পারলে লাইন কেটে দে। যেই কথা সেই কাজ। আল আমিন তখন শামীমের বাসার ডিশ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। আর এতেই ক্ষিপ্ত হয়ে এএসআই শামীম আল আমিনকে চড়-থাপ্পড় মারেন। ক্ষুব্ধ হয়ে আল আমিন শামীমকে গালাগাল দেন। এরপরই এএসআই শামীম তার কোমর থেকে পিস্তল বের করে আল আমিনকে লক্ষ্য করে এক রাউন্ড গুলি চালান। গুলিটি আল আমিনের পিঠের বাম পাশে লেগে চামড়া ভেদ হয়ে বেরিয়ে যায়। পরে আশপাশের লোকজন ছুটে এলে এএসআই শামীম বাসা থেকে বেরিয়ে তার কর্মস্থল বংশাল থানায় চলে যান। তবে এরই মধ্যে ঘটনা জানাজানি হলে বংশাল থানা পুলিশ শামীমকে আটক করে খিলগাঁও থানায় হস্তান্তর করে। বংশাল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নূরে আলম সিদ্দিক বলেন, শামীম রেজা অন ডিউটিতে ছিলেন। তিনি তার বিটের ফরম সংগ্রহের কথা বলে কোনো এক ফাঁকে কাউকে কিছু না জানিয়ে খিলগাঁওয়ে তার বাসায় চলে যান। এরপরই এই ঘটনা ঘটে। ওসি নূরে আলম আরও বলেন, বিধি অনুযায়ী কোনো এএসআই ‘অন ডিউটিতে’ থাকা অবস্থায় সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার অনুমতি ছাড়া থানা এলাকার বাইরে যেতে পারেন না। শামীম দায়িত্বরত অবস্থায় কাউকে না জানিয়ে আগ্নেয়াস্ত্রসহ নিজ সীমানার বাইরে গিয়েছেন। এই অপরাধেও তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
খিলগাঁও থানার ওসি কাজী মাইনুল হোসেন জানান, বংশাল থানা পুলিশ শামীম রেজাকে আটক করে খিলগাঁও থানায় হস্তান্তর করে। এরপর বিকালে শামীমের বিরুদ্ধে হত্যা প্রচেষ্টার মামলা হয়েছে। এ বিষয়ে অন্যান্য আইনগত ব্যবস্থাও নেয়া হবে। গুলিবিদ্ধ আল আমিনকে প্রথমেই রাজারবাগ কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এরপর ঢামেক হাসপাতালেও নেয়া হয়েছিল। তবে তার অবস্থা আশঙ্কামুক্ত বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন।