কৃষক নিখিল তালুকদারকে পিটিয়ে হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছেন কোটালিপাড়া থানা পুলিশের উপ-সহকারী পরিদর্শক (এএসআই) শামীম হাসান। এ মামলার অপর আসামি কোটালীপাড়া পৌর এলাকার কয়খাঁ গ্রামের রেজাউল (৪০) কে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
নিহত নিখিল তালুকদার কোটালীপাড়া উপজেলার রামশীল গ্রামের নীলকান্ত তালুকদারের ছেলে। গতকাল রোববার নিহত নিখিলের ভাই মন্টু তালুকদার বাদী হয়ে থানায় মামলা দায়ের করেন। এরপরই আসামিদের গ্রেপ্তার করা হয়।
নিখিল তালুকদার গত মঙ্গলবার বিকেলে কোটালীপাড়ার রামশীল বাজার এলাকায় গুরুতর জখম হন। পরদিন ঢাকায় পঙ্গু হাসপাতালে তিনি মারা যান।
মন্টু তালুকদার জানান, মঙ্গলবার বিকেলে রামশীল বাজারের ব্রিজের পূর্ব পাশে তার ভাই নিখিলসহ চারজন সময় কাটাতে তাস খেলছিলেন। এ সময় কোটালীপাড়া থানার এএসআই শামীম হাসান একজন ভ্যানচালক ও রেজাউলকে সঙ্গে নিয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। তারা গোপনে মোবাইল ফোনে তাস খেলার দৃশ্য ধারণ করেন।
তিনি বলেন, ‘বিষয়টি টের পেয়ে তাস খেলো রেখে তিনজন পালিয়ে গেলেও নিখিলকে এএসআই শামীম হাসান ধরে মারপিট শুরু করেন। একপর্যায়ে হাঁটু দিয়ে নিখিলের পিঠে আঘাত করেন তিনি। রেজাউল এ কাজে তাকে সহায়তা করেন। এতে নিখিলের মেরুদণ্ড ভেঙে যায়।’
মামলার বাদী বলেন, ‘নিখিলকে প্রথমে বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে ঢাকায় পঙ্গু হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত বুধবার বিকেলে নিখিল মারা যান।’
তিনি জানান, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিখিলের লাশের ময়নাতদন্ত করা হয়েছে এবং গত বৃহস্পতিবার রামশীল গ্রামে তার ভাইয়ের শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়েছে।
মন্টু তালুকদার জানান,ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে প্রভাবশালী একটি মহল তাদের ওপর চাপ প্রয়োগ করে। থানায় মামলা না করে পরে তারা বাধ্য হয়ে গত শনিবার সালিশ বৈঠকে যান। সালিশে ৫ লাখ টাকায় এটি দফা রফা করা হয় এবং সেখানে নিখিলের পরিবারের দুই সদস্যকে চাকরি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়।
তিনি বলেন, ‘এতে আমরা সম্মত ছিলাম না; কিন্তু সেখানে এ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করার সাহস আমাদের ছিল না। ২ লাখ টাকা নিয়ে আমরা সালিশ মেনে কোনোরকমে চলে আসি। আসলে সেভাবে আপস মীমাংসা হয়নি। তাই অবশেষে ন্যায্য বিচার পেতে আমরা মামলা দায়ের করেছি।’ কারা তাদেরকে চাপ প্রয়োগ করেছেন তাদের নাম তিনি জানাননি।
কোটালীপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ লুৎফর রহমান জানান, রোববার রাতেই হত্যা মামলাটি রেকর্ড করা হয়েছে। মামলার আসামি এএসআই শামীম হাসানকে জেলা পুলিশ লাইনসে সংযুক্ত করা হয়েছে। তাকে এই মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। এ ছাড়া রাতেই পুলিশ রেজাউলকে তার গ্রামের বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে। দুজনকেই আজ সোমবার আদালতে হাজির করা হবে বলে জানান ওসি।