মেট্রোরেল ও উড়াল সড়ক চালুর আগেই ঢাকাবাসীকে সুশৃঙ্খল সড়ক পরিবহন ব্যবস্থা উপহার দিতে চাইছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। এ লক্ষ্যেই রাস্তা থেকে লক্কড়-ঝক্কড় পুরনো বাস তুলে দিয়ে দুই বছরের মধ্যে ৩ হাজার নতুন বাস নামানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ৩ হাজার বাসের মধ্যে এসি বাস থাকবে অন্তত ১ হাজার। ঢাকা মহানগরীতে বাস পরিচালনাকারী ১৯০টি বাস কোম্পানিকে একীভূত করা হবে পাঁচটি কোম্পানির মধ্যে। এরপর রুটভেদে চলাচল করবে ভিন্ন ভিন্ন রঙের বাস। প্রাথমিকভাবে পাঁচটি নির্দিষ্ট রুটে চলবে নির্দিষ্ট রঙের বাস। একেক রুটের বাসে থাকবে একেক রঙের টিকিট। যাত্রী বেশি বা কম যাই থাকুক, নির্দিষ্ট সময় পরপর বাসগুলো নিজ গন্তব্যে যেতে থাকবে। এভাবেই ঢাকার যানজট কমিয়ে সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার পরিকল্পনা করা হয়েছে।
এ বিষয়ে ডিএনসিসি মেয়র আনিসুল হক জানান, পরিকল্পিত উদ্যোগ বাস্তবায়ন হলে নগরবাসীকে আর পরিবহন হয়রানিতে পড়তে হবে না। নির্দিষ্ট স্থানে দাঁড়িয়ে যে যার গন্তব্যের বাস পাবেন ঝামেলাহীনভাবেই। পরিকল্পনাটি এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে প্রায় ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা প্রয়োজন হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে এ অর্থ জোগাড়ের চেষ্টা চলছে। এরই মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। তাতে ইতিবাচক সাড়া পাওয়া গেছে। মেয়র জানান, আসলে ১৯০টি বাস কোম্পানিকে পাঁচটি কোম্পানিতে নিয়ে আসাটাই ছিল বড় চ্যালেঞ্জ। সবচেয়ে জটিল বিষয়টিতে যেহেতু সবাই সম্মত হয়েছেন, তখন বাকি কাজটাও করা সম্ভব হবে।
সিটি মেয়রের উদ্যোগের বিষয়ে সড়ক পরিবহন বিশেষজ্ঞ ও প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের পুর প্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. শামসুল হক বলেন, এটি অবশ্যই ভালো উদ্যোগ। মাস্ট র্যাপিড ট্রানজিট (এমআরটি) চালুর আগে এ সিস্টেম চালু করতে পারলে ভালো হবে। তিনি বলেন, পরিকল্পনাটি বাস্তবায়িত হলে পরিবহন খাতে শুধু শৃঙ্খলাই ফিরে আসবে না, পাশাপাশি ফাংশনাল প্রোডাক্টিভিটি অনেক বেড়ে যাবে। এছাড়া বাস চালকদের মধ্যে অসুস্থ প্রতিযোগিতা বন্ধ হবে।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্লাহ বলেন, প্রাথমিকভাবে বাস মালিকরা বিষয়টিতে একমত পোষণ করেছেন। নতুন ব্যবস্থা চালু হলে যাত্রী ওঠানোর জন্য চালকদের প্রতিযোগিতা করতে হবে না। একটি বাস যত কম বা যত বেশিই যাত্রী পরিবহন করুক কোম্পানিগুলোর মধ্যে আয় শেয়ারিং হবে। এতে সড়কে শৃঙ্খলা ফেরার পাশাপাশি যানজট সমস্যা কমবে। কমবে দুর্ঘটনার সংখ্যাও। তিনি বলেন, আমরা এক বছরের মধ্যেই ঢাকার রাস্তায় নতুন বাস নামাতে চাই। এ বিষয়ে উত্তর সিটি করপোরেশন কাজ করে চলছে বলে জানি। সংশ্লিষ্টরা জানান, রাজধানীতে চলাচলকারী পাঁচ রঙের বাসগুলোতে থাকবে আধুনিক টিকিটিং ব্যবস্থা। এমনকি কার্ড সিস্টেমও চালু হতে পারে। তবে কোন রুটে কোন রঙের বাস চলবে, সে বিষয়ে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।