উত্তাল মার্চের ১২তম দিন আজ। ১৯৭১ সালের এ দিনটিতেও পূর্ব পাকিস্তান ছিল অসহযোগ আন্দোলনে উত্তাল। এদিন শিল্পী কামরুল হাসানের আহ্বানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবনে আয়োজিত শিল্পীদের এক সভায় ‘শাপলা’ ফুলকে বাংলাদেশের জাতীয় ফুল করার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করা হয়। এ ঘোষণা মুক্তিকামী মানুষকে সেদিন অনেক বেশি উৎসাহী করে। শিল্পী মর্তুজা বশীর ও কাইয়ুম চৌধুরীর নেতৃত্বে গঠিত হয় চারুশিল্প সংগ্রাম পরিষদ।
এদিন ইশতেকলাল পার্টির প্রধান এয়ার মার্শাল (অব.) আসগর খান টানা তৃতীয় দিনের মতো লাহোরে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, দেশকে খন্ডবিখন্ড হয়ে যাওয়ার হাত থেকে রক্ষার জন্য অনতিবিলম্বে প্রেসিডেন্টের উচিত ঢাকায় গিয়ে শেখ মুজিবের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে মুজিব প্রদত্ত সব শর্ত মেনে নেয়া। জাতীয় লীগ সভাপতি আতাউর রহমান খান এদিন বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে গিয়ে তার সঙ্গে সবশেষ রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে এক বৈঠকে মিলিত হন। এদিকে ময়মনসিংহে এক জনসভায় মজলুম নেতা মওলানা ভাসানী বঙ্গবন্ধুর ঘোষিত কর্মসূচির প্রতি একাত্মতা প্রকাশ করে বলেন, শেখ মুজিবুর রহমান যদি বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলনে সঠিক নেতৃত্ব দিতে সক্ষম হন তবে ইতিহাসে তিনি কালজয়ী বীররূপে, নেতারূপে অমর হয়ে থাকবেন। এদিন বিবিসির সংবাদে বলা হয়, প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান শনিবার রাজনৈতিক সঙ্কট উত্তরণে আলাপ-আলোচনার জন্য ঢাকা আসছেন।
এদিন দেশের সর্বস্তরের মানুষ বঙ্গবন্ধু ঘোষিত কর্মসূচির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে মিছিল নিয়ে নেতার ধানমন্ডির বাসভবনে আসতে থাকে। সারা দিন এমনকি গভীর রাত পর্যন্ত সংগ্রামী জনতা বিভিন্ন স্লোগান ধ্বনিতে চারদিক প্রকম্পিত করতে থাকে। এদিন অন্তত দেড় শতাধিক মিছিল বঙ্গবন্ধুর বাসভবনের সামনে আসে এবং বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে। এদিকে এদিন বগুড়ার কারাগার ভেঙে ২৭ কয়েদি পালিয়ে যান। পুলিশের গুলিতে এদিন নিহত হন একজন এবং আহত ১৬ জন। চলচ্চিত্র প্রদর্শকদের আহ্বানে এদিন থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ হয়ে যায় পূর্ব পাকিস্তানের প্র্রেক্ষাগৃহ।