সালাম একটি সম্ভাষণ। তবে শুধু সম্ভাষণ নয়, এতে আছে শান্তির বার্তা। নিরাপত্তার নিশ্চয়তা। অবারিত খোদায়ী রহমতের বর্ষাধারা। হাদিসের ভাষায়, অহঙ্কারমুক্ত জীবনের খোশখবরি। নিঃসন্দেহে সালাম ইসলামের শেয়ার বা প্রতীক। ইসলামের বৈশিষ্ট্য। যার মাধ্যমে এক মুসলমান অপর মুসলমানকে সাদরে গ্রহণ করে নেয়। ভ্রাতৃত্বের উদারতায় সবাইকে কাছে টেনে নেয়। পৃথিবীর কোনো সভ্যতায়, কোনো ধর্মে এমন সুন্দর, মাধুর্যপূর্ণ সম্ভাষণ আছে কি? পৃথিবীর ইতিহাস চুষে বেড়ালেও এমন বহুমাত্রিক সম্ভাষণ খুঁজে পাওয়া যাবে না।
ইসলাম তো মানবজাতিকে ১৪০০ বছর থেকে এ শান্তির বার্তা শিক্ষা দিয়ে আসছে। শান্তি প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়েই রাষ্ট্রে ও সমাজে অগণিত মানুষের মাঝে মেলবন্ধনের সেতু রচনা করেছে। কিন্তু তাকে আজ ‘অশান্তি সৃষ্টির’ দায়ভার নিতে হচ্ছে। তার অনুসারীদের ভিন্ন নামে ‘সম্বোধনের’ প্রচলন শুরু হয়েছে। কথা হলো, কেউ যদি ইসলামের সম্ভাষণের আবেদনটুকু শুধু হৃদয়ঙ্গম করে নিতে পারে, তার আর যাই হোক, ইসলাম সম্পর্কে নেতিবাচক চিন্তা দ্বারা প্রভাবিত হবে না। মূলত সালামের মানবিক আবেদন সবাই বুঝে না। আর কিছু মানুষ বুঝেও বুঝতে চায় না।
সালামের গুরুত্ব সম্পর্কে কোরআনে কিছু আয়াত ও অসংখ্য হাদিস রয়েছে। পরিবারে ও সমাজে ইসলামের ভালোবাসা এবং সম্প্রীতি ছড়িয়ে দেয়ার লক্ষ্যে, পাশাপাশি নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য সালামের ভূমিকা অপরিসীম। এজন্যই বারবার সালামের গুরুত্ব ও ফজিলত নিয়ে কোরআন-হাদিসে আলোচনা করা হয়েছে।
নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য অন্য কারও ঘরে প্রবেশ করার আগে সালাম দেয়া আবশ্যক করা হয়েছে। পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘হে মোমিনরা! তোমরা নিজেদের গৃহ ছাড়া অন্য গৃহে প্রবেশ করো না, যে পর্যন্ত পরিচয় না দাও এবং গৃহবাসীকে সালাম না করো। এটাই তোমাদের জন্য উত্তম, যাতে তোমরা স্মরণ রাখো।’ (সূরা মোমিনুন : ২৭)।
এ আয়াতে মহান আল্লাহ তাঁর মোমিন বান্দাকে অনুমতি না নিয়ে এবং সালাম না দিয়ে কারও ঘরে প্রবেশ করতে নিষেধ করেছেন। সালাম দেয়ার পর ভেতর থেকে অনুমতি এলেই ঘরে প্রবেশ করা জায়েজ হবে। অথচ বর্তমান সমাজে ভয়ানক মানসিকতা হলো অনুমতি না নিয়েই অন্যের ঘরে প্রবেশ করা। তারপর অনুমতি নেয়া!
সমাজে শান্তি স্থাপন এবং পারস্পরিক ভালোবাসা ও সম্প্রীতি ছড়িয়ে দেয়ার জন্য হাদিসে আদেশ করা হয়েছে। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত রাসুল (সা.) এরশাদ করেন, ‘তোমরা মোমিন হওয়া ছাড়া জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। আর পরস্পরকে ভালোবাসা ছাড়া মোমিন হতেও পারবে না। আমি কি তোমাদের বলব, কী করলে তোমরা পরস্পরকে ভালোবাসতে পারবে? নিজেদের মাঝে সালামের প্রসার ঘটাও। (মুসলিম)।
সালাম দেয়ার জন্য পরিচিত হতে হয় না। চেনা-অচেনা সব মুসলমানকে দেয়া যায়। আল্লাহর পক্ষ থেকে বান্দার জন্য এ যেন মুক্তহস্তে নেকি অর্জনের ব্যবস্থা। বান্দা চাইলেই এ সহজতম আমল করে জান্নাত নিতে পারে। যেমন হাদিসে আবদুল্লাহ ইবনে ওমর ইবনুল আস (রা.) থেকে বর্ণিত যে, এক লোক রাসুল (সা.) কে জিজ্ঞেস করলেন, ‘ইসলামের শ্রেষ্ঠ আমল কোনটি? তিনি বললেন, আহার দান করো আর চেনা-অচেনা সবাইকে সালাম দাও।’ (বোখারি ও মুসলিম)।
মাটির তৈরি আদম (আ.) আর নূরের তৈরি ফেরেশতাদের মাঝে এ সালাম দিয়েই সম্পর্কের সূচনা হয়েছে। যেমন হাদিসে এসেছে, আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) এরশাদ করেছেন, ‘আল্লাহ আদম (আ.) কে সৃষ্টি করে বললেন, তুমি ফেরেশতাদের মজলিশে গিয়ে সালাম দাও। তারা তোমাকে কী শব্দে সম্ভাষণ করে তা মনোযোগ দিয়ে শোনো। কেননা তা তোমার এবং তোমার বংশধরদের সম্ভাষণ হবে। তখন আদম (আ.) ফেরেশতাদের কাছে গিয়ে বলেন, আসসালামু আলাইকুম। ফেরেশতারা উত্তরে বলেন, আসসালামু আলাইকা ওয়া রাহমাতুল্লাহ।’ (বোখারি)।
রাসুল (সা.) শিশুর পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় তাদেরও সালাম দিতেন। সাহাবায়ে কেরাম প্রতিযোগিতা করতেন রাসুলকে আগে সালাম দেয়ার জন্য; কিন্তু তারা পেরে উঠতেন না।
আজ থেকে আমরা পণ করতে পারি, ঘরে প্রবেশের সময় সালাম দেব। কর্মক্ষেত্রে গিয়ে সহকর্মীদের সালাম দেব। রিকশায় উঠে সালাম দেব। যানবাহনের ভাড়া চুকিয়ে দিয়ে সালাম দেব। মোবাইল ধরে সালাম দেব এবং রাখার আগে সালাম দেব।