কুড়িগ্রামে ব্রহ্মপুত্র নদের কূলঘেঁষা আরেক নদী দুধকুমোর শুকনো মৌসুমেও পাড় ভেঙে চলেছে। এতে জনজীবনে দেখা দিয়েছে ভোগান্তি। বসতভিটা ও আবাদি জমি ভেঙে নদীতে হারিয়ে যাওয়ায় অনেকেই পড়েছেন বিপাকে। জানা যায়, জেলার নাগেশ্বরী উপজেলার কালীগঞ্জ ইউনিয়নের দুধকুমোর নদীর ভাঙনে এখন বিলীন হচ্ছে ঘরবাড়ি ও আবাদি জমি। ভাঙনকবলিত এলাকার মানুষ বসতভিটা হারিয়ে খোলা আকাশের নিচে ও পাশের বাঁধে আশ্রয় নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করলেও ভাঙনরোধে কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না কেউ। এতে জনগণ ফুঁসে উঠছেন প্রচ- ক্ষোভে। এলাকাবাসী জানান, কয়েক বছর ধরে কালীগঞ্জ ইউনিয়নের কালীগঞ্জ, কাচিরভিটা, কুমরিয়ার পাড়, বলদের ভিটা, উত্তর ওয়াপদা, শালমারা ও ধনীর ভিটাসহ পার্শ্ববর্তী প্রায় ১০ গ্রামে দুধকুমোর নদীর ভয়াবহ ভাঙন চলছে। এতে করে মসজিদ, মাদরাসা, স্কুলসহ বিভিন্ন স্থাপনা ও কয়েক হাজার বিঘা আবাদি জমি এরই মধ্যে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এক বছরে সহস্রাধিক মানুষ ঘরবাড়ি হারিয়েছেন। ভাঙনের কবলে পড়েছে কালীগঞ্জ বাজার, কালীগঞ্জ হাইস্কুল, শালমারা দাখিল মাদরাসা, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ বিভিন্ন স্থাপনা। এলাকাবাসী উপজেলা প্রশাসন, জেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ডে বহুবার যোগযোগ করেও কোনো প্রতিকার পাননি। কালীগঞ্জ ইউনিয়নের ধনীর ভিটা গ্রামের মমিন উদ্দিন বলেন, আমার বাড়ি তিনবার ভেঙেছে। বর্তমানে যে জায়গায় বাড়ি করেছি, সেখানেও ভাঙন ধরেছে। মনে হয় এ জায়গায়ও থাকতে পারব না। তাই নদীভাঙনের হাত থেকে আমাদের রক্ষার জন্য সরকারের কাছে আবেদন জানাচ্ছি। কুমরিয়ার পাড়ের কৃষ্ণ চন্দ্র জানান, তার বাবার অনেক জমাজমি ছিল। সব নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। তার ছেলেরা এখন দিনমজুরি করেও ভাত পান না। কালীগঞ্জ ইউনিয়নের উত্তর ওয়াপদার বৃদ্ধা জরিনা বলেন, ‘হামার থাকার জায়গা নাই। বাঁধত থাকি। হাসিনা মায়ের কাছে আবেদন যেন হামার নদীটা বান্দি দেয়।’ কাচির ভিটা এলাকার কুলসুম বলেন, ‘নদী হামার সব শ্যাষ করে দিছে। বাড়িঘর, জমিজমা সব কিছু শ্যাষ। থাকপার জায়গা নাই। মাইনষের জায়গায় কোনো রকমে ধাপড়ি তুলি আছি। সরকারের নিকট হামরা আর কিছু চাই না। সরকার যেন হামার নদীটা ঠিক করি দেয়।’ কালীগঞ্জ ইউপি চেয়ারম্যান নূর ইসলাম মিয়া জানান, দুধকুমোরের ভাঙনরোধে সরকারের বিভিন্ন মহলে অনেকবার জানিয়েও কোনো ফল পাননি। শুধু আশ্বাস পাওয়া যায়। কিন্তু কোনো কাজ হচ্ছে না। প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী কালীগঞ্জ ইউনিয়নে দুধকুমোর নদীর উপর একটি ব্রিজ নির্মাণ করে মাদারগঞ্জ, কচাকাটা, নারায়ণপুরসহ প্রায় ৫০ গ্রামের ২ লক্ষাধিক মানুষের চলাচলের পথটি সহজ করে দেয়ার কথা থাকলেও তা হচ্ছে না। কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মতিয়ার রহমান বলেন, কুড়িগ্রাম জেলার ভেতরে হলেও নদীটি লালমনিরহাট জেলার পাউবোর অধীন। আমরা পাউবোর পক্ষ থেকে কালীগঞ্জ ইউনিয়নের ভাঙনকবলিত এলাকা পরিদর্শন করে ২ কোটি ৭১ লাখ টাকার একটি হিসাব সংশ্লিষ্ট বিভাগে পাঠিয়েছি। এর মধ্যে ১ কোটি টাকার অনুমোদন পেয়েছি। তবে বরাদ্দ এখনও পাইনি। বরাদ্দ পেলে নদীভাঙন রোধে কার্যকরী ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে তিনি আশ্বাস দেন।