সংবাদটি পত্রিকার শেষ পৃষ্ঠায় ছোট করেই প্রকাশ হয়েছে। শিরোনাম মেয়ে জন্ম দেয়ায় তালাক : মায়ের আত্মহত্যা। অবশ্য বক্স আইটেম করার মাধ্যমে সংবাদটির গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। আলোকিত বাংলাদেশে প্রকাশিত ওই সংবাদে বলা হয়, নরসিংদীর শিবপুরে কন্যাসন্তান জন্ম দেয়ায় তিশা শিকদার নামে এক গৃহবধূকে তালাক দিয়েছেন স্বামী। অপমান সইতে না পেরে গৃহবধূ তিশা গলায় রশি দিয়ে আত্মহত্যা করেন। সংবাদটি নিঃসন্দেহে অত্যন্ত হৃদয়বিদারক ও শঙ্কাজনক। বাস্তবতা হলো, এহেন ঘটনা কিংবা এ ধারার ঘটনা সমাজে অভিনব কিছু নয়। মেয়েদের প্রতি সমাজের ইতিবাচক পরিবর্তন লক্ষ করা গেলেও এখনও যে কুসংস্কার, অপসংস্কৃতি ও পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতার অবশেষ রয়ে গেছে গৃহবধূ তিশার আত্মহত্যা আমাদের পুনরায় তা স্মরণ করিয়ে দেয়। আমরা অবহিত হলাম, বর্তমানে শিক্ষায় মেয়েরা এগিয়ে গেলেও শুধু কর্মক্ষেত্রে নয়, সামাজিক পরিসরেও তাদের মর্যাদা পুরোপুরি প্রতিষ্ঠিত হয়নি।
মেয়েদের ব্যক্তিত্ব ও মর্যাদা সুরক্ষায় আমাদের দেশে অত্যন্ত কার্যকর ও আধুনিক আইনকানুন রয়েছে। কিন্তু বাস্তবে তার কতটুকু প্রয়োগ হয়, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়ে গেছে। ফলে নারী নির্যাতন ও নিগ্রহের পরিমাণ বেড়েই চলেছে। সমান্তরালে চলছে শিশুহত্যা ও নির্যাতন। দুঃখজনক হলেও সত্য, সমাজে সচেতনতা বাড়লেও দুর্বৃত্তদের রাহুগ্রাস থেকে মুক্তি ঘটছে না। অধিকন্তু শুভবোধ সম্পন্ন কেউ প্রতিরোধে এগিয়ে এলে তাকেও ক্ষেত্রবিশেষ আক্রান্ত হতে হচ্ছে। সম্প্রতি বোনকে নির্যাতনের প্রতিবাদ করায় সিলেটে ভগ্নিপতির ছুরিকাঘাতে খুন হন আনোয়ার হোসেন নামে এক কলেজছাত্র। এভাবে নারী নির্যাতন এখন নৈমিত্তিক ব্যাপারে পরিণত হয়েছে।
আমাদের সমাজে শিশু ও নারী নির্যাতন গভীর ক্ষত সৃষ্টি করে চলছে। এ ক্ষত অক্ষুণ্ন রেখে অগ্রগতি প্রত্যাশা বাতুলতা মাত্র। আলঙ্কারিক উন্নয়নের আড়ালে সমাজে যে অস্থিরতা বিরাজ করছে তার কারণ অনুসন্ধান জরুরি। বলা যায়, সমাজে বিপুলভাবে সংক্রমিত দুর্বৃত্তায়নের বড় শিকারে পরিণত হচ্ছে নারী। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ আবশ্যক। একদিকে যেমন আইনের যথাযথ প্রয়োগ জরুরি, তেমনি নারীর প্রতি সহনশীল সামাজিক সচেতনতা আবশ্যক। দায়ীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হোক।