আজকের পত্রিকাআপনি দেখছেন ১২-০৩-২০১৬ তারিখে পত্রিকা

আপনাদের ভাবনা

ধেয়ে আসছে আঁধার

হহিমেল আবেদিন
| সম্পাদকীয়

উত্তরার ১৩ নম্বর সেক্টরের একটি বাসা। সকাল ৭টা। সবাই খেয়ে যার যার কাজে বেরিয়ে যাবে। গ্যাস কম। চায়ের পানি দেয়া হয়েছে। ঘরে মিথেনের গন্ধ। কর্তা বললেন, ফ্যানটা ছেড়ে দিতে। ছাড়তেই দাউ দাউ আগুন। শরীরে আগুন নিয়ে মা ও শিশু নামছে সিঁড়ি বেয়ে। বাঁচাও বাঁচাও শুনে প্রতিবেশীরা আতঙ্কিত। দরজা খুলে দেখলেন মা ও শিশু আগুনে পুড়ছে। প্রতিবেশীর চোখে বিরক্তি। এ আবার কী উটকো ঝামেলা। দাও দরজা বন্ধ করে 
এটি একটি দৃশ্যকল্প। চলুন দুইটি দৃশ্যকল্পের সঙ্গে পরিচিত হওয়া যাক।
মানুষ পুড়ছে পুড়ুক চিনি না তো উপরে থাকে বোধহয়। দেখতে পারলে ভালো হতো। কিন্তু সময় কই। অফিসে যেতে হবে। লেট হলে না-জানি বেতন কাটা যায়। গিন্নি বোধহয় চিন্তা করছিলেন, একটু পানি মারতে পারলে ভালো হতো। নাহ ফিল্টারের পানি তো খেতে হবে। আর ওয়াশরুম থেকে তো আনা যায়। কী দরকার; বেজায় মেহনত থাক। দরজা বন্ধ আবার।
আরে গায়ে আগুন নিয়ে ঘরে ঢুকে যাবে যে? সোফায় বসে পড়লে সোফাটা যাবে। এক কাজ করা যেত। তোশক দিয়ে পেঁচিয়ে ধরতে পারল না কেউ? সব অকাজের। অবশ্য তোশকেরও যা দাম। তাই দেবে নাকি লোকে ততক্ষণে রাস্তায় অনেক লোক। বাহ্ মানুষ পুড়ছে পুড়ে মানুষ মরতে আগে দেখিনি। একটু দেখা যাক ১০ থেকে ২০ জন কিছুক্ষণ দেখল। এরপর সবাই কাজে গেল। পেট চালাতে হবে না?
সপ্তাহখানেক আগে উত্তরায় ঘটা ঘটনা। পত্রিকায় সম্পাদকীয় এসেছে, মানুষ কেন এত স্বার্থপর হয়? জ্যেষ্ঠরা বলেন, জনসংখ্যা বেড়েছে; কিন্তু মানুষ বাড়েনি। অনেক লোকের মাঝে আপনি একা। কেউ আপনার নয়, আপনি কারও নন। সেদিন দূরে নয়, যেদিন আপনার গায়ে আগুন লাগবে। চামড়ার পোড়া গন্ধে লোকে নাক চাপবে। কেউ কাছে আসবে না। তামাশা দেখার লোকের অভাবও হবে না। গতকাল আপনি ছিলেন দর্শক আজ শিকার 
কারণ কী? সমাজবিজ্ঞানী হওয়ার দরকার নেই। এত স্বার্থপর আর লোভী হওয়া শুরু হলো কবে থেকে? কেন? ডাক্তার হয়ে, উকিল হয়ে, পুলিশ হয়ে, কিছু শিক্ষক হয়ে, রাজনীতিক হয়ে পরের টাকা লুটছে না কিছু লোকে? যে দর্শক, তার মধ্যে জাগছে না লোভ আর নিজের আখের গুছিয়ে নেয়ার চিন্তা? এক অন্যায় শত শত অন্যায়ের জন্ম দেয়। আমার হবে তো? আমি পাব তো? এ চিন্তা তাকে এত ব্যস্ত রাখে যে, পুড়ে যাওয়া মানুষ তার সামনে কোনো বিষয় নয়। অন্যরা করে না কেন? এ চিন্তা তাকে আচ্ছন্ন রাখে। কারও কষ্ট তার মধ্যে কোনো অনুভূতি তৈরি করে না। মানুষ আজ চারদিকে দেখছে শক্তির মদমত্ততা, শোষণ, অনাচার যা তাকে স্বার্থপর, হীন আর কূটবুদ্ধিসম্পন্ন করে তুলেছে। তার হিংসা আর হিংস্রতা বাড়িয়ে দিয়েছে বহুগুণ। তার ভালো আচরণ নির্ভর করে চারপাশটা ভালো হওয়ার ওপর। ন্যায়বিচার আর শুভবোধ প্রতিষ্ঠার কোনো বিকল্প নেই আজ। 
এ অনুভূতিহীনতার আগুন আমাকে-আপনাকে পাবে একদিন। ভিড়ের মধ্যেও আমরা হয়ে যাব একা। পুড়ে যেতে যেতে দেখব মানুষের কাছে এটা বেশ উপভোগ্য দৃশ্য হয়েছে। 

শিক্ষক, শান্ত-মারিয়াম বিশ্ববিদ্যালয়