আজকের পত্রিকাআপনি দেখছেন ১২-০৩-২০১৬ তারিখে পত্রিকা

নারী নির্যাতনের শেষ কোথায়?

সুমিত বণিক
| সম্পাদকীয়

যে কোনো নারীরই নারী জীবনের পূর্ণতার স্বাদ খুঁজে পায় মা হওয়ার মাধ্যমে। পেশাগত কারণে অসংখ্য মাকে জঠর যন্ত্রণায় কাতরাতে দেখেছি, দেখেছি অজ্ঞানতার মাঝেও মা হওয়া, দেখেছি প্রকৃতির বৈরী আবহাওয়া ও প্রতিকূলতাকে মাথায় রেখে মা হওয়ার যন্ত্রণা ও নিদারুণ কষ্ট। চোখের সামনে ভূমিষ্ঠ শিশুর মৃত্যু। কিন্তু ২০১৫ সালের ২৮ অক্টোবর রাতে ফেনী সদর উপজেলার পাঁচগাছিয়া ইউনিয়নের মাথিয়ারা জেলেপাড়ার হিন্দুবাড়িতে আতশবাজি ফোটানোকে কেন্দ্র করে প্রসূতি তুলসী রানী দাসের (১৮) ওপর অমানবিক আচরণ কোন দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করব ভেবে পাচ্ছি না
ওই নির্মম হামলায় প্রসূতি তুলসী রানীর মৃত সন্তান প্রসব হয়েছিল। হাসপাতাল সূত্র অনুযায়ী, ৭ মাসের প্রসূতি তুলসীর জীবন এমনিতেই সঙ্কটাপন্ন ছিল এবং ওই ঘটনায় চিরদিনের মতো মাতৃত্বের ক্ষমতা হারান তিনি। আর এ নির্মম মৃত্যুর জন্য কাকে দায়ী করব? কী দোষ ছিল অনাগত অপরিণত শিশুটির? কী দোষ ছিল তুলসী রানীর? একটি নববিবাহিত মায়ের মাতৃত্বের অপূর্ণতার কষ্ট কী দিয়ে পূরণ হবে?
একাত্তর-পরবর্তী প্রজন্ম হিসেবে শুনেছি স্বাধীনতা যুদ্ধে পাকিস্তানি বাহিনীর নৃশংস হত্যাকান্ড ও বিভীষিকাময় নির্যাতনের কথা। শুনেছি মায়ের সামনে সন্তানের মৃত্যুর কথা। বাবার সামনে মেয়ের সম্ভ্রম হারানোর বেদনাদায়ক কষ্টগাথা। গলিত লাশের গন্ধ আর খ-িত লাশের বিকৃত অংশগুলোর কথা। যেটা ছিল বাঙালি ও বাংলাদেশের জন্য একটা কালো অধ্যায়। কিন্তু সে অশুভ শক্তিকে তো বাংলার মুক্তিকামী মানুষ ঐক্যবদ্ধ হয়ে তাড়িয়েছিল। এখন ৪৪ বছর অতিক্রান্ত হওয়ার পর বাংলাদেশে এমন ঘটনা প্রত্যাশা করিনি তাহলে কি বলব এ অশুভ শক্তি বিতাড়িত হয়নি?
আবার সবাই ঐক্যবদ্ধ হলে তুলসী রানীর মতো নারীদের জীবন কিছুটা হলেও বিপন্নতার হাত থেকে রক্ষা পাবে। পাশাপাশি এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটবে না। 
আশায় বুক বেঁধে আছি, নারীর প্রতি অমানবিক প্রবৃত্তি ও নির্মমতার অবসান হবে, তুলসী রানীর মতো আর কেউ মাতৃত্বের অপূর্ণতা বুকে নিয়ে নিদারুণ কষ্টে দিন কাটাবে না। 

 

উন্নয়নকর্মী 

[email protected]