সন্তান মা-বাবার অমূল্য সম্পদ। অনেক ক্ষেত্রে এ সন্তানই স¦ামী এবং স্ত্রীর বন্দনকে ভাঙন থেকে রক্ষা করে। সব দম্পতিই চায় একটা সুস্থ, সবল এবং ফুটফুটে সন্তান। আমাদের কিছু কিছু গাফিলতি এবং অজ্ঞতার ফলে এ মধুর আকাক্সক্ষা অনেকাংশে ব্যর্থ হয়। মা-বাবার সচেতনতার অভাবে অনেক ক্ষেত্রে সন্তান বিকলাঙ্গ অথবা অসুস্থ হয়ে জন্মগ্রহণ করে অথবা জন্মের পর পরই মারাত্মকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ে, যা পরবর্তীকালে সংসারে একটা অশুভ সঙ্কেত হয়ে দাঁড়ায়। কেবল মা এবং বাবার সচেতনতার ফলে এ অশুভ সঙ্কেত হতে বহুলাংশে রক্ষা পাওয়া যাবে। বর্তমানে বিশ্বে ক্যান্সার, হার্ট অ্যাটাক, এইডস, সন্তানহীনতা সমানভাবে বেড়েই চলছে। এ থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য বিশ্বের বিভিন্ন স্বাস্থ্য সংস্থা যেমন ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব ফারটিলিটি সোসাইটি (ওঋঋঝ) দিন-রাত অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছে। জাপানের চিবা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক আয়োজিত তৃতীয় এশিয়া ও ওশেনিক সোসাইটি অব এন্ড্রোলজির ওপর এক আন্তর্জাতিক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। এ সেমিনারে বিভিন্ন চিকিৎসা সংক্রান্ত ও বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ থেকে পরিষ্কারভাবে একটা তথ্য বের হয়ে এসেছে যে, অন্যান্য ক্যান্সারের চেয়ে অন্ডকোষের ক্যান্সার বর্তমানে অধিক হারে বেড়ে চলছে। ক্যান্সার আক্রান্ত বাবার শুক্রকীটের মাধ্যমে যদি সন্তান জন্মলাভ করে তবে
১। এ শিশুর পরবর্তীকালে অন্ডকোষ ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে।
২। অন্ডকোষ ক্যান্সার দ্বারা আক্রান্ত স্বামী কখনোই চিকিৎসার মাধ্যমে সুস্থ হওয়ার আগে সন্তান জন্ম দেয়া উচিত নয়।
৩। অন্ডকোষ ক্যান্সার আক্রান্ত স্বামীর চিকিৎসার সময়ও সন্তান জন্ম দেয়া উচিত নয়।
পরামর্শ
জনগণের মধ্যে অবশ্যই সচেতনতা আনতে হবে এবং বৃদ্ধি করতে হবে। সাবালক হতেই নিয়মিতভাবে পুরুষকে অন্ডকোষের ব্যাপারে সজাগ থাকতে হবে। লক্ষ্য করতে হবে যে, কোনো একটি অন্ডকোষ অথবা উভয়টিই বড় হয়ে যাচ্ছে কিনা অথবা দ্রুত ওজন বাড়ছে কিনা অথবা শক্ত হয়ে যাছে কিনা। তবে অন্ডকোষের ওজন বেড়ে গেলে অথবা বড় হয়ে গেলেই যে ক্যান্সার হবে সবক্ষেত্রে তা নয়। অনেক কারণেই অন্ডকোষ বড় হয়ে যেতে পারে অথবা ওজন বেড়ে যেতে পারে।
যেমন
১। একশিরা (ঐুফৎড়পবষব)
২। হার্নিয়া (ঐবধৎহরধ)
৩। অন্ডকোষ প্রদাহ (ঙৎপযরঃরং)
যদি দেখা যায়, অন্ডকোষটি অতি দ্রুত বড় হয়ে যাচ্ছে অথবা ওজনে বেশি ভারি মনে হচ্ছে অথবা ভারি হয়ে যাচ্ছে, তবে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। এছাড়াও কোনো ধরনের সন্দেহ হলে সঙ্গে সঙ্গেই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। যদি দেখা যায় যে, কোনো স্বামীর সন্তান জন্ম দেয়ার আগেই ক্যান্সার হলো অথবা সন্দেহজনক মনে হলো তখন এ অবস্থায় অবশ্যই সন্তান জন্মদান থেকে বিরত থাকতে হবে। বিভিন্ন ধরনের পরিবার পরিকল্পনার পদ্ধতি গ্রহণ করে সন্তান জন্মদান থেকে বিরত থাকা যাবে। কথা হলো, কত দিন পর্যন্ত সন্তান জন্মদান থেকে বিরত থাকতে হবে
(ক) ক্যান্সারটি প্রাথমিক অবস্থায় ধরা পড়লে সঙ্গে সঙ্গে স্বামীর বীর্য গ্রহণ করে শুক্রকীট ব্যাংকে রেখে দিতে হবে। কারণ একবার চিকিৎসা আরম্ভ হয়ে গেলে কোর্স সম্পন্ন করার অনেক দিন পরও স্বামী এবং স্ত্রীর মিলনের মাধ্যমে সন্তান জন্ম দেয়া উচিত নয়। এক্ষেত্রে প্রশ্ন হলো, চিকিৎসার ধরন কী হবে? যেহেতু আমাদের দেশে স্বাস্থ্য ব্যাপারে জনগণ সচেতন নয়, তাই চিকিৎসার জন্য যা করতে হবে
১. অন্ডকোষগুলো ফেলে দিতে হবে।
অথবা
২. পূর্ণ চিকিৎসার জন্য যে ধরনের ওষুধ ব্যবহার করা হয়, তাতে অন্ডকোষ সুস্থ শুক্রকীট তৈরি করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে।
এ ধরনের পরিস্থিতি হলে
কেবল ব্যাংকে গচ্ছিত শুক্রকীট ছাড়াই যেন দম্পতি সন্তান পেতে পারে তার ব্যবস্থা করতে হবে।
চিকিৎসাকালীন দম্পতিরা ইচ্ছা করলে গচ্ছিত শুক্রকীট দ্বারা তাদের সন্তান পেতে পারেন।
স্বামী মারা গেলে ব্যাংকে শুক্রকীট দ্বারা সন্তান পেতে পারে।
অন্ডকোষের ক্যান্সারটি সাধারণত মারাত্মক আকারের হয়ে থাকে। তাই অপারেশন ছাড়া চিকিৎসার মাধ্যমে অথবা ওষুধের মাধ্যমে চিকিৎসা হলেও সুস্থ শুক্রকীট তৈরি করার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।
শুক্রকীট ব্যাংক
আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের বদৌলতে শুক্রকীটগুলোকে Sperm Ban এর ভেতর ১০ থেকে ১৫ বছর পর্যন্ত রাখা যায়। এর ভেতর তরল নাইট্রোজেন দ্বারা ধীরে ধীরে তাপমাত্রা ১৯০ Sperm Bank-এ নিচে নিয়ে আসা হয়। এ তাপমাত্রায় শুক্রকীটগুলোর কোনো ক্ষতি হয় না। যখন শুক্রকীটগুলোকে ব্যবহার করা হবে তখন তাপমাত্রাকে ধীরে ধীরে স্বাভাবিক অবস্থায় নিয়ে আসা হয় এবং বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সন্তান জন্ম দেয়ার জন্য ব্যবহার করা হয়। এ Sperm Bank যে শুধু শুক্রকীট রাখা যায় তাই নয়, স্ত্রী ডিম্বাণু, ভ্রুণ এমনকি রক্তকণিকা, কোষ, টিস্যু ইত্যাদি রেখেও বিভিন্ন রোগ নির্ণয়ের গবেষণা চালানো যায়।
নিঃসন্তান দম্পতিদের চিকিৎসা বিশেষজ্ঞ
নূরজাহান রোড
মোহাম্মদপুর, ঢাকা
০১৭১৪৩০১৯২৫