চট্টগ্রামে গতকাল বিকাল থেকে ফুটবল সংগঠকদের রীতিমতো মিলনমেলা চলছে। অভ্যন্তরীণ বিমানের তিন ফ্লাইটে গেছেন ১০০-এরও বেশি প্রতিনিধি, আজ সকালে যাবেন বাকিরা। স্থানীয় ওয়ার্ল্ডট্রেড সেন্টারে আজ হবে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) জরুরি সাধারণ সভা (ইজিএম)। গত ৪ বছরে প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তিতে যত ক্ষোভ জমুক তৃণমূলের প্রতিনিধিরা দিন শেষে ফিরতি বিমানে চড়বেন হাসিমুখে কেন? ৩০ এপ্রিল বাফুফের নির্বাচন। তার আগে জমকালো আয়োজন তো প্রতিনিধিদের মনতুষ্ট করতে। বিমানভ্রমণের সঙ্গে থাকবে নির্বাচনী উপঢৌকনও।
এএফসি অনুমোদিত বাফুফের গঠনতন্ত্রে প্রতি বছর বার্ষিক সাধারণ সভা হওয়ার কথা থাকলেও হয় শুধু নির্বাচনের আগে; প্রসঙ্গে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন জানান, ‘বিভিন্ন কারণে করা যায় না। তারপরও তৃণমূলের সংগঠকদের সঙ্গে এমনিতে বিভিন্ন কার্যক্রমে আলোচনা হয়।’
কী হবে জরুরি সাধারণ সভায়? জানা গেছে, ২০১২, ২০১৩ ও ২০১৪ সালের আয়-ব্যয় হিসাব অনুমোদন হবে। ৩ বছরে বাফুফের আয় ছিল ৫২ কোটি ৫৪ লাখ ৭২ হাজার ৩৫৭ টাকা, ব্যয় হয়েছে ৫০ কোটি ৩৪ লাখ ৩২ হাজার ৯৫ টাকা। উদ্বৃত ২ কোটি ২০ লাখ ৪০ হাজার ২৬২ টাকা ২০১৫ সালে জাতীয় দলের কার্যক্রম বেশি থাকায় ব্যয়ও বড়। হিসাব জানানো হবে ৩০ এপ্রিল কংগ্রেসে। ৩ বছরের অডিট রিপোর্ট কাউন্সিলরদের পাঠানো হয়েছিল, ৬ মার্চের মধ্যে লিখিত আপত্তি ও প্রস্তাবনা এসেছে। যারা আপত্তি-প্রস্তাব দিয়েছেন, আজ তারা আলোচনা করতে পারবেন বলে জানান বাফুফে জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি আবদুস সালাম মুর্শেদী।
সাড়ে ৫২ কোটির মধ্যে একাডেমির পেছনে বাফুফের খরচ হওয়ার কথা ছিল অন্তত ৭ থেকে ৮ কোটি টাকা। কোটি টাকাও খরচ হয়নি। বরং অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে প্রায় ১ কোটি টাকা দিলেও তা নিজেদের খাতে দেখাচ্ছে বাফুফে। একাডেমি পরিচালনায় ফিফা সাড়ে ৭ লাখ ডলার দিলেও সে টাকার শতভাগ খরচ হয়নি এ খাতে ৩ বছরে প্রতিভা অন্বেষণে ব্যয় হয়েছে প্রায় ৬০ লাখ টাকা। গত ৪ বছরে কি অনিয়ম হয়নি?
ফিফা (সাড়ে ৪ কোটি) ও এএফসির (দেড় কোটি) অনুদান, টিকিট বিক্রি, পৃষ্ঠপোষকতা মিলিয়ে ৩ বছর বাফুফে পেয়েছে সাড়ে ১৬ কোটি টাকা। অডিট রিপোর্টে আয় দেখানো হয়েছে ২৩ কোটি টাকা। অথচ গত বছর লিগ হয়েছে ১৫টি জেলায়। আজ সেসব ডিএফএকে ১ লাখ করে টাকা দেয়া হবে।
ইজিএমের আগে বেশ গরম ফুটবলাঙ্গন, চনমনে ভাব ফুটবল সংগঠকদের শরীর-মনে ফুটবলের উন্নয়নে নয়, ফেডারেশনে চেয়ার দখলের যারা আছেন, ধরে রাখার তাড়নায়। গত ৪ বছরে ফুটবলের আশপাশে দেখা যায়নি যাদের, তাদের দিন এখন কাটছে বাফুফের বিভিন্ন কর্মকর্তার কক্ষে। ‘সুবিধাবাদী’ সংগঠকরা তৎপর ছিলেন সাধারণ সভার প্রতিনিধি হতে; হয়েছেনও।
১৪৩ কাউন্সিলর হওয়ার কথা থাকলেও, গতকাল পর্যন্ত প্রতিনিধি এসেছেন ১৩২ জন। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের প্রতিনিধি হয়েছেন ক্রীড়াবিষয়ক পরিচালক দিল মোহাম্মদ ও খুলনার মর্তুজা রশিদ দারা। প্রতিনিধি পাঠায়নি প্রিমিয়ার লিগ ক্লাব শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব, মোহামেডান, আরামবাগ ক্রীড়া সংঘ, চ্যাম্পিয়নশিপ লিগের টিঅ্যান্ডটি ক্লাব, মহানগরী লিগের ঢাকা ওয়ান্ডারার্স, দিলকুশা স্পোর্টিং ক্লাব, প্রান্তিক ক্রীড়া চক্র, লালমনিরহাট ডিএফএ, সার্ভিসেস সংস্থা সেনাবাহিনী ও বিমানবাহিনী, ঢাকা শিক্ষা বোর্ড। বরং ২০টি ক্লাব জোট বেঁধে আজ বাফুফের অনিয়ম আনুষ্ঠানিকভাবে তুলে ধরবে গণমাধ্যমের সামনে।