খ্রিস্টপূর্ব ৪ হাজার ৩০০ বছর আগে কাংড়ায় ত্রিগারথ রাজত্ব প্রতিষ্ঠা করেছিলেন রাজানাকা ভূমি চন্দ্র। এ রাজার বংশধর একবিংশ শতকে এসে খোঁজ করা মহাসমুদ্রের অতলান্তে ঝিনুক খুঁজে মুক্তা আহরণের মতোই। তা তিনি ভারতের সম্রাট হলেও কথা ছিল। রাজানাকা ভূমি চন্দ্র ছিলেন হিমালয়ের ধলাদার রেঞ্জের কাংড়ার এক রাজা। ইতিহাসের কী দায় পড়েছে আড়াই হাজার বছর আগের এ রাজাকে মনে রাখবে। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, ইতিহাস শুধু তাকে মনেই রাখেনি, তার বংশধরদেরও খোঁজ রেখেছে। মহাভারত এবং আলেকজান্ডার দ্য গ্রেটের ইতিহাসে অমরত্ব নিয়ে আছেন রাজা ভূমি চন্দ্র। কালের বিবর্তনের সব প্রতিকূলতা জয় করে প্রজন্মের পর প্রজন্ম বহন করে চলেছে ভূমির রক্ত। গতকাল কাংড়া ফোর্ট আর্ট গ্যালারির কর্মকর্তা বি এস জাওয়াল জানান, ধর্মশালা এবং দিল্লিতে রাজা ভূমির বংশধর রয়েছেন। কাংড়া ফোর্টে প্রতি বছর যারা একবার মিলিতি হন।
ধলাদার উপত্যকায় রাজা ভূমির দুর্গ আজও অনিন্দ। যে ফোর্ট খ্রিস্টপূর্ব ১৫০০ সালে গড়ে তুলেছিলেন রাজা সুষর্মা চন্দ্র। শুধু ভারতের নয়, দূর দেশ থেকেও মানুষ দেখতে আসেন কাংড়া ফোর্ট। গতকাল ইউরোপের একদল পর্যটক এসেছিলেন। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ কাভার করতে আসা সাংবাদিক এবং দর্শক, বিসিবি কর্মকর্তারাও গিয়েছিলেন কাংড়া ফোর্ট দেখতে। যে ফোর্ট নিয়ে রাজায় রাজায় যুদ্ধ হয়েছে। হাত বদল হয়েছে একাধিকবার। মোগল সম্রাট জাহাঙ্গীর সেনা পাঠিয়ে এ ফোর্টের দখল নিয়েছিলেন। ব্রিটিশরাও এর দখল নেন। পালাবদল হয়ে এখন তা ভারতের সম্পদ। ধারণা করা হয়, কাংড়া ফোর্ট ভারতের সবচেয়ে প্রচীন।
১৯০৫ সালের মহাভূমিকম্পে ধর্মশালা, ম্যাকলয়েডগঞ্জের সঙ্গে কাংড়া ফোর্টেরও ব্যাপক ক্ষতি হয়; ফোর্টের ওপরে সে ধ্বংসাবশেষ পড়ে আছে। প্রচন্ড ঝাঁকুনিতে ভূগর্ভের দিকে দেবে গেছে পুরো ফোর্টের অনেকটাই। এখনও ৩০০ ফুট উঁচু পাথুড়ে দেয়াল হিংহের মতো সাহসী বুক চিতিয়ে প্রকৃতির সব বিপদ-আপদ থেকে সুরক্ষা দিচ্ছে ভেতরটাকে। যেখানে পর্যটকরা প্রবেশ করে মুগ্ধ হন। স্মৃতির স্মারক করে রাখতে ছবি তোলেন। প্রাচীন এ ফোর্ট সংরক্ষণ করছে ভারতীয় সরকার। নকশা অপরিবর্তিত রেখে সংস্কার করা হচ্ছে। গতকালও ফোর্টের ওপরে একদল শ্রমিককে কাজ করতে দেখা গেল। ওই শ্রমিক দলের সরদার শক্তি চাঁদও ইতিহাসের জীবন্ত সংরক্ষক। রাজা ভূমি চন্দ্রের রাজত্ব, পালাবদল, বংশধর কোনো কিছুই তার অজানা নয়। ফোর্টের পাশেই আর্ট গ্যালারি। যেখানে সংরক্ষণ করা হয়েছে রাজা ভূমি এবং তার বংশধরদের বহু মূল্যবান সামগ্রী। ধনরত, পুস্তক, পোশাক-পরিচ্ছদ। এ সংরক্ষণশালায় হাজার বছরের প্রচীন তলোয়ার, যুদ্ধবর্ম, সংসারের ব্যবহার্য তৈজসপত্র। চীনা মাটির পানপাত্র। রুপার থালাবাসন। রুপার সিংহাসন, পালঙ্ক এবং আরও কত মহামূল্যবান জিনিস।
কাংড়া ফোর্টের সৌন্দর্য বেশি ফুটেছে পাহাড়ের জন্যই। চারদিকে সমান করে কাটা উঁচু পাহাড়। ফোর্টের দুই পাশ দিয়ে বয়ে গেছে পাহাড়ি নদী। তাতে জলের প্রবাহ বেশি না হলেও চোখ জুড়িয়ে যাবে। ফোর্টের পূর্ব এবং পশ্চিমে আরও উঁচু দুই পাহাড়ে দুইটি মন্দিরও রয়েছে। রাজা ভূমির সময়েই ওই মন্দির বানানো। খ্রিস্টপূর্ব ৪০০ হাজার বছর আগে পাহাড় থেকে পাহাড়ে যেতে সড়ক যোগাযোগও গড়ে তোলা হয়েছিল। এখন যেখানে আধুনিকতার স্পর্শ লেগেছে। বসতি গড়ে উঠেছে ফোর্টের কাছাকাছি। কিন্তু তা কোনোভাবেই ফোর্টের সৌন্দর্যহানি করেনি।