আজ মহান মে দিবস। দিনটি আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস হিসেবেও পরিচিত। শ্রমজীবী মানুষের সংগ্রাম আর সংহতির দিন। শ্রমিকের অধিকার রক্ষার আন্দোলনে প্রেরণাদানকারী দিন। নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ১৮৮৬ সালের মে মাসে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরের শ্রমিকরা তাদের নির্দিষ্ট শ্রমঘণ্টা ও কর্মক্ষেত্রে নিরাপদ পরিবেশের দাবিতে বুকের রক্ত ঢেলে দিয়েছিলেন। ঐতিহাসিক ওই আন্দোলনের ১৩২ বছর পার হলো। প্রশ্ন জাগা স্বাভাবিক, যে দাবিতে সেদিন শ্রমিকরা বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়েছিলেন, সেই অধিকার কি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে? বলা যায়, শ্রমিকদের দাবির অনেক কিছুই পূরণ হয়েছে। শ্রমিকরা এখন আর সমাজের অবহেলিত কোনো শ্রেণি নন। শ্রমিকের চাহিদা নিয়ে সরকার ও মালিকের মধ্যে সচেতনতা বেড়েছে। তা সত্ত্বেও শ্রমিক অসন্তুষ্টি রয়েই গেছে, কারণ তাদের জীবনের টানাপড়েনের অবসান এখনও ঘটেনি। এ পরিপ্রেক্ষিতে মে দিবসের তাৎপর্য এখনও প্রাসঙ্গিকতা বহন করে চলেছে।
আমাদের দেশে প্রত্যেক বছর মহাসমারোহে মে দিবস উদযাপিত হয়। এদিন শ্রমিকের স্বার্থ নিয়ে সরকারি দল, বিরোধী দলসহ বিভিন্ন সংগঠন কথা বলে। শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরি, কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তার দাবি উচ্চারিত হয়। কিন্তু বাস্তবে শ্রমিকের অনেক দাবিই অপূরণীয় থেকে যায়। বিশেষ করে আমাদের দেশে শ্রমিকদের কর্মপরিবেশ ও মজুরি সন্তোষজনক নয়। এ দেশের সর্ববৃহৎ এবং বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের প্রধান খাত তৈরি পোশাক শিল্প। কিন্তু এ শিল্পের চালিকাশক্তি শ্রমিকদের মধ্যে অসন্তুষ্টি রয়েছে। পরপর বেশকিছু দুর্ঘটনায় বিপুল সংখ্যক শ্রমিক হতাহত হয়েছেন। পরবর্তী সময়ে সরকার, মালিক এবং বিদেশি ক্রেতাদের যৌথ তৎপরতায় কর্মপরিবেশ এবং অবকাঠামোগত উন্নয়ন হয়েছে। তবে পরিতাপের বিষয় হলো, শ্রমিকের ন্যায্য বেতন-ভাতা পাওয়ার বিষয়টি এখনও পুরোপুরি সুরাহা হয়নি। সম্প্রতি টিআইবির এক প্রতিবেদনে প্রকাশ, নতুন মজুরি কাঠামোতে পোশাক শ্রমিকদের বেতন বাড়ার কথা বলা হলেও প্রকৃত অর্থে তাদের বেতন বাড়েনি, বরং গড় আয় কমেছে ২৬ শতাংশ। এ ধরনের শুভঙ্করের ফাঁকি নিঃসন্দেহে বেদনাদায়ক।
বাংলাদেশে জিডিপিতে শিল্পের ভূমিকা বাড়ছে। এর সঙ্গে সংগতি রেখে শ্রমিকের মর্যাদা ও মজুরি বাড়া স্বাভাবিক ঘটনা। কিন্তু কেন তা আশানুরূপ হারে ঘটছে না, তা তলিয়ে দেখা জরুরি। আশার কথা, সরকার শ্রমিক অধিকার সংরক্ষণে অত্যন্ত আন্তরিক, মালিকরাও শ্রমিকের চাহিদার বিষয়ে সচেতন। তাই এটা প্রত্যাশা করা স্বাভাবিক যে, সবার উদ্যোগে শ্রমিকের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে। উন্নত কর্মপরিবেশের পাশাপাশি শ্রমিকের জীবনমানের উন্নতিও ঘটবে। আর মধ্যম আয়ের দেশ পেরিয়ে উন্নত দেশে উপনীত হওয়ার স্বপ্ন বাস্তবায়নে শ্রমিকের অধিকার অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে। হ