আজকের পত্রিকাআপনি দেখছেন ১-০৫-২০১৯ তারিখে পত্রিকা

ঝঞ্ঝাবায়ু : আমাদের করণীয়

শফীউল বাশার
| প্রকৃতি ও পরিবেশ

পৃথিবীতে যত বেশি পাপকর্ম সম্পাদিত হবে তত বেশি এ ধরায় আল্লাহর গজব ত্বরান্বিত হবে। কখনও আগুন দিয়ে, কখনও পানি-বাতাস ইত্যাদি দিয়ে আল্লাহ তার ইহলৌকিক শাস্তি প্রয়োগ করে থাকেন। তাই এসব বিপদাপদে আল্লাহকেই ডাকা, তাঁর কাছেই পানাহ চাওয়া হলো একজন জ্ঞানী ব্যক্তির পরিচয়। বর্তমান সময়ে প্রতিদিনই এই ঝঞ্ঝা নামক আল্লাহর গজব জমিনে আঘাত হানছে, যা আমাদের কৃতকর্মেরই ফল। তা থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে নিম্নে বর্ণিত আমলগুলো করতে হবে

বৈশাখ মাস মানেই বাংলার জমিনে এক আতঙ্ক। হঠাৎ হঠাৎ এখানে সেখানে আঘাত হানছে কালবৈশাখি। বাতাসের তা-বে জনমনে সর্বদা বিরাজ করছে এক আতঙ্ক। তছনছ করে দিচ্ছে প্রকৃতির সুন্দর রূপ।
এ অবস্থায় আমাদের কী করণীয়? বাতাস হলো আল্লাহ তায়ালার অগণিত মাখলুকাতের একটি, যা জমিনে তৈরি প্রকৃতির স্বভাবজাত একটি নিদর্শন। যার মধ্যে রয়েছে বহুবিধ উপকারিতা। পৃথিবীর সৃষ্টিলগ্ন থেকে অদ্যাবধি সে সব মাখলুকের সেবায় রয়েছে নিয়োজিত। মানব, দানবসহ সব মাখলুকের জন্য সহজ করে দেয় সে তাদের দৈনন্দিন জীবনযাপন। ২৪ ঘণ্টা আল্লাহর আদেশে সৃষ্টির সেবায় নিয়োজিত থেকে সচল রাখে এ ধরাধামের চাকা। সর্বদা উন্নতির চাকাকে ঠেলে দেয় অগ্রে। 
এক পশলা বৃষ্টি আর এক ঝাপটা বাতাসের অপেক্ষা কে না করে! জমিনের ফসল ছাড়া পৃথিবী যেখানে অচল, সে জমিনের কারিগর, কৃষকের মুখে সফলতার হাসির বার্তা বয়ে আনে এ বাতাস। কেননা, বৃষ্টির প্রারম্ভেই উষ্ণ, খরতাপ পৃথিবীকে শীতল, কোমল ও স্নিগ্ধ বাতাস মুহূর্তেই ঠান্ডা করে দিয়ে যায়। পরক্ষণেই আনন্দে উদ্বেলিত হয়ে ওঠে প্রতিটি দেহ-মন। এ যেন মৃতদেহে প্রাণের সঞ্চার।
পবিত্র কোরআনে বর্ণিত হচ্ছে, ‘আর তাঁর একটি নিদর্শন হলো, তিনি বৃষ্টির পূর্বে বাতাসকে প্রেরণ করে থাকেন বৃষ্টির সুসংবাদরূপে।’ (সূরা রুম : ৪৬)।
চৈত্র ও জ্যৈষ্ঠ মাসের প্রবল উত্তাপে যখন হাঁসফাঁস করতে থাকে বিশ্বচরাচর, ঠিক তখনই আল্লাহ তায়ালার রহমতের জানান দিয়ে ক্ষণিকে ক্ষণিকে আগমন করে দক্ষিণা বাতাস। মুহূর্তেই সঞ্চারিত হয় প্রতিটি দেহ-মনে এক অপার্থিব সুখানুভূতি। বয়ে যায় সবার তরে এক অব্যক্ত আনন্দের হিল্লোল। 
তবে কখনও কখনও এই শান্তশিষ্ট, কোমল বাতাসও ধারণ করে ভয়ঙ্কর আকৃতি। তাই তো ক্রোধে আছড়ে পড়ে জমিনবাসীর ওপর। চূর্ণবিচূর্ণ করে দেয় অহমিকায় নির্মিত ওই সুবিশাল অট্টালিকা। সুউচ্চ বৃহদাকার বৃক্ষরাজি মূলোৎপাটন করে ছুড়ে ফেলে দেয় বিভিন্ন দালানকোঠায়। যেমনটি বর্তমানে নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তাই বাতাস যেমন একদিকে আল্লাহর রহমতের নিদর্শন, ঠিক অন্যদিকে সে আল্লাহর গজবেরও বহিঃপ্রকাশ। এ বাতাস দিয়েই আল্লাহ তায়ালা ধ্বংস করে দিয়েছেন বহু নাফরমান জাতি। পবিত্র কোরআনে বর্ণিত হচ্ছে, ‘আর আদকে ধ্বংস করা হয়েছে প্রবল বেগে প্রবাহিত, উদ্ধত ঝঞ্ঝাবায়ু দিয়ে।’ (সূরা হা-ক্বাহ : ৫)।
প্রবলবেগে প্রবাহ বাতাসে আমাদের করণীয় : একজন প্রকৃত বান্দার কাজ হলো, সদাসর্বদা সে তার স্রষ্টার স্মরণাপন্ন হবে। সুখে-দুঃখে তাঁরই নাম শুধু যপ করবে। বিপদাপদে তাঁর দেওয়া পদ্ধতিতেই তার কাছে পানাহ চাইবে। মনে রাখতে হবে, বাতাসের অনিষ্টতার শিকার হয়ে কখনও তাকে গালাগাল করা যাবে না। বাতাসকে গালাগাল করা স্রষ্টাকে গালাগাল করার নামান্তর। কেননা, বাতাস সেই স্রষ্টারই হুকুমের গোলাম মাত্র।
হাদিসে বর্ণিত আছে, ‘বাতাস আল্লাহর রহমত, যা কখনও রহমত আবার কখনও আজাব নিয়ে আসে। তোমরা তাকে দেখে গালি দিও না। আল্লাহর কাছে তার বয়ে আনা কল্যাণ কামনা কর আর তার অনিষ্টতা থেকে পানাহ চাও।’ (মুসনাদে আহমদ : ৭৬৩১, ইবনে হিব্বান : ১০০৭ : সহিহ)।
তাই যখন প্রবলবেগে ঝঞ্ঝাবায়ু প্রবাহিত হবে তখন মোমিন বান্দাকে নিম্নোক্ত দোয়াটি পড়তে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যখন প্রবল বেগে ঝঞ্ঝা প্রবাহিত হতো তখন রাসুলুল্লাহ (সা.) তা পড়তেন।
‘হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে কল্যাণকর বায়ু ও তার মধ্যে নিহিত কল্যাণ এবং সে যে কল্যাণ নিয়ে প্রেরিত হয়েছে তা প্রার্থনা করছি। আর অকল্যাণকর বায়ু ও তার মাঝে নিহিত অনিষ্টতা এবং তাকে যে অকল্যাণ দিয়ে প্রেরণ করা হয়েছে তা থেকে পানাহ চাচ্ছি।’ (মুসলিম : ২১২২)।
ওই হাদিসে বাতাসের তিনটি মৌলিক কল্যাণের কথা বলা হয়েছে। প্রথমত, বাতাসকেই কল্যাণকর বলা হয়েছে। কারণ, বাতাস উষ্ণ আবহাওয়ার গরম চাদর বিদীর্ণ করে সর্বত্র ছড়িয়ে দেয় তার কোমল শীতলতা, যা আমরা প্রতিনিয়তই উপভোগ করে থাকি। এছাড়াও তা দুর্গন্ধময়, দূষিত বাতাসকে ঠেলে নিয়ে যায় দূরে বহুদূরে, ফলে জনমনে নেমে আসে স্বস্তি।
দ্বিতীয়ত, তার অভ্যন্তরে নিহিত কল্যাণ। যেমন, উপকারী বৃষ্টি বর্ষণ। তৃতীয়ত, তার বয়ে আনা কল্যাণ। যেমন উপকারী বৃষ্টিমুখর মেঘ। এর বিপরীতে রয়েছে ক্ষতিকর বৃষ্টি। যার পরিণতি খুবই অশুভ।
প্রবল বেগে বাতাস প্রবাহিত হলে বিশেষ কিছু আমল : মনে রাখতে হবে, বাতাস আল্লাহ তায়ালার হুকুমে নিয়োজিত তাঁরই একটি নিদর্শন। সে কোনো ইষ্ট বা অনিষ্টের মালিক নয়। পৃথিবীতে যত বেশি পাপকর্ম সম্পাদিত হবে তত বেশি এ ধরায় আল্লাহর গজব ত্বরান্বিত হবে। কখনও আগুন দিয়ে, কখনও পানি-বাতাস ইত্যাদি দিয়ে আল্লাহ তার ইহলৌকিক শাস্তি প্রয়োগ করে থাকেন। তাই এসব বিপদাপদে আল্লাহকেই ডাকা, তাঁর কাছেই পানাহ চাওয়া হলো একজন জ্ঞানী ব্যক্তির পরিচয়। বর্তমান সময়ে প্রতিদিনই এই ঝঞ্ঝা নামক আল্লাহর গজব জমিনে আঘাত হানছে, যা আমাদের কৃতকর্মেরই ফল। তা থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে নিম্নে বর্ণিত আমলগুলো করতে হবে। 
জাতির ওপর আল্লাহর পক্ষ থেকে আসন্ন বিপদের কথা স্মরণ করে অন্তরে আল্লাহর ভয়ের অনুভূতি তৈরি করা; রাসুল (সা.) এর সেখানো দোয়া পাঠ করা; গরিব-মিসকিনদের প্রতি সহানুভূতি ও দান-সদকার হাত প্রলম্বিত করা। কারণ, দান-সদকার বদৌলতে আল্লাহ তায়ালা আসন্ন বিপদ দূর করে দেন এবং সদাচারের বিনিময়ে তাদের প্রতি তিনি সদয় হন। তওবা করা এবং বাতাসের অনিষ্টতা থেকে বাঁচতে অধিক পরিমাণ ইস্তেগফার ও জিকির করা। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তারা ক্ষমা প্রার্থনা করাকালীন আমি তাদের শাস্তি দিই না।’ (সূরা আনফাল : ৩৩)।
আমরা সবাই মিলে ওই আমলগুলো শুরু করব। জমিনে আল্লাহর আজাব-গজবের প্রকৃত কারণ আমাদের কৃতকর্ম। তাই খালেস দিলে তওবা করব।