আজকের পত্রিকাআপনি দেখছেন ১-০৫-২০১৯ তারিখে পত্রিকা

হালদায় ডিম সংগ্রহকারীরা প্রস্তুত

শানে আলম সজল, চট্টগ্রাম
| শেষ পাতা

চট্টগ্রামের রাউজানে হালদা নদীর পাড়ে ডিম সংগ্রহকারীরা মাটির কূপ প্রস্তুত করে রেখেছেন ষ আলোকিত বাংলাদেশ

দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজননক্ষেত্র হালদায় কার্প জাতীয় (রুই, কাতল, মৃগেল ও কালিবাউশ) মা-মাছের ডিম ছাড়াকে কেন্দ্র করে নদী পাড়ের ডিম সংগ্রহকারীরা প্রস্তুত রয়েছেন। ডিম সংগ্রহে ব্যবহৃত নৌকা, জাল, ডিম সংরক্ষণের হ্যাচারি ও মাটির কুয়াও প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এখন শুধু বৃষ্টির অপেক্ষা। বৃষ্টি নামলেই মা-মাছ ডিম ছাড়তে পারে বলে ধারণা করছেন হালদা পাড়ের ডিম সংগ্রহকারীরা। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, হালদা থেকে ২০১৮ সালে ২২ হাজার ৩৬৮ কেজি, ২০১৭ সালে ১ হাজার ৬৮০ কেজি, ২০১৬ সালে ৭৩৫ (নমুনা ডিম) কেজি, ২০১৫ সালে ২ হাজার ৮০০ কেজি এবং ২০১৪ সালে 
১৬ হাজার ৫০০ কেজি ডিম সংগ্রহ করা হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নিয়মিত অভিযান চালিয়ে মা মাছ সংরক্ষণ, ডিম থেকে রেণু তৈরির কুয়া সংস্কার, কুয়ায় নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের ব্যবস্থাসহ নানা উদ্যোগের কারণে হালদায় ডিম সংগ্রহের পরিমাণ এবার অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে যাবে। মঙ্গলবার হালদা নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে ঘুরে দেখা গেছে, হালদার পাড়ে উৎসবের আমেজ। ডিম সংগ্রহকারী কামাল উদ্দিন বলেছেন, এরই মধ্যে নিষিক্ত ডিম সংগ্রহে প্রস্তুতি হিসেবে তিনি তৈরি রেখেছেন রেণু ফোটানোর জন্য ৬টি মাটির কুয়া। কুয়াগুলোর দৈর্ঘ্য প্রায় ১৬ ফুট, প্রস্থ প্রায় ২০ ফুট। এ ছাড়াও ডিম সংগ্রহের কাজে ব্যবহৃত ৭টি নৌকা, জাল, বালতিসহ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রও প্রস্তুত রেখেছেন তিনি। প্রতিটি মাটির কুয়া তৈরি করতে ৩ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। ডিম সংগ্রহ করে কুয়ায় রাখা পর্যন্ত প্রতিটি নৌকার পেছনে কমপক্ষে ২৫-৩০ হাজার টাকা ব্যয় হতে পারে বলে ধারণা করছেন তিনি। দেখা গেছে, এবার ডিম আহরণকারীদের আগাম প্রস্তুতি রয়েছে। এরই মধ্যে নিষিক্ত ডিম সংগ্রহের প্রস্তুতি হিসেবে তৈরি রাখা হয়েছে রেণু ফোটানোর মাটির কুয়া। এগুলো দৈর্ঘ্যে প্রায় ১৫ ফুট ও প্রস্থে ১০ ফুটের মতো। উপজেলা মৎস্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, রাউজান উপজেলার ৮টি ইউনিয়নে দেড় শতাধিক মাটির কুয়া প্রস্তুত করা হয়েছে। এ ছাড়া সরকারি ৩টি হ্যাচারিতে ৮৯টির মধ্যে প্রায় ৬০টি কুয়া প্রস্তুত রাখা হয়েছে। অন্যদিকে হাটহাজারী অংশে ৬০টি মাটির কুয়ার পাশাপাশি ৩টি হ্যাচারিতে ১১৮টি কুয়া ডিম রাখার জন্য প্রস্তুত আছে। সব মিলিয়ে এবার ৪১৭টির মতো কুয়া ডিম রাখার কাজে ব্যবহৃত হতে পারে। 
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ও হালদা রিসার্চ ল্যাবরেটরির সমন্বয়ক ড. মো. মনজুরুল কিবরিয়া বলেন, ১ মে থেকে জো শুরু। এরপর যে কোনো দিন ডিম ছাড়তে পারে মা মাছ। এরই মধ্যে হালদা নদীতে ডিম সংগ্রহকারীরা প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। এদিকে হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. রুহুল আমিন বলেন, বিগত বছরের চেয়ে অনেক বেশি প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, একেক বছর একেক সময় হালদায় মা মাছ ডিম দিয়ে থাকে। এক বছর এপ্রিলে। আরেক বছর মে মাসে। আবার কখনো কখনো জুন মাসেও ডিম ছাড়ে। বৃষ্টির ওপর নির্ভর করে মা মাছ কখন ডিম ছাড়বে। এ প্রসঙ্গে রাউজান উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) আজাহারুল আলম বলেন, ২১ এপ্রিল পূর্ণিমা চলে গেছে বৃষ্টি হয়নি। তাই হালদায় ডিম ছাড়েনি মা-মাছ। এবার অমাবশ্যায় বৃষ্টি হলে ডিম ছাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ডিম সংগ্রহের জন্য সবধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে বলেও জানান তিনি। প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে এবার সাড়ে ৩০০ থেকে ৪০০ নৌকা ডিম সংগ্রহ করতে পারে বলে ধারণা করছেন তিনি। মাজহারুল আলম আরও বলেন, তথ্য সংগ্রহের জন্য সার্বিকভাবে প্রস্তুত উপজেলা মৎস্য বিভাগ। তথ্য সংগ্রহের জন্য জেলা মৎস্য কর্মকর্তা দায়িত্ব বন্টন করে দিয়েছেন। সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য তথ্য সংগ্রহের জন্য তথ্য-প্রযুক্তির ব্যবহার করা হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।