আসন্ন রমজানে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎসেবা এবং পর্যাপ্ত পানি সরবরাহ নিয়ে শঙ্কিত নগরীর সাধারণ মানুষ। বরিশাল সিটি করপোরেশন (বিসিসি) কর্তৃপক্ষ বরাবরই স্বীকার করে আসছে, নগরীতে চাহিদার তিন ভাগের একভাগ পানি সরবরাহ করার সক্ষমতা রয়েছে তাদের। ফলে পানি সংকট সমাধানে কোনো সম্ভাবনা আপাতত নেই। অপরদিকে দিনে-রাতে একাধিকবার বিদ্যুৎ বন্ধ হওয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (ওজোপাডিকো) স্থানীয় দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা গেল দেড়মাস ধরে উত্তর দিচ্ছেনÑ ‘উন্নয়ন কাজের জন্য বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখতে হচ্ছে। দুই-এক দিনের মধ্যে এ সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে’। আসন্ন রমজানে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে কিনা এ প্রসঙ্গেও একই উত্তর দেন তারা। ফলে প্রচ- গরম মৌসুমে বিদ্যুৎ ও পানির অভাব রোজাদারদের দুর্ভোগে ফেলার আশঙ্কা করা হচ্ছে। বিসিসির পানি শাখার দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, নগরীতে প্রতিদিন পানির চাহিদা ৫ কোটি ৮০ লাখ লিটার। এর বিপরীতে দিনে সরবরাহ করা হচ্ছে ১ কোটি ৮০ লাখ লিটার। ফলে নগরীর প্রায় অর্ধেকের বেশি মানুষ বিসিসির সরবরাহ করা পানি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এ কারণে নগরীর বেশিরভাগ এলাকায় পানি নিয়ে দুর্ভোগ নিত্যদিনের ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সর্বাপেক্ষা করুণ অবস্থার মধ্যে পড়েছেন নগরীর বর্ধিত ২০ বর্গ কিলোমিটার এলাকার বাসিন্দারা। বর্ধিত এলাকায় না আছে করপোরেশনের পানি সরবরাহ লাইন, আবার ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় গভীর নলকূপেও দিনে অধিকাংশ সময় পানি উঠছে না। ফলে তীব্র গরমে বর্ধিত এলাকার কয়েক লাখ বাসিন্দা চরম পানি সংকটে অসহনীয় দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন।
বিসিসির পানি শাখার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ওমর ফারুক জানান, প্রতিদিন ৫ কোটি ৮০ লাখ চাহিদার বিপরীতে দুটি ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট থেকে ১ কোটি লিটার এবং ৩৪টি পাম্পের মাধ্যমে ৮০ লাখ লিটার সরবরাহ করা যাচ্ছে। কিন্তু সম্প্রতি পানির স্তর স্বাভাবিকের চেয়ে ২৫ থেকে ৩০ ফুট নিচে নেমে যাওয়ায় পাম্পগুলোতেও সক্ষমতা অনুযায়ী পানি ওঠানো যাচ্ছে না। রমজানের মধ্যে এ সংকট সমাধানের সম্ভাবনা নেই বলে বিসিসির এ কর্মকর্তা বলেন। চলমান তাপদাহের মধ্যে বরিশাল নগরবাসীর দুর্ভোগ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে বিদ্যুৎ বিভ্রাট। মধ্যরাতেও ঘণ্টাব্যাপী বিদ্যুৎ বন্ধ থাকে। নগরীর কাশীপুর এলাকার বাসিন্দা জান্নাতুল ফেরদৌস জানান, তাদের এলাকায় দিন-রাত মিলিয়ে ছয় থেকে সাতবার বিদ্যুৎ বন্ধ হয়। দিনের বেলা এক ঘণ্টার মধ্যে এলেও রাতে কমপক্ষে দেড়ঘণ্টা বিদ্যুতের জন্য অপেক্ষায় থাকতে হয়।
জানতে চাইলে ওজোপাডিকোর বরিশালের বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী অমূল্য কুমার সরকার বলেন, ৩০ এপ্রিলের পর আর সমস্যা থাকবে না। সরবরাহ লাইন সংস্কারের জন্য মাঝে মাঝে বিদ্যুৎ বন্ধ করতে হচ্ছে। ৩০ এপ্রিলের মধ্যে সব কাজ শেষ হবে। নির্বাহী প্রকৌশলী বলেন, পাঁচটি অতিরিক্ত ট্রান্সফরমার প্রস্তুত রাখা হয়েছে। যাতে রমজানের মধ্যে কোথাও ট্রান্সফরমার বিকল হলে দ্রুত স্থানান্তর করা যায়। এছাড়া রাখা হয়েছে একটি ট্রলি ট্রান্সফরমার। অন্যদিকে বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী রাশেদুল ইসলামের দাবি, তার আওতাধীন এলাকায় বিদ্যুৎ বন্ধ হয় না। অথচ বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ-২ এর আওতাধীন নিউ সার্কুলার রোডের বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম ও গোঁড়াচাঁদ রোডের ব্যবসায়ী জহিরুল ইসলাম বলেন, দিন-রাত সব সময় তাদের এলাকায় লোডশেডিং হচ্ছে।