শফিক কলিম : বক্সের ঠিক ওপরে সানজিদার আলতো করে দেওয়া বল বুটের ডগা দিয়ে ডিফেন্ডার আমিন-ওই আমারসানার মাথার উপর দিয়ে বের করে নেন মনিকা, এরপর বামপায়ের ট্রেডমার্ক ভলিশটে মঙ্গোলিয়ার জালে; লাল-সবুজ উৎসবে রঙিন বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম। তবে শট নেওয়ার পরও নিশ্চিত ছিলেন না গোল হবে, বল জালে জড়ানোর পর বোঝেন গোল হয়েছেÑ ম্যাচ শেষ জানান মনিকা। প্রথমার্ধের যোগ হওয়া সময়ে মনিকার করা এ গোলেই আত্মবিশ্বাস বেড়ে যায় স্বাগতিক কিশোরীদের। বিরতিতে কোচ গোলাম রব্বানী ছোটনের টিপসে দ্বিতীয়ার্ধে রং বদলে যায় ম্যাচের। আক্রমণও কমেনি, বরং বাড়ে। ফলে গতকাল সন্ধ্যায় বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে বঙ্গমাতা অনূর্ধ্ব-১৯ নারী আন্তর্জাতিক গোল্ডকাপের দ্বিতীয় সেমিফাইনালে ৩-০ গোলের জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে স্বাগতিক কিশোরীরা, উঠে গেছে ফাইনালে। যেখানে অপেক্ষা করছে কিরগিজস্তানকে ৭-১ গোলে হারানো লাওস। অন্য দুই গোল টাঙ্গাইলের দুই কিশোরী মারজিয়া ও তহুরার।
তবে দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে সাজেদার বদলি নামা তহুরার গোলটি ‘উপহার’ই বটে। মনিকা-মারজিয়ার পা ঘুরে আসা বল ধরে বক্সের বাইরে থেকে শট নেন বয়সভিত্তিক পর্যায়ে আন্তর্জাতিক উঠানে পাঁচটি হ্যাটট্রিক করা তহুরা; বল এক ডিফেন্ডারের পায়ে লেগে দিক পাল্টে ভূপতিত গোলরক্ষকের সামনে ড্রপ খেয়ে গায়ের উপর দিয়ে জালে জড়ায়। গোল করে খুশির চেয়ে নিজেই হেসে কুটিকুটি তহুরা!
প্রত্যাশা মতো বড় ব্যবধানে জিতলেও ফিনিশিং দুর্বলতা ছিল প্রথমার্ধে; যে কারণে প্রথম ৪৫ মিনিটে গোল করার মতো আটটি ভালো সুযোগ পেলেও কাজে লাগাতে পারেনি স্বাগতিকরা। অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসীও মনে হয়েছে; বক্সের আশপাশে গেলে নিজে গোল করার মানসিকতা পেয়ে বসেছিল মারজিয়া, সাজেদা, সানজিদাদের! তবে কোচ ছোটনের ব্যাখ্যা, ‘চোটে খেলতে না পারা স্বপ্না ও কৃষ্ণার বিকল্প একাদশে নামা মারজিয়া ও সাজেদা খেলার সঙ্গে মানিয়ে নিতে সমস্যা হচ্ছিল। যদিও ফুটবলারদের মধ্যে সামর্থ্যরে ব্যবধান খুব বেশি না।’
শুরুতে কৃষ্ণা, স্বপ্নার শূন্যতা দেখা গেছে। মারজিয়া-সাজেদারা আস্থার প্রতিদান দিতে পারছিলেন না, বরং একের পর এক গোল মিসের মহড়া দিয়ে চলছিলেন। অবশ্য মাত্র ২৫ সেকেন্ডেই গোল করে দেশের দ্রুততম গোলদাতার তালিকায় তহুরার পাশে নাম লেখাতে পারতেন মারজিয়া। কিন্তু আখির লংবল ধরে বক্সের ভেতর গোলরক্ষককেও কাটিয়ে ফাঁকা পোস্টে বল ঠেলার আগে তালগোল পাঁকিয়ে ফেলেন মারজিয়া; নবম মিনিটে মারিয়ার বাড়ানো বলে টোকা দিয়ে পথ পাল্টাতে পারেননি তিনি। অবশ্য ৬৯ মিনিটে তার পা থেকে এসেছে ২-০ করা গোল, মারিয়ার থ্রু ধরতে অফসাইড ট্র্যাপ ভেঙে বেরিয়ে গিয়ে প্লেসিং শটে বল জালে পাঠান মারজিয়া।
তবে গোল তিনটি হলেও স্বাগতিকদের আক্রমণাত্মক ফুটবলে নাকালই ছিল মঙ্গোলিয়ান কিশোরীরা, ৯০ মিনিটে স্বাগতিকদের পোস্টে একটা শটও নিতে পারেননি তারা; বার দুয়েক বক্সের কাছাকাছি যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন, ডিফেন্ডার আখি, নার্গিস, মাসুরারা প্রতিহত করেছেন। বরং নিজেদের রক্ষণ সামলাতে ত্রস্তব্যস্ত ছিলেন সাতজন। দুই প্রান্ত দিয়ে সানজিদা ও মারজিয়া গত ২ ম্যাচের মতো সাঁড়াশি আক্রমনে যেতে পারেননি।
লাল-সবুজ কিশোরীদের স্বপ্নের পথে শেষ বাধা লাওস। শুক্রবার ৩ ম্যাচে ১৭ গোল করে উড়তে থাকা লাওসকে মাটিতে নামাতে চান স্বাগতিক কোচ। প্রতিপক্ষ যত শক্তিশালীই হোক, তাদের চ্যালেঞ্জ জানানোর মতো শক্তি-সামর্থ্য শিষ্যদের আছে, আত্মবিশ্বাসীও। প্রত্যাশা তো গোটা দেশেরই।