জাপানের ইম্পেরিয়াল প্রাসাদে ব্যক্তিগত কয়েকটি ধর্মানুষ্ঠানের মাধ্যমে সম্রাট আকিহিতোর সিংহাসন ছাড়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। মঙ্গলবার জাপানের রাজপরিবারের ঐতিহ্যে ছেদ ঘটিয়ে ২০০ বছরের মধ্যে প্রথম সম্রাট হিসেবে স্বেচ্ছায় সিংহাসন ত্যাগ করছেন তিনি। বয়স ও অবনতিশীল স্বাস্থ্যের কারণে নিজের দায়িত্ব ঠিকমতো পালন করতে পারছেন না, এমন অনুভব করার কথা জানানোর পর ৮৫ বছরের বৃদ্ধ সম্রাটকে পদত্যাগ করার আইনি অনুমোদন দেওয়া হয়। আজ তার ছেলে সিংহাসনের উত্তরাধিকারী যুবরাজ নারুহিতো চন্দ্রমল্লিকা সিংহাসনে আরোহন করবেন। খবর : বিবিসির
আকিহিতোর পদত্যাগের দিনটিতে ৩১ বছরের পুরোনো হেইসেই যুগের অবসান ঘটবে আর নতুন সম্রাটের দায়িত্ব গ্রহণের দিন
আজ থেকে নতুন রেইওয়া যুগ শুরু হবে। জাপানের সম্রাটের রাজনৈতিক কোনো ক্ষমতা নেই, কিন্তু তিনি জাতীয় প্রতীক হিসেবে ভূমিকা রাখেন। সম্রাট আকিহিতোর রাজত্বকাল অসুস্থ ও দুর্যোগে আক্রান্ত লোকজনের প্রতি তার সহানুভূতি ও তাদের সঙ্গে কাটানো সময় দিয়ে চিহ্নিত হচ্ছে। সম্রাটের এ দয়াপরবশতা বহু জাপানির হৃদয়ে তাকে শ্রদ্ধার আসনে বসিয়েছে।
‘মানব সম্রাট’ আকিহিতোর জীবন ও শাসনকাল : দিনের শুরুতে একান্ত ব্যক্তিগত সব অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সম্রাট আকিহিতো জাপানের রাজকীয় পরিবারের পৌরাণিক পূর্বপুরুষদের তার সিংহাসন ছাড়ার খবর দেবেন। মুকুট ত্যাগের মূল আয়োজন ‘তাইরেই-সিডেন-নেগি’ অনুষ্ঠিত হবে প্রাসাদের মাতসু-নো-মা স্টেট কক্ষে। তিনি ও তার স্ত্রী মিচিকো স্থানীয় সময় বিকাল ৫টার দিকে ওই কক্ষে প্রবেশ করে মিনিট দশেক থাকবেন। সম্রাট হিসেবে দেওয়া আকিহিতোর শেষ ভাষণের মধ্য দিয়ে ওই অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘটলেও কার্যত মধ্যরাত পর্যন্ত তিনিই সিংহাসনে থাকবেন। আজ সকালে রাজকীয় সম্পদের উত্তরাধিকার গ্রহণ করার মধ্য দিয়ে শুরু হবে ক্রাউন প্রিন্স নারুহিতোর অভিষেক কার্যক্রম।
কেন সিংহাসন ছাড়ছেন জাপানের সম্রাট : ১৮১৭ সালের পর আকিহিতোই হতে যাচ্ছেন জাপানের প্রথম সম্রাট যিনি স্বেচ্ছায় সিংহাসন ছাড়তে যাচ্ছেন। ৮৫ বছর বয়সি এ সম্রাট ২০১৬ সালে দেওয়া বিরল এক ভাষণে মুকুটত্যাগের আকাক্সক্ষা প্রকাশ করেছিলেন। বয়স দায়িত্ব পালনকে কঠিন করে তুলতে পারে ভেবে শঙ্কিত হওয়ার কথাও জানিয়েছিলেন তিনি। ‘যখন আমি বিবেচনা করি যে আমার স্বাস্থ্যের ক্রমাবনতি হচ্ছে, তখন রাষ্ট্রের প্রতীক হিসেবে যেসব দায়িত্ব পালন করার কথা সেগুলো সম্ভবত কঠিন হয়ে পড়বে ভেবে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়ি’, বলেছিলেন আকিহিতো। সম্রাটের অবসরের ভাবনায় জাপানের নাগরিকদের একটি বড় অংশের সহানুভূতির চিত্র পাওয়া যায় বিভিন্ন জনমত জরিপেও। জাপানে আগে সম্রাটদের সিংহাসন ত্যাগের বিধান ছিল না। আকিহিতোর ভাষণের এক বছর পর দেশটির পার্লামেন্ট এ সংক্রান্ত আইন করলে সম্রাটের সিংহাসন ত্যাগের সুযোগ সৃষ্টি হয়।
কে হচ্ছেন নতুন ক্রাউন প্রিন্স : আকিহিতোর সিংহাসন ত্যাগের পর যুবরাজ নারুহিতো হতে যাচ্ছেন জাপানের ১২৬তম সম্রাট। তার সময় থেকেই দেশটিতে শুরু হবে রেইওয়া যুগের। ১৯৮৯ সালে আকিহিতো সিংহাসনে আরোহনের পর যে হেইসেই যুগের শুরু হয়েছিল, মঙ্গলবারই তার সমাপ্তি ঘটবে।
সিংহাসনের হস্তান্তর যেভাবে উদযাপন করবে জাপানিরা : জাপানে বসন্ত উদযাপনে এমনিতেই এক সপ্তাহের ছুটি থাকে। একে ‘গোল্ডেন উইক ব্রেক’ বলে। নতুন সম্রাটের অভিষেক উপলক্ষে ওই ছুটি বাড়িয়ে ১০ দিন করা হয়েছে। এবারের সিংহাসন হস্তান্তরে উৎসব উৎসব ভাব থাকছে, যা ৩০ বছর আগের একেবারেই বিপরীত। বাবা হিরোহিতোর মৃত্যুর পর দায়িত্ব নেওয়া আকিহিতোর অভিষেকে ছিল শোকের আবহ। জীবিত কারও পক্ষে এবারই প্রথম কোনো সম্রাটের সিংহাসন ত্যাগ দেখার সৌভাগ্য হচ্ছে। তিন দশক আগে নারুহিতোর বাবা আকিহিতোর অভিষেক অনুষ্ঠানটিও টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচারিত হয়েছিল।