দিনভর নানা গুঞ্জনের পর নির্দিষ্ট সময়ে সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ না নেওয়ায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের আসনটি শূন্য ঘোষণা করেছেন স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী। মঙ্গলবার রাতে সংসদ অধিবেশন চলার সময় স্পিকার সংসদ সদস্যদের সামনে এ ঘোষণা দেন। ফলে বগুড়া-৬ আসনটিতে নতুন করে নির্বাচনের উদ্যোগ নেবে নির্বাচন কমিশন।
স্পিকার বলেন, সংবিধানের ৬৭ অনুচ্ছেদের (১) (ক) বিধি অনুযায়ী সংসদের প্রথম বৈঠকের তারিখ থেকে ৯০ দিনের মধ্যে সংবিধানের তৃতীয় তফসিলে নির্ধারিত বিধান অনুযায়ী কোনো সদস্য শপথ গ্রহণ করতে অসমর্থ হন, বিধায় তার আসনটি শূন্য হয়।
স্পিকার বলেন, উল্লেখ্য নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শপথ গ্রহণে অসমর্থ হওয়ায় সংসদের কার্যপ্রণালী বিধির ১৭৮ (৩) বিধি অনুযায়ী শূন্য হওয়া সম্পর্কে সংসদকে অবহিত করার বিধান রয়েছে। এমতাবস্থায় শপথ
গ্রহণে অসমর্থ হয়েছেন নির্বাচনি এলাকা ৪১, বগুড়া-৬ থেকে নির্বাচিত সদস্য মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বিষয়টি জাতীয় সংসদের কার্যপ্রণালী বিধির ১৭৮ (৩) উপবিধি অনুযায়ী এই সংসদে অবহিত করা হলো। এখন নির্বাচন কমিশন পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।
এর আগে একাদশ সংসদ নির্বাচনে বিএনপি থেকে নির্বাচিত পাঁচজন সংসদ সদস্য নানা নাটকীয়তার পর শপথ নিলেও দলটির মহাসচিব ফখরুল নেননি। তিনি বলেছেন, দলীয় সিদ্ধান্তে তিনি শপথ নেওয়া থেকে বিরত থাকছেন। এটা তাদের ‘কৌশলেরই অংশ’। সেক্ষেত্রে ফখরুলের বিষয়ে কী হবেÑ এ প্রশ্নের জবাবে স্পিকার শিরীন শারমিন বলেন, ‘নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে শপথ না নিলে সংবিধান অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
সংবিধানের ৬৭ (১)-এর ‘ক’ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, কোনো নির্বাচনের পর সংসদের প্রথম বৈঠকের তারিখ থেকে ৯০ দিনের মধ্যে শপথ নিতে না পারলে ওই সংসদ সদস্যের আসন শূন্য হবে। তবে এই ৯০ দিনের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে স্পিকার যথার্থ কারণে তা বাড়াতে পারবেন।
দলীয় সিদ্ধান্তেই শপথ নেইনি : ফখরুল
দলীয় সিদ্ধান্তেই সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নেননি বলে জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। একই সঙ্গে তিনি সময় চেয়ে স্পিকারের কাছে কোনো আবেদনও করেননি বলে জানান।
মঙ্গলবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে আওয়াজ নামে একটি মানবাধিকার সংগঠন আয়োজিত ‘উন্নয়নের মৃত্যুকূপে জনজীবন/নুসরাত একটি প্রতিবাদ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা জানান।
ফখরুল বলেন, আমরা যে শপথ নিয়েছি, এর জন্য অনেকে অনেক মন্তব্য করেছেন। কিন্তু সময়ই প্রমাণ করবে, শপথ নেওয়াটা সঠিক সিদ্ধান্ত কি না। আগে আমরা শপথ নিইনি, তার মানে এখন নেব নাÑ তা তো হতে পারে না। তিনি বলেন, বিদেশিদের সঙ্গে কথা বলে নয়, বিশ্ব রাজনীতি দেখে আমরা সংসদে গিয়েছি। কথা বলার ন্যূনতম যে সুযোগ এটা কাজে লাগাতে দানবকে পরাজিত করার জন্য শপথ নিয়েছি।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, গতকাল (সোমবার) থেকে রাজনীতি খুব গরম হয়ে উঠেছে। কারণ বিএনপির নির্বাচিত সংসদ সদস্যরা শপথ নিয়েছেন। বলা যেতে পারে এটি নিঃসন্দেহে একটা চমক, ইউ টার্ন। আমাদের দলীয় সিদ্ধান্ত ছিল ৩০ তারিখের যে নির্বাচন হয়েছে, সেটা কোনো নির্বাচন হয়নি। জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করে যে নির্বাচনের ভোট ২৯ তারিখের রাতে চুরি হয়ে গেছে, জনগণের ভোটের অধিকার ছিনিয়ে নিয়ে নির্বাচন হয়েছেÑ তখন জনগণের যে ক্ষোভ ছিল, সে ক্ষোভের ধারাবাহিকতায় আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম শপথ গ্রহণ করব না। কিন্তু একটি কথা আমরা বিশ্বাস করি, কোনো সিদ্ধান্তই যে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত থাকবে, এটা সবসময় সঠিক নয়। আমরা পরিষ্কারভাবে বলেছি, আমাদের ন্যূনতম যে সুযোগটুকু আছে সংসদে গিয়ে বলার, সেটা কাজে লাগাব।