নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ শীতলক্ষ্যা নদীতে তৃতীয় দফায় চলছে বিআইডব্লিউটিএ’র উচ্ছেদ অভিযান। উচ্ছেদে বড় ধরনের অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। আদালতের আদেশকে পুঁজি করে নদীপাড়ের মানুষের সঙ্গে ভয়াবহ স্বেচ্ছাচারিতা চালানোর অভিযোগ করেন ভুক্তভোগীরা। আঁতাত হলে স্থাপনা অক্ষত থাকা, অন্যথায় সব বৈধ-অবৈধ স্থাপনা নিমেষেই গুঁড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগও করা হয়। উচ্ছেদের আগে নোটিশ না দেওয়া আর মালামাল সরিয়ে নেওয়ার ন্যূনতম সময় না দেওয়ার অভিযোগও তাদের। শিল্পাঞ্চলে এ ধরনের অনিয়মের কারণে রাতারাতি নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন অনেকে। তবে সব ধরনের অভিযোগ অস্বীকার করেছে প্রতিষ্ঠানটি।
জানা যায়, চলতি বছর ফেব্রুয়ারিতে নদীকে জীবিত সত্তা ঘোষণা করে ঐতিহাসিক রায় দেন হাইকোর্ট। এরই পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে রাজধানীর আশপাশের নদীগুলো অবৈধ দখলমুক্ত করতে উচ্ছেদ অভিযান শুরু করে সংশ্লিষ্ট দপ্তর। আদেশে বলা হয়, নদীর পানি থেকে ১৫০ ফুট পর্যন্ত নদীর জমি হিসেবে বিবেচ্য। ১২ এপ্রিল থেকে রূপগঞ্জের সুলতানা কামাল সেতু থেকে উচ্ছেদ অভিযান শুরু করে বিআইডব্লিউটিএ। অভিযোগ উঠেছে, নদীর সীমানা পিলার কিংবা কাগজপত্রের তোয়াক্কা করেনি প্রতিষ্ঠানটি। প্রতিষ্ঠানের নিম্নপর্যায়ের কর্মচারীরা ঘটনাস্থলে গিয়ে দখলে থাকা ব্যক্তিদের লেনদেনের প্রস্তাব দেন। আঁতাত হলেই অক্ষত থাকে স্থাপনা। ১৯৭৩ সালে বঙ্গবন্ধু দেশের বিভিন্ন জেলার নদীভাঙা ভবঘুরে মানুষকে ওয়াসা ও নদীর জমিতে পুনর্বাসন করেন। সেখানেও উচ্ছেদ চালায় বিআইডব্লিউটিএ। নদীর পশ্চিমপাড়ের পূর্বগ্রাম থেকে বড়ালু পর্যন্ত অন্তত ৪০টি ডকইয়ার্ড থাকলেও ভাঙচুর হয়েছে মাত্র পাঁচটি। নদীর পূর্বপাড়ের নোয়াপাড়ায় মমিন টেক্সাইলকে বিআইডব্লিউটিএ ২ লাখ ৪০ হাজার টাকা জরিমানা করলেও কাগজপত্রে দেখিয়েছে ২ লাখ টাকা। ভাঙচুর হয়েছে জাহাঙ্গীরের মার্কেট, ফাইজুল টেক্সটাইল, জোনায়েদ টেক্সটাইল, আলাউদ্দিন, মোতালেব মাতবর, জয়নাল আবেদীন, বাদশা মিয়া, কাজল মাস্টার, সাহাজুদ্দিন, আফাজ কাজী, মোস্তফা কাজীর বাড়িসহ অনেক বসতবাড়ি। উচ্ছেদের শিকার প্রত্যেকের দাবি, ব্রিটিশ আমল থেকে শুরু করে হাল সনের পর্চা দলিলমূলে জমির মালিক তারা। কর-খাজনাও পরিশোধ আছে চলতি বছর পর্যন্ত। অন্যদিকে রক্ষা পেয়েছে স্থানীয় এক প্রভাবশালীর স্থাপনা, কয়েকজনের বাড়ি, একটি স্টিল মিল, একটি তেলের মিল ও বিশেষ একটি গ্রুপের সব স্থাপনা। এ বিষয়ে বিআইডব্লিউটিএ নারায়ণগঞ্জ নদীবন্দরের যুগ্ম পরিচালক গোলজার আলী বলেন, আমরা নিয়মমাফিক শীতলক্ষ্যা নদী রক্ষায় উভয় পাশে উচ্ছেদ অভিযান চালিয়ে যাচ্ছি। এছাড়া যেসব প্রতিষ্ঠান ভাঙচুর হয়নি বলা হচ্ছে তারা জেলা প্রশাসন ও আমাদের কাছ থেকে বৈধ অনুমোদন নিয়ে দখলে আছেন। সীমানা পিলারের বিষয়ে তিনি বলেন, এদিকে আগের সীমানায় ত্রুটি রয়েছে। ৫ হাজার ১১টি সীমানা পিলার পুনঃস্থাপনের অনুমোদন হয়েছে। বেশি টাকা দিয়ে কম টাকার রসিদের বিষয়ে যুগ্ম পরিচালকের দাবি, ভ্যাট, ট্যাক্স বাদ দিয়ে গ্রাহক রসিদ পায়। তাছাড়া যদি কেউ সরাসরি ঘুষ নিয়ে থাকেন, তাহলে দেখিয়ে দিন। আমরা ব্যবস্থা নেব।