ঢালাও কর অব্যাহতির লাগাম টানবে এনবিআর
বাজেট কার্যকরের দিনই নতুন ভ্যাট আইন চালু
আসছে ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটে দুই একটি বিশেষ খাত ছাড়া, বেশিরভাগ খাতেরই কর অব্যাহতির সুযোগ তুলে নেওয়া হবে। তবে বহাল থাকবে পুঁজিবাজারের দেওয়া সকল প্রণোদনা। বাজেটের কর কাঠামো নিয়ে এমন সব কথা জানিয়েছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া। বৃহস্পতিবার এনবিআরের সম্মেলন কক্ষে অর্থনৈতিক সাংবাদিকদের সংগঠনের (ইআরএফ) সঙ্গে প্রাক বাজেট আলোচনায় এসব কথা জানান তিনি।
এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, পুঁজিবাজারের উন্নয়নের বিষয় নিয়ে প্রধানমন্ত্রী উদ্বিগ্ন। ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োাগকারীদের বিশেষ সুবিধা দেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দিয়েছেন। বাজারে আস্থা আর স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর সঙ্গে বসে এরই মধ্যে এ বিষয়ে উদ্যোগ শুরু হয়েছে। কোনো সময়ের ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীরা বিশেষ সুবিধা পাবেনÑ সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, টাইম ফ্রেমটা স্টক এক্সচেঞ্জ ও আইসিবিসহ স্টেকহোল্ডাররা নির্ধারণ করবেন। করপোরেট ট্যাক্স সুবিধা নিতে কোম্পানিগুলোকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার আহ্বান জানিয়ে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির কর ২৫ শতাংশ, তালিকা বহির্ভূত কোম্পানির কর ৩৫ শতাংশ। কোনো কোম্পানি যদি মনে করে কর্পোরেট ট্যাক্স বেশি তাহলে ওই কোম্পানিগুলো পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়ে ট্যাক্স সুবিধা নিতে পারে। কিন্তু কোম্পানিগুলো স্বচ্ছতা জবাবদিহিতার ভয়ে পুঁজিবাজারে আসতে চায় না।
ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ বিবেচনায় নিলেও, রাজস্ব বোর্ড বড় ব্যবসায়ীদের বেশি ছাড় দিতে চান না নতুন বাজেটে। জানিয়েছেন, মোট আয়কর আদায়ের ৬০ থেকে ৬৫ ভাগ আসে কর্পোরেট কর থেকে, তাই সেখানে বড় ধরনের ছাড়ের সুযোগ নেই। উল্টো আয় বাড়াতে, কমানো হবে খাতভিত্তিক অব্যাহতির ব্যবস্থা।
নতুন ভ্যাট আইন প্রসঙ্গে মোশাররফ হোসেন বলেন, বাজেট কার্যকরের দিন থেকেই নতুন ভ্যাট আইন কার্যকর হবে। ভ্যাটের হার কেমন হবে তা অর্থমন্ত্রী ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা করে নির্ধারণ করেছেন। ব্যবসায়ীরা তা মেনে নিয়েছেন। আগামী বাজেট কার্যকরের দিন থেকে এ ভ্যাট আইন কার্যকর হবে।
এনবিআর চেয়ারম্যান জানান, আসছে অর্থবছরে আয় বাড়াতে আয়কর রিটার্ন দাখিল পুরোপুরি অনলাইন করা হবে। বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে বাধ্যতামূলক করা হবে ইলেকট্রনিক ফিসক্যাল ডিভাইস, যাতে ফাঁকি ঠেকানো যায়। ট্যাক্স আইডেন্টিফিকেশন নম্বরের (টিআইএন) ক্ষেত্রে কড়াকড়ি আরোপ করা হবে। কারণ, অনেকে অনৈতিকভাবে টিআইএন নেয়। এভাবে যারা টিআইএন নেন তারা যাতে ফেরত দেন তার ব্যবস্থা করা হবে।
সভায় ইআরএফের পক্ষ থেকে ১১ দফা প্রস্তাবনা দেওয়া হয়। সেগুলোর মধ্যে রয়েছে, বাজেট অধিবেশন বিকালের পরিবর্তে ভারতের মতো সকালে শুরু করা। এতে করে সংবাদ কর্মীদের বাজেট রিপোর্টিং করা সহজ হবে। এছাড়াও রাজস্ব বোর্ড থেকে বিভিন্ন সময়ে কর ছাড় দিয়ে জারি করা এসআরওতে কর ছাড়ের কারণ এবং ক্ষতির পরিমাণ উল্লেখ করার কথা বলা হয়। করদাতাদের বিরোধ নিষ্পত্তি বা মামলা জট কমানোর জন্য বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি করা। প্রত্যক্ষ কর আদায়ে সংস্কার আনা। করদাতাদের সুবিধার্থে কর সেবা সহজীকরণ, এনবিআরের সক্ষমতা বাড়ানো, কর সচেতনতা তৈরি বা কর প্রদানে সচেতনতা বাড়াতে এসএমএসের মাধ্যমে প্রচারণা চালানো, ভ্যাট আদায়ে আরও স্বচ্ছতা আনা, ইআরএফ সদস্যদের জন্য ঢাকার বাইরে বিভিন্ন কাস্টম হাউস, আয়কর ও ভ্যাট অফিস পরিদর্শনের সুযোগ করে দেয়া। এছাড়াও রাজস্ব বোর্ডের ওয়েবসাইট আপডেট করার দাবি জানানো হয় ইআরএফের পক্ষ থেকে।
প্রাক-বাজেট আলোচনায় এনবিআরের সদস্য ফিরোজ শাহ আলম, কানন কুমার রায়, ইআরএফ সভাপতি সাইফ ইসলাম দিলাল, সাধারণ সম্পাদক রাশেদুল ইসলামসহ সংগঠনের অন্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।