এই গরম, এই তাপদাহ, প্রখর রোদ পড়া, হিটস্ট্রোক যা কিছু আছে তার চেয়ে অবিরত সংখ্যায় প্রবল সেই জাহান্নাম থেকে আমরা আশ্রয় চাই। হে আমার প্রতিপালক! আমি এই গরমে ভীত। আমাকে তাদের দলভুক্ত হওয়া থেকে আশ্রয় দিন আপনার কাছে, যারা এই গরমের তীব্রতাকে নিয়ে উপহাস করে
সারা দেশ তীব্র তাপদাহে জ্বলছে। গরমে খেটে খাওয়া মানুষের কষ্টের পরিমাণটা সবচেয়ে বেশি। এমন গরমের মৌসুমে আমরা এ বছর স্বাগত জানাতে যাচ্ছি পবিত্র মাহে রমজানকে। রমজানে আছে আমাদের জন্য আত্মিক শান্তি ও আল্লাহর অফুরন্ত রহমত। শীতের মৌসুমেও রোজা রাখা কষ্টকর। কিন্তু যাদের অন্তর আল্লাহর মহব্বতে পূর্ণ তারা রোজা ও রমজানকে মহব্বতের পরীক্ষা হিসেবেই নেয়। মনে হচ্ছে এ বছর এই পরীক্ষা হবে অনেক কঠিন। আশা করি কৃতকার্যতার ফলও হবে প্রাণ জুড়ানো। গ্রীষ্মের তাপদাহ আমাদের সামনে জাহান্নামের শাস্তির চিত্র জীবন্তভাবে তুরে ধরতে পারে, যদি আমরা আমাদের উপলব্ধিকে কাজে লাগাই।
আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, জাহান্নাম আল্লাহর কাছে শ্বাস-প্রশ্বাসের অনুমতি চায় এই বলে যে, তার দেহের একাংশ অপরাংশকে গ্রাস করে নিচ্ছে। আল্লাহ একে দুবার এর অনুমতি দেন।
একবার গরমে অন্যবার শীতে। ফলত শীতে শ্বাস গ্রহণ তীব্র শীতের আর গরমে নিঃশ্বাস ত্যাগ প্রচ- গরমের সৃষ্টি করে। (বোখারি)।
রাসুল (সা.) আরও বলছেন, ‘তীব্র গরম জাহান্নামের প্রবল ক্ষিপ্র নিঃশ্বাস থেকে উদ্ভূত।’ (বোখারি ও মুসলিম)।
আমরা তীব্র গরমের মধ্য দিয়ে পার হচ্ছি। গরম নিয়ে উপহাস করছি। অথচ আমরা কিন্তু ভুলে যাচ্ছি এই গরম আমাদের জাহান্নামকে স্মরণ করাচ্ছে।
আমরা এতটা বেপরোয়া হচ্ছি যে, খোদ জাহান্নামের নিঃশ্বাস যখন আমাদের ঘাড়ে এসে পড়ছে তখনও আমরা গোনাহের ব্যাপারে ভাবছি না। যেন জাহান্নামের ভয় আমাদের অন্তর থেকে উঠে গেছে। অথচ পূর্ববর্তী বুজুর্গদের অবস্থা দেখুন।
ইসমাইল ইবনে যাকারিয়্যা (রহ.) বর্ণনা করেন তার প্রতিবেশী হাবিব ইবনে মুহাম্মাদ (রহ.) এর ঘর থেকে প্রতিদিন কান্নার আওয়াজ বের হতো। তিনি তার স্ত্রীর কাছে খোঁজ নিতে গেলেন। জানতে চাইলেন, কী ব্যাপার?
তার স্ত্রী জানালেন, আল্লাহর কসম প্রতি সকালে ও সন্ধ্যায় তিনি আশঙ্কা করেন, সেদিনকার সেই সকাল কিংবা সন্ধ্যাটাই তার জীবনের শেষ সকাল কিংবা সন্ধ্যা। তাই তিনি মৃত্যুর পর জাহান্নামের ভয়ে এত কাঁদেন।
আর এই গরম তো জাহান্নামের ছোঁয়া। তাই এ সময়ে আমাদের আরও সাবধানতা কাম্য। ইবাদাত হোক আরও বেশি। রোজা, নামাজ, সদকা ও তওবার মাধ্যমে।
আলী (রা.) বলতেন, গ্রীষ্মের রোজা তার সবচেয়ে প্রিয় আমল। আর তা একারণে যে, রোজা এমন জিনিস যে জাহান্নাম থেকে মানুষকে তা দূরে রাখে।
আবু সায়িদ খুদরি (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুল (সা.) বলছেন, ‘যে ব্যক্তি রোজা রাখে, জাহান্নাম তার থেকে ৭০ বছরের দূরত্বে যায়।’ (নাসাঈ)।
আদি বিন হাতিম (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) আরও বলেছেন, ‘তোমরা নিজেদের জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচাও যদি একটা খেজুরের অর্ধেক দান করেও হয়।’ অর্থাৎ সদকা করুন। যত অল্পই হোক।
এই গরমে, জাহান্নামের তপ্ত হাওয়ায় নিজের গোনাহকে স্মরণ করুন। কোনো পরিহাস করার নয়, এটা কম্পিত হওয়ার সময়। রবের কাছে জাহান্নাম থেকে পানাহ চাওয়ার সময়।
আরেকটা ব্যাপার, গরমে শরীর ঘামে। গা থেকে দুর্গন্ধ বেরোয়। এ থেকে নিজেকে হেফাজত করুন। মদিনার গরিব সাহাবিদের অনেকেই গরমেও উলেন জামা পরতেন। এই জামা পশমি হওয়ায় মজবুত ছিল। ধোয়াও যেত কম। একদিন তারা নামাজ আদায় করছিলেন।
গরমের দিন হওয়ায় তাদের গা থেকে গন্ধ বেরুচ্ছিল। রাসুল (সা.) উপস্থিতদের উদ্দেশে বললেন, ‘এইদিন তোমরা গোসল করো, আর নিজেদের কাছে থাকা সবচেয়ে ভালো সুগন্ধি ব্যবহার করো।’ এই হাদিস ইবনে আব্বাস থেকে ইকরামা বর্ণনা করেন।
এখানে কয়েকটা ব্যাপার আছে যেগুলো আমরা তো করেই থাকি। শুধু নিয়ত বদলালেই ওতে সুন্নতের সওয়াব মেলে।
১. গোসল করব, আর নিয়ত করব। আহ! আমার রাসুল (সা.) গোসল করতে বলেছেন।
২. নিজেদের পরিধেয় জামা ধোব, সুন্নতের নিয়ত করব।
৩. সুগন্ধি ব্যবহার করব। রাসুল (সা.) ব্যবহার করতেন, তাই তা ব্যবহার সুন্নত।
৪. আবার গরমে তিনি সবচেয়ে ভালো সুগন্ধিটা ব্যবহার করতে বলেছেন। তাই নিজের কাছে থাকা সবচেয়ে ভালো আতর, সেন্ট, বডি স্প্রে বা যে কোনো পারফিউমারি হোক ব্যবহার করব।
এভাবে কিন্তু নিতান্ত সহজে একাধিক সুন্নত আদায়ের সুযোগে হবে। একটু কোশেশ আমাদের বাড়তি সওয়াব এনে দেবে। নিজেদেরও আরও সুন্দর করে তুলবে।
এই গরম হোক তওবার মাধ্যম। জাহান্নাম থেকে জান্নাতের দিকে প্রত্যাবর্তনের ভিত্তি। আল্লাহ আমাদের জাহান্নাম থেকে আশ্রয় চাইতে বলেছেন। সে চাওয়াকে মোমিনের বৈশিষ্ট্য হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
ও আমার রব, জাহান্নামের শাস্তি থেকে আমাদের পরিত্রাণ দাও। নিশ্চয়ই এর শাস্তি সবচেয়ে যন্ত্রণাদায়ক।
এই গরম, এই তাপদাহ, প্রখর রোদ পড়া, হিটস্ট্রোক যা কিছু আছে তার চেয়ে অবিরত সংখ্যায় প্রবল সেই জাহান্নাম থেকে আমরা আশ্রয় চাই। হে আমার প্রতিপালক আমি এই গরমে ভীত। আমাকে তাদের দলভুক্ত হওয়া থেকে আশ্রয় দিন আপনার কাছে, যারা এই গরমের তীব্রতাকে নিয়ে উপহাস করে।