আজকের পত্রিকাআপনি দেখছেন ৩-০৫-২০১৯ তারিখে পত্রিকা

জামিন জালিয়াতি

মাদক ব্যবাসায়ীদের আইনজীবী গ্রেপ্তার

রাজশাহী ব্যুরো
| নগর মহানগর

মাদকের মামলায় হাইকোর্টে জামিন জালিয়াতির ঘটনায় করা একটি মামলায় রাজশাহী থেকে এক আইনজীবীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। রাজধানীর শাহবাগ থানা পুলিশ বৃহস্পতিবার ভোরে রাজশাহীর গোদাগাড়ী পৌরসভার মহিষালবাড়ি মহল্লা বাড়ি থেকে সালাহউদ্দিন বিশ্বাস নামে ওই আইনজীবীকে গ্রেপ্তার করে। এরপর তাকে ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হয়। অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া শাহবাগ থানার এসআই অমল কৃষ্ণ দে গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, মামলার বাদী সুপ্রিমকোর্টের রেজিস্ট্রারের দপ্তরের সুপারিনটেনডেন্ট মজিবর রহমান। মার্চে মামলাটি করা হয়।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ২০১৬ সালের ১৭ অক্টোবর গোদাগাড়ী উপজেলার আঁচুয়াভাটা গ্রামের আফজাল হোসেনের ছেলে আশরাফুল ইসলাম ওরফে বাবু ৫৫০ গ্রাম হেরোইনসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ধরা পড়েন। এরপর রাজশাহীর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে তার কয়েক দফা জামিনের আবেদন করা হলেও নাকচ হয়। এ অবস্থায় হাইকোর্টে তার জামিন চাওয়া হয়। জামিন পেতে আশরাফুলের কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া হেরোইনের পরিমাণ ৫৫০ গ্রামের পরিবর্তে ৪৮ গ্রাম উল্লেখ করা হয়।
রাজশাহীর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী এন্তাজুল হক বাবু জানান, ২০১৮ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ আসামি আশরাফুলের অন্তর্বর্তীকালীন জামিন মঞ্জুর করেন। পরবর্তী সময়ে আইনজীবী সালাহউদ্দিন বিশ্বাস রাজশাহীর বিচারিক আদালতে আশরাফুলের মুক্তির জন্য বেলবন্ড দাখিল করেন। তখনই জামিন জালিয়াতির বিষয়টি ধরা পড়ে। এরপর আসামির জামিন বাতিল হয়। পরে আশরাফুল আর জামিন পাননি। সম্প্রতি তার যাবজ্জীবন কারাদ- হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহীর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল জামিন জালিয়াতির বিষয়টি জানিয়ে ২০১৮ সালের ১৯ মার্চ হাইকোর্টের জামিন আদেশটি সুপ্রিমকোর্টের রেজিস্ট্রারের কাছে পাঠায়। পরে ২৭ মার্চ রেজিস্ট্রার জেনারেলের কার্যালয় জামিন আদেশ ও মামলার নথিপত্র আদালতে দাখিল করেন। সেদিন সংশ্লিষ্ট আদালতের আইন কর্মকর্তা আসামির জামিন বাতিল ও জামিন জালিয়াতির ঘটনায় অন্য কারা জড়িত তা পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডির) মাধ্যমে তদন্ত করার আবেদন করেন।
এ সময় হাইকোর্ট আসামির আইনজীবী রিফাত জাহানের কাছে জানতে চান, মামলাটি তিনি কীভাবে পেয়েছেন। হলফনামা আকারে বিষয়টি আদালতে দাখিল করতে বলা হয়। রিফাত জাহান আদালতে দাখিল করা তার হলফনামায় বলেছেন, তিনি তার জ্যেষ্ঠ আইনজীবী শেখ আতিয়ার রহমানের কথা মতো আসামি আশরাফুলের জামিন আবেদনে আবেদনকারী আইনজীবী হয়েছিলেন। আইনজীবী শেখ আতিয়ার রহমান মামলাটি ঢাকা জজ আদালতের আইনজীবী শিউলী আক্তারের মাধ্যমে পেয়েছেন। 
এ জামিন জালিয়াতির ঘটনা তদন্ত করতে বিচারপতি শেখ আবদুল আউয়াল ও বিচারপতি মো. খসরুজ্জামানের হাইকোর্ট বেঞ্চ সিআইডিকে নির্দেশ দেন। সিআইডি দীর্ঘ সময় ধরে বিষয়টির তদন্ত করে সুপ্রিমকোর্টের রেজিস্ট্রারের দপ্তরে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করে। এ প্রতিবেদনসহ ৯ মার্চ শাহবাগ থানায় মামলা করা হয়। এ মামলার অন্য আসামিদের নাম না জানালেও পুলিশ জানিয়েছে, রাজশাহীর আইনজীবী সালাহউদ্দিন বিশ্বাসসহ আরও আসামি আছেন। সালাহউদ্দিন বিশ্বাসকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আইনজীবী সালাহউদ্দিন বিশ্বাস যেসব মামলা নিয়ে লড়েন তার সিংহভাগই মাদক সংক্রান্ত। হেরোইনের নমুনার রাসায়নিক পরীক্ষার প্রতিবেদন পাল্টানো চক্রের সঙ্গেও জড়িত তিনি। পুলিশের এক প্রতিবেদনে এ বিষয়টি উঠে এসেছে। তার কারসাজিতে নমুনা পরীক্ষার সময় জব্দকৃত বস্তু হেরোইন নয়, এমন প্রতিবেদন ঢাকা থেকে আসে বলে জানতে পেরেছে পুলিশ। এর ফলে আসামির পক্ষে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিতে বাধ্য হয় পুলিশ। এতে আসামি অভিযোগ থেকে অব্যাহতি পান।