মাদ্রাসা ও স্কুলছাত্রীসহ তিন জেলায় চারজন ধর্ষণের শিকার হয়েছে। এর মধ্যে শেরপুরের শ্রীবরদীর শংকরঘোষ গ্রামে অটোরিকশাচালকের বিরুদ্ধে এক মাদ্রাসাছাত্রীকে (১২) ধর্ষণের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এদিকে নরসিংদী পলাশ উপজেলায় বিস্কুটের লোভ দেখিয়ে ৬ বছরের এক শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগে প্রান্ত দাস (২০) নামে এক যুবককে আটক করেছে পুলিশ। তাছাড়া বরিশালের গৌরনদীতে জিলাপি খাওয়ানোর প্রলোভন দেখিয়ে প্রথম শ্রেণীর ছাত্রীকে (৯) ধর্ষণ করা হয়েছে। আর হিজলা উপজেলায় ব্র্যাক মানবাধিকার ও আইনি সহায়তা কেন্দ্রের এক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ করেছেন এক নারী (২৬)। তিনি বুধবার রাতে হিজলা থানায় লিখিত অভিযোগ দেন। অন্যদিকে যশোরের শার্শায় মাদ্রাসাছাত্রীকে যৌন হয়রানির অভিযোগে ওই মাদ্রাসার অধ্যক্ষ, এক শিক্ষক, অফিস সহকারী ও ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্যকে আটক করেছে পুলিশ। ব্যুরো ও প্রতিনিধিদের খবরÑ
শ্রীবরদী (শেরপুর) : পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, ধর্ষণের শিকার মাদ্রাসাছাত্রীটি শংকরঘোষ এ জুব্বার আলী দাখিল মাদ্রাসার ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী। তার বাবা দিনমজুর। বুধবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ওই ছাত্রী তার নিজ বাড়িতে কাপড় ধোয়ার সময় প্রতিবেশী অটোরিকশাচালক উজ্জল ওই বাড়িতে যায়। এ সময় বাড়িতে লোকজন না থাকায় সে ছাত্রীর মুখ চেপে ধরে তাকে একটি ঘরে নিয়ে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে। এ সময় ওই ছাত্রীর ডাকচিৎকারে বাড়ির আশপাশের লোকজন ঘটনাস্থলে আসে। এ সময় উজ্জ্বল ঘটনাস্থল থেকে কৌশলে পালিয়ে যায়। পরে স্থানীয়রা রক্তাক্ত অবস্থায় ছাত্রীটিকে শ্রীবরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। পরে কর্তব্যরত চিকিৎসকের পরামর্শক্রমে তাকে জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ওই ছাত্রীর মা ধর্ষকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন। শেরপুরের পুলিশ সুপার কাজী আশরাফুল আজীম জানান, এ ব্যাপারে ভিকটিমের পরিবার শ্রীবরদী থানায় ধর্ষণ মামলা দায়ের করেছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িত উজ্জলকে গ্রেপ্তারে পুলিশি অভিযান অব্যাহত আছে।
নরসিংদী : পুলিশ ও ধর্ষিত শিশুটির পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মঙ্গলবার সন্ধ্যার দিকে বাড়ির পাশেই খেলা করছিল শিশুটি। এ সময় প্রতিবেশী প্রান্ত দাস শিশুটিকে বিস্কুট খাওয়ানোর লোভ দেখিয়ে তার ঘরে নিয়ে গিয়ে শিশুটির মুখ চেপে ধরে ধর্ষণ করে। পরে শিশুটি রক্তাক্ত অবস্থায় বাড়ি এসে ব্যথায় চিৎকার শুরু করে এবং ঘটনাটি তার মাকে জানায়। পরে ভুক্তভোগী শিশুটির পরিবার স্থানীয় ইউপি সদস্যকে বিষয়টি অবগত করলে ইউপি সদস্য এলাকার লোকজন নিয়ে অভিযুক্ত প্রান্ত দাসকে আটক করে থানা পুলিশকে খবর দেয়। এ ব্যাপারে পলাশ থানার ওসি (তদন্ত) গোলাম মোস্তফা জানান, অভিযুক্ত প্রান্ত দাসকে আটক করা হয়েছে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী ওই শিশুটির মা বাদী হয়ে পলাশ থানায় একটি মামলা করেছেন।
বরিশাল : ধর্ষণে অভিযুক্ত ব্র্যাক কর্মকর্তা হলেন হিজলা উপজেলা ব্র্যাক মানবাধিকার ও আইনি সহায়তা কেন্দ্রের পরামর্শ কর্মকর্তা (পিও) মো. মিলন। অভিযোগকারী নারী একই প্রতিষ্ঠানে পরিচ্ছন্ন কর্মীর কাজ করতেন। অভিযোগে ওই নারী উল্লেখ করেন, স্বামীর সঙ্গে বিচ্ছেদের পর মিলনের সহায়তায় তিনি উপজেলা ব্র্যাক মানবাধিকার ও আইনি সহায়তা কেন্দ্রে পরিচ্ছন্ন কর্মীর কাজ পান। পরে চাকরিচ্যুতির হুমকি দিয়ে ব্র্র্যাক অফিসের একটি কক্ষে মিলন বিভিন্ন সময়ে একাধিকবার তাকে ধর্ষণ করেন। এ ঘটনার প্রতিবাদ করলে মিলন তাকে চাকরি থেকে ছাঁটাই করেন। তখন মিলনের বিরুদ্ধে মামলা করার জন্য থানা, সার্কেল ও জেলা পুলিশ সুপার অফিসে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেন ওই নারী। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ২৮ এপ্রিল বিকালে মিলন উপজেলা বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন এলাকায় তাকে ফোনে ডেকে নেন। সেখানে মিলনের উপস্থিতিতে স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী লোক ওই নারীকে মারধর করেছে। এরপর তিন বখাটের হাতে তুলে দেওয়া হলে তারা পাশের বিলের মধ্যে নিয়ে নারীকে পালাক্রমে ধর্ষণ করে। ওই নারী বলেন, কিছুটা সুস্থ হয়ে বিষয়টি পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে অভিযোগ করলে হিজলা থানার ওসিকে কার্যকরী ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য নির্দেশ দেন।
এদিকে গৌরনদী উপজেলার কটকস্থল গ্রামে জিলাপি খাওয়ানোর প্রলোভন দেখিয়ে প্রথম শ্রেণির এক স্কুলছাত্রীকে (৯) ধর্ষণের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ অভিযোগ জানিয়ে ছাত্রীটির মা বুধবার বিকালে গৌরনদী থানায় মামলা করেছেন। তার আগেই আত্মগোপন করেছে অভিযুক্ত আলী বেপারী।
স্থানীয়রা জানান, গৃহকর্মীর কাজের জন্য ওই ছাত্রীর মাকে দিনের বেশিরভাগ সময় বাড়ির বাইরে থাকতে হয়। এ সুযোগে প্রতিবেশী দুই সন্তানের জনক গাছ ব্যবসায়ী আলী বেপারী শিশুটিকে ধর্ষণ করে। স্থানীয়রা আরও জানান, মঙ্গলবার শিশুটির মা কয়েকজন স্বজনকে সঙ্গে নিয়ে বিচার চাইতে আলী বেপারীর বাড়িতে যান। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে আলী বেপারী ঘটনা সাজানো দাবি করে উল্টো শিশুটির মাকে নানা হুমকি দেন। বিষয়টি নিয়ে বুধবার সকালে এলাকার গণ্যমান্য লোকজনের শালিস বসার কথা ছিল। তার আগে মঙ্গলবার রাতেই আলী বেপারী এলাকা ছেড়ে আত্মগোপন করেন। গৌরনদী থানার ওসি গোলাম ছরোয়ার জানান, বুধবার বিকালে শিশুটির মায়ের অভিযোগ এজাহার হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে। অভিযুক্ত আলী বেপারীকে গ্রেপ্তারের প্রচেষ্টা চলছে।
বেনাপোল : শার্শার বাগআঁচড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের পরিদর্শক (তদন্ত) শুকদেব রায় বলেন, মাদ্রাসাছাত্রীকে যৌন হয়রানির অভিযোগে আটকরা হলেন বাগআঁচড়া সাতমাইল মহিলা আলিম মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মহসিন আলী, এবতেদায়ি শাখার সহকারী শিক্ষক শরিফুল ইসলাম, অফিস সহকারী জামাল উদ্দিন ও ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য ডা. নুরুল ইসলাম। এ ঘটনায় অভিযুক্ত শিক্ষক শরিফুলকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করেছে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ। তিনি আরও বলেন, শরিফুল নামের ওই শিক্ষক রোববার পঞ্চম শ্রেণির কক্ষে পাঠদানের সময় অন্যদের লিখতে দিয়ে মেয়েটিকে কাছে ডেকে তার স্পর্শকাতর স্থানে হাত দেয়। ছাত্রীটি এ ঘটনা মাদ্রাসার শিক্ষিকা শাহনাজ পারভিন ও বাড়ির স্বজনদের বলেন। বুধবার পরিবারের পক্ষে তার বাবা থানায় অভিযোগ করলে তাদের আটক করা হয়।