নানা নাটকীয়তার পর শপথ ও একাদশ জাতীয় সংসদে যোগ দেওয়া নিয়ে বিএনপি একাধিক দলীয় অবস্থানের মধ্য দিয়ে দলটির নেতৃত্বের যোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে বলে মনে করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। নির্বাচিত পাঁচজনের জাতীয় সংসদে যোগদান নিয়ে দলটির একাধিক সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়ে বিএনপির নেতৃত্বের অযোগ্যতা, সিদ্ধান্তহীনতা এবং দেউলিয়াত্বও প্রকাশ পেয়েছে বলে মনে করেন আওয়ামী লীগ নেতারা। দলটির নেতারা মনে করেন, নেতৃত্বের ভুলের কারণে বর্তমানে বিএনপি লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে বিলুপ্তির পথে অগ্রসর হচ্ছে; প্রকাশ্যে এসেছে নেতৃত্বে মতবিরোধ। তাদের মতে, রাজনৈতিক অপকৌশলের কারণে ভাঙনের জন্য অপেক্ষা করছে বিএনপি। দলটির ভবিষ্যৎ মুসলিম লীগের মতোই হতে যাচ্ছেÑ এমনটিও মনে করছেন শাসক দলের নেতারা।
আওয়ামী লীগের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা মনে করেন, জাতীয় সংসদে যোগ দেওয়া ও শপথ ইস্যুতে নির্বাচিত ছয়জন দলীয় প্রার্থীর জন্য তিন ধরনের সিদ্ধান্ত কার্যকর করেছে বিএনপি নেতারা। এসব সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়ে দলটির স্থায়ী কমিটি ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের মধ্যে মতপার্থক্য প্রকাশ্য রূপ পেয়েছে বলে মনে করেন আওয়ামী লীগ নেতারাসহ রাজনীতি সচেতন মানুষ। বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠক থেকে প্রথম শপথ নেওয়া দলীয় সংসদ সদস্য জাহিদুর রহমানকে দল থেকে বহিষ্কার করা ও সংসদে যোগ না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কিন্তু এরপরই দেখা গেল অন্য চার সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদ, আমিনুল ইসলাম, উকিল আবদুস সাত্তার ও মোশাররফ শপথ নেন। শপথ গ্রহণের পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় তারা জানান, তারা তারেক রহমানের নির্দেশে শপথ গ্রহণ করেছেন; কিন্তু দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের ক্ষেত্রে শপথ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। এ সিদ্ধান্ত শুধু আওয়ামী লীগকে নয়, রাজনীতিক সচেতন সবাইকে অবাক করেছে। এরই মধ্যে সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ না নেওয়ায় বগুড়া-৬ আসন থেকে নির্বাচিত মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের আসন শূন্য ঘোষণা করেছেন জাতীয় সংসদের স্পিকার।
মাথাছাড়া দলের যে অবস্থা হয়, বিএনপিরও একই অবস্থা হচ্ছে বলে মনে করেন আওয়ামী লীগের অন্যতম প্রেসিডিয়াম সদস্য ও ১৪ দলের মুখপাত্র মোহাম্মদ নাসিম। তিনি আলোকিত বাংলাদেশকে বলেন, ‘তাদের সবাই শপথ নিল; কিন্তু মির্জা ফখরুল কেন সংসদে গেলেন না, কেন তিনি শপথ নিলেন না? তাদের দলনেতা হিসেবে মির্জা ফখরুল সংসদে যোগ দিলে আরও বেশি গুরুত্ব পেত। এটি তাদের রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের আরেকটি ভুল।’ তিনি বগুড়া-৬ আসনের উপনির্বাচনে অংশ নিতে মির্জা ফখরুলের প্রতি আহ্বান জানান।
বিএনপির কৌশল নিয়ে প্রশ্ন তুলে আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেন, ‘বিএনপি নেতাদের কর্মকা- প্রমাণ করছে, তাদের মধ্যে বিভক্তি স্পষ্ট। দলটির ভাঙন এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। বিএনপি মহাসচিব এ ধরনের অপকৌশল অবলম্বন করে দলের ভাঙন ঠেকিয়ে রাখতে পারবেন না।’ তিনি বলেন, ‘মির্জা ফখরুল তার শপথ না নেওয়াকে রাজনৈতিক কৌশল বলে দাবি করেছেন। কিন্তু আমি বলব, এটি তার রাজনৈতিক কৌশল নয়, তাদের অপকৌশল। বিএনপির নির্বাচিত পাঁচ সংসদ সদস্য জাতীয় সংসদে যোগদান করেছেন। কিন্তু দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সংসদে যোগদান করেননি। এটাই প্রমাণ করে বিএনপির ভাঙন অনেকটাই নিশ্চিত।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগের এক কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, ‘আমাদের নেত্রী (শেখ হাসিনা) স্পষ্টভাবেই বলেছেন, আওয়ামী লীগ দল ভাঙার রাজনীতিতে বিশ^াস করে না।’ তিনি বলেন, বিএনপি ভাঙার জন্য আওয়ামী লীগের কিছু করার দরকার নেই। বিএনপি নেতারাই তাদের দল ভাঙার জন্য যথেষ্ট। সর্বশেষ সংসদে যোগ দেওয়া নিয়ে বিএনপি যা করেছে তাতে দেশের মানুষের কাছে দলটির নেতারা হাসির পাত্রে পরিণত হয়েছেন। তারেক রহমানের একক সিদ্ধান্তে যে বিএনপি চলে, দলটির মধ্যে যে কোনো গণতন্ত্রের চর্চা নেই, তা আরও একবার প্রমাণিত হয়েছে। তারা জাতীয় পার্টিকে হার মানিয়ে ফেলেছে। দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্যরা এখন কী সিদ্ধান্ত নেন, সেটাই হচ্ছে দেখার বিষয়।
বিএনপির রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নেই; দলটি বিলুপ্তির পথে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের আরেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান। তিনি বিএনপি স্থায়ী কমিটির সিদ্ধান্ত ও দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সিদ্ধান্তের মধ্যকার পার্থক্যের বিষয়টির দিকে ইঙ্গিত করে বলেন, ‘নেতৃত্বের দেউলিয়াত্ব, রাজনৈতিক সিদ্ধান্তহীনতা ও লক্ষ্যভ্রষ্টতার জন্য দলটির (বিএনপি) কোনো ভবিষ্যৎ নেই। বর্তমানে ভুল সিদ্ধান্তের কারণে দলটি বিলুপ্তির দিকে যাচ্ছে। আর নেতাদের এমন আচরণের কারণে দলটির তৃণমূলের নেতাকর্মীরাও আস্থাহীনতা, সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছেন। এ দলের আর কোনো ভবিষ্যৎ নেইÑ দলটির নেতাকর্মীরাও এটি বুঝে গেছেন।’
বিএনপির পরিণতি মুসলিম লীগের মতোই হতে যাচ্ছেÑ এমনটি মনে করেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম। তিনি বলেন, বিএনপি কোনো আদর্শিক রাজনৈতিক দল নয়, এটি একটি সুবিধাবাদীদের ক্লাব। সুবিধা পূরণ হলেই কেটে পড়ে। এজন্য এ দলের নেতাদের একেক জনের একেক রকম কথা। দিনে একজন এক কথা বললে রাতে আরেকজন আরেক কথা বলে। তারা যখন দেশ পরিচালনা করেছে তখনও এ অবস্থা ছিল। মানুষ আসলে বুঝত না কে দেশ চালাচ্ছে? খালেদা জিয়া না তারেক রহমান। এখনও সেই অবস্থাই আছে। তিনি বলেন, বিএনপি যে জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন একটি দল তা এরই মধ্যে প্রমাণিত হয়েছে। সিদ্ধান্তহীনতার কারণে দলটি এখন জনগণের কাছে খেলো হয়ে গেছে। যে দলের মধ্যে গণতান্ত্রিক আচরণ নেই, সেই দল দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করবে কীভাবে। তাদের ভবিষ্যৎ অন্ধকার। দলটি অন্ধকারের দিকে নিমজ্জিত হচ্ছে। তাদের অবস্থা মুসলিম লীগের মতোই হতে যাচ্ছে বলেও মনে করেন আওয়ামী লীগের এ কেন্দ্রীয় নেতা।