ঝড়ের আশঙ্কায় বৃহস্পতিবার কুয়াকাটা উপকূলে আশ্রয় নেয় মাছ ধরার ট্রলারগুলো ষ আলোকিত বাংলাদেশ
- প্রস্তুত সাড়ে ৩ হাজার আশ্রয়কেন্দ্র
- ৪-৫ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসের পূর্বাভাস
- আঘাত হানতে পারে আজ
- মংলা ও পায়রাকে ৭ ও চট্টগ্রামকে ৬ নম্বর বিপদ সংকেত
ধেয়ে আসছে অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় ফণী। বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট গভীর নিম্নচাপটি এক সপ্তাহ আগে ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিয়েছে। ধীরে ধীরে এগিয়ে এলেও গতকাল তার গতি বেড়ে গেছে। খুলনা ও তৎসংলগ্ন বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় আজ সকাল নাগাদ ফণীর অগ্রবর্তী অংশের প্রভাব শুরু হতে পারে। এটি আরও ঘণীভূত ও উত্তর বা উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে বিকাল নাগাদ ভারতের উড়িষ্যা উপকূল অতিক্রম করতে পারে। পরবর্তীতে উড়িষ্যা-পশ্চিমবঙ্গ উপকূল হয়ে শুক্রবার সন্ধ্যা নাগাদ খুলনা ও তৎসংলগ্ন বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল এলাকায় পৌঁছাতে পারে। বৃহস্পতিবার আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে দেওয়া আবহাওয়ার বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে এ সতর্ক বার্তা দেওয়া হয়েছে। এ কারণে পায়রা ও মংলা সমুদ্রবন্দরকে ৭ নম্বর বিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। আবহাওয়া বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, ফণীর আঘাত বেশ মারাত্মক হতে পারে। এর প্রভাবে জলোচ্ছ্বাসও হতে পারে। ডুবে যেতে পারে নিম্নাঞ্চল।
ঘূর্ণিঝড় ফণীর জন্য সারা দেশে ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। আঘাতের আশঙ্কায় ঢাকা নদীবন্দর সদরঘাট টার্মিনালসহ দেশের ৪১টি রুটের যাত্রীবাহী নৌযান চলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকে সিদ্ধান্ত, উপকূলীয় জেলাগুলোর ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলের মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে আনা হবে। ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত করার পাশাপাশি সাগর তীরের লোকজনকে সরিয়ে নিতে শুরু হয়েছে মাইকিং। মজুদ করা হচ্ছে শুকনো খাবার ও বিশুদ্ধ পানি।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, পশ্চিম মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় ফণী আরও উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে একই এলাকায় (১৭.২ ডিগ্রি উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৪.৮ ডিগ্রি পূর্ব দ্রাঘিমাংশ) অবস্থান করছে। এটি বৃহস্পতিবার বিকাল ৩টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৯৫৫ কিলোমিটার (কিলোমিটার) দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৯২৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, মংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৭৯০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্র বন্দর থেকে ৮১০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছিল।
বৃহস্পতিবার বিকালে আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে দেওয়া আবহাওয়ার বিশেষ বিজ্ঞপ্তি ক্রমিক নম্বর ৩০ (ত্রিশ) এ এসব সতর্ক বার্তা দেওয়া হয়েছে। খুলনা ও তৎসংলগ্ন বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় শুক্রবার সকাল নাগাদ অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় ফণীর অগ্রবর্তী অংশের প্রভাব শুরু হতে পারে।
ফণী আরও ঘণীভূত ও উত্তর বা উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে শুক্রবার বিকাল নাগাদ ভারতের উড়িষ্যা উপকূল অতিক্রম করতে পারে। পরবর্তীতে উড়িষ্যা-পশ্চিমবঙ্গ উপকূল হয়ে শুক্রবার সন্ধ্যা নাগাদ খুলনা ও তৎসংলগ্ন বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল এলাকায় পৌঁছতে পারে।
আবহাওয়ার বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৭৪ কিলোমিটারের (কিলোমিটার) মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ১৬০ কিলোমিটার যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ১৮০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের কাছে সাগর খুবই বিক্ষুব্ধ রয়েছে। মংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরসমূহকে ৭ (সাত) নম্বর বিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। উপকূলীয় জেলা ভোলা, বরগুনা, পটুয়াখালী, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলো ৭ নম্বর বিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে।
আবহাওয়ার বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরকে ৬ (ছয়) নম্বর বিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলো ৬ (ছয় ) নম্বর বিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে।
কক্সবাজার সমূদ্র বন্দরকে ৪ (চার) নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় এবং অমাবস্যার প্রভাবে উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, বরগুনা, ভোলা, পটুয়াখালী, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলোর নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৪ থেকে ৫ ফুট অধিক উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।
এদিকে ঘূর্ণিঝড় অতিক্রমকালে চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, বরিশাল, ভোলা, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা জেলা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলোয় ভারি থেকে অতি ভারি বর্ষণসহ ঘণ্টায় ৯০ থেকে ১১০ কিলোমিটার বেগে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান বলেছেন, উপকূলীয় জেলাগুলোয় মাইকিং করে জনগণকে সতর্ক করা হচ্ছে। জেলা প্রশাসকদের ২০০ মেট্রিক টন করে চাল পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি প্রত্যেক ডিসিকে ৫ লাখ করে টাকা নগদ দেওয়া আছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়েল সিনিয়র সচিব মো. শাহ কামাল বলেছেন, প্রবল ঘূর্ণিঝড় ফণী ঘণ্টায় ২৭ কিলোমিটার গতিতে ধেয়ে আসছে। এজন্য এরই মধ্যে আমরা মংলা এবং পায়রা বন্দরে বিশেষ করে বরিশাল ও খুলনা বিভাগের অর্ধেক এলাকায় ৭ নম্বর বিপদ সংকেত জারি করেছি। এরপরের সংকেতটি আসবে মহাবিপদ সংকেত। আমরা এখন মহাবিপদ সংকেতের সামনে দাঁড়িয়ে আছি।
বৃহস্পতিবার দুপুরে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে এসব কথা বলেন তিনি। ক্লাইমেট চেঞ্জ জার্নালিস্ট ফোরাম এ সভার আয়োজন করে। শাহ কামাল বলেন, সংকেতের স্তরগুলো হচ্ছে ১ থেকে ৪ পর্যন্ত হুঁশিয়ারি সংকেত। ৫, ৬ ও ৭ হচ্ছে বিপদ সংকেত। বিপদ সংকেতগুলো বাংলাদেশে হয় বন্দরকেন্দ্রিক। ৮, ৯ ও ১০ নম্বর হচ্ছে মহাবিপদ সংকেত। আমরা এখন মহাবিপদ সংকেতের সামনে এসেছি। এরই মধ্যে আমরা বিপর্যয় থেকে রক্ষার জন্য নির্দেশনা দিয়েছি। তিনি বলেন, আমাদের দেশে ৪৭ লাখ স্বেচ্ছাসেবক আছে। পৃথিবীর বহু দেশে এত লোকই নেই। এসব স্বেচ্ছাসেবক জীবন বাজি রেখে কাজ করে। আমরা একটি মানুষকেও হারাতে চাই না। এজন্য উপকূলীয় ১৯ জেলার সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীদের সব ধরনের ছুটি বাতিল করা হয়েছে।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান বলেছেন, কিছুক্ষণ আগে খবর পেয়েছিÑ বাংলাদেশ থেকে ৭০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় ফণী। ঘণ্টায় ২৭ কিলোমিটার গতিতে অগ্রসর হচ্ছে। বর্তমানে ঝড়ের গতিবেগ ১৮০ কিলোমিটার। তিনি আরও বলেন, খবর পেয়েছি ফণী উড়িষ্যা উপকূলে আঘাত হেনেছে। এরপর যদি পশ্চিমবঙ্গে আঘাত হানে, তাহলে দুর্বল হয়ে যাবে, তাতে বাংলাদেশের ক্ষয়ক্ষতির সম্ভাবনা কমে যাবে। যদি উত্তরে সরে যায় তাহলে বাংলাদেশের ক্ষয়ক্ষতি বাড়তে পারে। ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী বলেন, সরকারের যে প্রস্তুতি, তাতে প্রাণহানির আশঙ্কা নেই। ৪ হাজার ৭১টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত আছে। ১৯টি জেলায় ৫ লাখ করে টাকা, ২০০ টন চাল এবং ২ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার পাঠানো হয়েছে। আজ জুমার নামাজের পর বিশেষ দোয়ার আহ্বান জানিয়েছেন প্রতিমন্ত্রী।
শুক্রবার সন্ধ্যায় আঘাত হানতে পারে ফণী : ঘূর্ণিঝড় ফণী শুক্রবার সন্ধ্যায় বাংলাদেশে আঘাত হানতে পারে ধরে নিয়ে ওই দিন সকাল ১০টা থেকে উপকূলীয় জেলাগুলোর ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলের মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে আনা হবে। সকালে শুরু করে সন্ধ্যার আগেই ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে আনার কার্যক্রম শেষ করা হবে বলে বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে এক আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে। সভার শুরুতে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ সচিব শাহ কামাল এ সিদ্ধান্ত জানিয়ে বলেন, লোকজনকে আশ্রয়কেন্দ্রে আনার পর সেখানে (ওইসব অঞ্চলে) পাহারা রাখতে হবে, শেল্টারগুলোও পাহারায় রাখতে হবে। ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ১৯ উপকূলীয় জেলায় ৫৬ হাজার স্বেচ্ছাসেবককে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। নির্দেশনার সঙ্গে সঙ্গে তারা মানুষকে ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে আসবে। উপকূলীয় ১৯ জেলায় ৩ হাজার ৮৬৮টি আশ্রয়কেন্দ্র রয়েছে। বেশিরভাগ আশ্রয়কেন্দ্রই প্রস্তুত রাখা হয়েছে বলে সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
এদিকে বিকালে ঘূর্ণিঝড় ফণী ভারতের উড়িষ্যা উপকূলে আঘাত হানার পর বাংলাদেশে আসতে পারে ধরে নিয়ে দেশের ৩ হাজার ৫০০ আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রেখেছে সরকার। নির্দেশনা পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে স্বেচ্ছাসেবকরা এসব আশ্রয়কেন্দ্রে মানুষ সরিয়ে নেওয়া শুরু করবে বলে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব উৎপল কুমার দাস জানিয়েছেন। বৃহস্পতিবার দুপুরে তিনি দেশের ১৯ উপকূলীয় জেলায় ৫৬ হাজার স্বেচ্ছাসেবককে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। প্রয়োজন হলে নির্দেশনার সঙ্গে সঙ্গে তারা উপকূলীয় নিচু এলাকার মানুষ ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে যাবে।
তবে এখনও উপকূলবর্তী বাসিন্দাদের আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়ার মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়নি মন্তব্য করে তিনি বলেন, আশ্রয়কেন্দ্রে আনার প্রয়োজন হলে সব কিছুই প্রস্তুত আছে। জেলা প্রশাসক এবং ইউএনওদের সঙ্গে আমরা সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছি। ১৯টি উপকূলীয় জেলায় অ্যালার্ট দেওয়া হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় ফণী বাংলাদেশ উপকূলের ৭০০ কিলোমিটারের মধ্যে পৌঁছে যাওয়ায় মংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরকে ৭ নম্বর এবং চট্টগ্রাম বন্দরকে ৬ নম্বর বিপদ সংকেত দেখাতে বলেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। আবহাওয়ার বিশেষ বুলেটিনে বলা হয়েছে ভোলা, বরগুনা, পটুয়াখালী, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা জেলা এবং সংলগ্ন দ্বীপ ও চরগুলো ৭ নম্বর বিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে। আর চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর এবং নিকটবর্তী দ্বীপ ও চরগুলো ৬ থাকবে নম্বর বিপদ সংকেতের আওতায়। আবহাওয়ার পূর্বাভাস ঠিক থাকলে ভারতের উড়িষ্যা উপকূল অতিক্রম করে শুক্রবার সন্ধ্যায় বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় জেলাগুলোয় পৌঁছাতে পারে ফণী। তবে ঝড়ের অগ্রবর্তী অংশের প্রভাব বাংলাদেশের খুলনা অঞ্চলে দেখা দিতে পারে সকাল থেকেই।
ঘূর্ণিঝড় ফণী আঘাত হানতে পারে ধরে নিয়ে উপকূলীয় এলাকার প্রায় সব ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্মসূচি) মো. মোহসীন। মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা জানান, উপকূলীয় ১৯ জেলায় সব মিলিয়ে মোট ৩ হাজার ৮৬৮টি আশ্রয়কেন্দ্র রয়েছে। এসব আশ্রয়কেন্দ্রে কত মানুষকে আশ্রয় দেওয়া যাবে ধারণা দিতে না পারলেও ওই কর্মকর্তা বলেন, এসব আশ্রয়কেন্দ্র যথেষ্ট, তবে আরও কিছু আশ্রয়কেন্দ্রে থাকলে ভালো হতো। উপকূলীয় জেলাগুলোয় শুকনো খাবার, ওষুধ, পানির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে জানিয়ে অতিরিক্ত সচিব উৎপল জানান, যেসব জেলা আক্রান্ত হতে পারে; ওইসব জেলায় নতুন করে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে জানা গেছে, রেড ক্রিসেন্টের কন্ট্রোল রুমও খোলা হয়েছে। উপকূলীয় আর্মি স্টেশনগুলোয়ও ঢাকা থেকে মেসেজ পাঠানো হয়েছে। তারা প্রস্তুত রয়েছে বলে জানিয়েছেন।
সারা দেশে নৌযান চলাচল বন্ধ ঘোষণা : বাংলাদেশের উপকূলে শুক্রবার আঘাত হানতে পারে ঘূর্ণিঝড় ফণী। আঘাতের আশঙ্কায় ঢাকা নদীবন্দর সদরঘাট টার্মিনালসহ দেশের ৪১টি রুটের যাত্রীবাহী নৌযান চলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) থেকে এ সিদ্ধান্ত জানানো হয়েছে। নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগের ঢাকা নদীবন্দরের যুগ্ম পরিচালক আলমগীর কবির বলেন, ঘূর্ণিঝড় ফণীর আঘাতের আশঙ্কায় বিআইডব্লিউটিএ গতকাল ১০টার দিকে এক জরুরি সভায় বসে। বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যানের কমোডর এম মাহাবুবুল ইসলামের সভাপতিত্বে সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়Ñ ঘূর্ণিঝড় ফণীর আঘাতের আশঙ্কায় ঢাকা নদীবন্দর সদরঘাট টার্মিনালসহ সারা দেশের ৪১টি নৌপথের যাত্রীবাহী নৌযান বন্ধ থাকবে। তিনি বলেন, আবহাওয়া পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়া পর্যন্ত এ সিদ্ধান্ত বহাল থাকবে। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ঢাকা নদীবন্দর থেকে দক্ষিণাঞ্চলের ৪১টি নৌপথের যাত্রীবাহী নৌযান চলাচল বন্ধ রাখা হয়।
প্রাথমিক বিদ্যালয়ের স্থাপনা রক্ষার নির্দেশ : ঘূর্ণিঝড় ফণীর প্রভাবে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সব স্থাপনার ক্ষতি মোকাবিলায় প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। বৃহস্পতিবার এ বিষয়ে আদেশ জারি করা হয়। মন্ত্রণালয়ের উপ সচিব নাজমা শেখ স্বাক্ষরিত আদেশে বলা হয় বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ফণী শিগগিরই আঘাত হানতে পারে। এমতাবস্থায় নিজ নিজ অফিস ও প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ সব ধরনের স্থাপনার সম্ভাব্য ক্ষতি পরিহারের জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ও সর্বোচ্চ সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য অনুরোধ করা হলো। এদিকে, ঘূর্ণিঝড় ফণীর কারণে চলমান এইচএসসি পরীক্ষার সূচিতে পরিবর্তন আনা হয়েছে। ৪ মে’র নির্ধারিত পরীক্ষা নেওয়া হবে ১৪ মে।
নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের কন্ট্রোল রুম : ঘূর্ণিঝড় ফণীর বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয় একটি কন্ট্রোল রুম খুলেছে। সচিবালয়ের নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের কন্ট্রোল রুম নম্বর ৮০১/ক এবং টেলিফোন নম্বর ০২-৯৫৪৬০৭২। ঘূর্ণিঝড় ফণীর সম্ভাব্য দুর্যোগ মোকাবিলায় জরুরি তথ্য ও নির্দেশনা আদান প্রদানের জন্য এ কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয় বৃহস্পতিবার এ সংক্রান্ত একটি অফিস আদেশ জারি করেছে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র তথ্য ও জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর আলম খান। ৩ ও ৪ মে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় এবং এর অধীনস্থ সংশ্লিষ্ট দপ্তর খোলা থাকবে। নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয় বৃহস্পতিবার এ সংক্রান্ত দুটি অফিস আদেশ জারি করেছে বলেও জানানো হয়। আরও বলা হয়, ঘূর্ণিঝড় ফণীর আশঙ্কা শেষ না হওয়া পর্যন্ত সব নৌযান বন্দরে অবস্থান নিশ্চিত করতে হবে। বন্দরে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছুটি বাতিল করে নিজ নিজ কর্মস্থলে অবস্থান নিশ্চিত করতে হবে। ঘূর্ণিঝড় ফণীর সম্ভাব্য দুর্যোগ মোকাবিলায় জরুরি তথ্য ও নির্দেশনা আদান-প্রদানের জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তর এবং সংস্থায় কন্ট্রোল রুম খোলা নিশ্চিত করতে হবে।
সরিয়ে নিতে মাইকিং ও ব্যাপক প্রস্তুতি : অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় ফণী এগিয়ে আসায় দেশের উপকূলীয় ১৯ জেলায় দুর্যোগ মোকাবিলায় ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের ঝুঁকিতে থাকা এলাকার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সাপ্তাহিক ছুটি এবং অন্যান্য ছুটি বাতিল করে তাদের কর্মস্থলে উপস্থিত থাকতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি।