আজকের পত্রিকাআপনি দেখছেন ৩-০৫-২০১৯ তারিখে পত্রিকা

শিবচরে স্থাপনা গড়ে টাকা আদায়ের পাঁয়তারা

পদ্মা সেতু রেললাইন প্রকল্প সম্প্রসারণ

মো. আবু জাফর, শিবচর (মাদারীপুর)
| দেশ

পদ্মা সেতু রেললাইন সম্প্রসারণ প্রকল্পের নির্ধারিত মাদারীপুর জেলার শিবচরের কাঁঠালবাড়িয়া এলাকায় গড়ে তোলা স্থাপনা- আলোকিত বাংলাদেশ

দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের বহুল প্রত্যাশিত পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে ঢাকা-ভাঙ্গা-যশোর রেল সড়ক নির্মাণের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। নতুন রেললাইন সম্প্রসারণে জমি অধিগ্রহণের সম্ভাবনায় মাদারীপুরের শিবচরসহ সংশ্লিষ্ট এলাকায় অসাধু চক্র রাতারাতি গড়ে তুলছে ঘরবাড়ি ও দোকানপাটসহ বিভিন্ন স্থাপনা।
একাধিক সূত্রে জানা যায়, পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকা-মুন্সীগঞ্জ, শরীয়তপুরের জাজিরা, মাদারীপুরের শিবচর, ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত রেললাইন নির্মাণের সম্ভাব্যতা সমীক্ষা শেষে ২০১৬ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি থেকে জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া শুরু হয়ে এখন প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে। গৃহীত প্রকল্পে প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হবে সিঙ্গেল রেললাইন। কেরানীগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর, শিবচরে দুটি, যশোর ও ভাঙ্গায় একটি করে রেলস্টেশন নির্মাণ করা হবে। এছাড়া ৩৪টি সেতু, ৯৬টি বক্স কালভার্ট এবং আন্ডারপাস থাকবে এ প্রকল্পে। বুড়িগঙ্গা ও ধলেশ^রী নদীতে নির্মিত হবে ২১.৮৪ কিলোমিটার উড়াল সংযোগ সেতু। প্রথম পর্যায়ে ভাঙ্গা পর্যন্ত ৮২ কিলোমিটার প্রথম ফেইজে অধিগ্রহণ শেষে ক্ষতিপূরণ প্রদানও শেষ পর্যায়ে রয়েছে। মোট ৩৫৮.৪১ হেক্টর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। রেললাইন নির্মাণে উঁচু জমিতে ১২০ ফুট ও নিচু জমিতে ১৫০ ফুট প্রশস্ততায় জমি অধিগ্রহণ করা হয়। প্রথমে ধীরগতি থাকলেও গত এক বছরে বেড়েছে কাজের গতি। এরই মধ্যে দুই মাস আগে রেললাইন সম্প্রসারণের লক্ষ্যে প্রকল্প এলাকায় মার্কিং করা হয়। এরপরই শিবচর অংশসহ সংলগ্ন এলাকায় প্রকল্পের বর্ধিত অংশজুড়ে সরকারের কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিতে গড়ে উঠছে শত শত অবৈধ ঘরবাড়ি ও দোকানপাট। তবে কতটুকু জায়গা সম্প্রসারণ হবে, প্রশাসন এখনও নিশ্চিত নয়। শিবচরের মাদবরচর মোল্লাকান্দি, পোদ্দারচর, কাঁঠালবাড়ী, জাজিরার বিভিন্ন গ্রামসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, ফসজি জমির মাঠে গড়ে উঠেছে বসতঘর, লাগানো হয়েছে গাছ। স্থানীয়দের সবাই জানে এ দুর্নীতির কথা। তাদের অভিযোগ, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যোগসাজশেই নির্মিত হচ্ছে এসব স্থাপনা। স্থানীয় আবু কালাম বলেন, পদ্মা সেতুর রেললাইন বড় করতে নাকি আরও জমি নেবে। এ কথা শোনার পর এলাকায় ফসলি জমিতে ঘরবাড়ি তোলার হিড়িক পড়ে গেছে। বেশিরভাগ ঘরে কোনো লোকজন থাকে না। কিছু ঘরে নদীভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত লোকজনকে এনে থাকতে দেওয়া হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা জয়নাল মিয়া বলেন, রেললাইনের জন্য যখন সরকারি লোকজন এ এলাকায় সীমানা পতাকা লাগিয়েছে, তখন থেকেই এখানে ঘরবাড়ি তুলছে একটি চক্র। স্থানীয়দের পাশাপাশি বিভিন্ন জায়গা থেকে লোকজন এসে জমির মালিকের সঙ্গে সরকারি বিলের টাকা ভাগাভাগির চুক্তি করে বড় বড় ঘর তুলছেন। মালেক মিয়া বলেন, সরকারি অফিসের লোক পরিচয় দিয়ে আমাদের ঘরবাড়ি তুলতে কইছে। সরকারি বিলের টাকার তিন ভাগের দুই ভাগ আমাদের দিয়ে এক ভাগ তারা নেবে বলেছে।
কাঁঠালবাড়ী ৯নং ওয়ার্ড সদস্য সাইদ বেপারী বলেন, এখানে রেললাইনের জন্য সরকার নতুন করে কিছু জায়গা অধিগ্রহণ করবে বলে দালাল চক্র খবর পেয়েছে। তারা এখন জমির মালিকদের সঙ্গে চুক্তি করে ঘরবাড়ি তুলছে। এতে সরকারের লোকসান হবে কোটি কোটি টাকা। এ বিষয়ে সরকারের কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।
মাদারীপুর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সজল নূর বলেন, রেললইন সংযোগ সড়ক সম্প্রসারণের জন্য আমরা নতুন করে বেশকিছু জায়গা অধিগ্রহণের কার্যক্রম হাতে নিয়েছি। আমরা বিভিন্নভাবে জানতে পেরেছি, কিছু অসাধু চক্র মুনাফা লাভের আশায় অধিগ্রহণের জন্য নির্ধারিত জায়গায় অবৈধভাবে ঘরবাড়িসহ বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করছে। এরই মধ্যে আমরা বেশকিছু অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করেছি। বাকি স্থাপনাও উচ্ছেদ করার কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছে। নতুন করে কেউ যেন স্থাপনা গড়ে তুলতে না পারে এ ব্যাপারে আমরা সচেষ্ট রয়েছি।
মাদারীপুর জেলা প্রশাসক ওয়াহিদুল ইসলাম বলেন, বর্তমানে মাদারীপুরে অনেকগুলো উন্নয়নমূলক কার্যক্রম চলছে। তার মধ্যে রেললাইন প্রকল্প অন্যতম। যখন একটি প্রকল্পের প্রস্তাব আসে, তখন আমাদের অফিস বা যে কোনো মাধ্যমে জমির মালিকরা তথ্যটি জানতে পারে। তখন অবৈধ ঘরবাড়ি, স্থাপনা তৈরির প্রবণতা শুরু হয়। তথ্য ফাঁসের বিষয়টি পুরোপুরি বন্ধ করা কখনও সম্ভব নয়। এলাকায় গিয়ে কার্যক্রম শুরু করলে স্থানীয়রা বিষয়টি স্বাভাবিকভাবেই জেনে যায়। আর তথ্য জানার অধিকারও তাদের আছে। তবে তথ্য পাওয়ার পর কেউ যেন অসদুপায় অবলম্বন করে সরকারি টাকা লোপাট করতে না পারেÑ এ ব্যাপারে আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করব।