যমুনা নদীতে বালু উত্তোলনের ফলে মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলায় আরিচা-জাফরগঞ্জ রাস্তার বেড়িবাঁধ এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, যে কোনো সময় নদীতে বিলীন হয়ে যেতে পারে এ বেড়িবাঁধটি। এমন হলে বন্ধ হয়ে যাবে অন্তত ২০ গ্রামের মানুষের চলাচল এবং বাড়িঘরসহ ব্যাপক ক্ষতি হবে। আলোকিত বাংলাদেশে প্রকাশ, সরকারিভাবে কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় স্বেচ্ছাশ্রমের মাধ্যমে বাঁধটির ভাঙন রোধে চেষ্টা করছেন স্থানীয়রা। স্থানীয়দের মতে, প্রতি বছরই বর্ষাকালে পানি বৃদ্ধির সময় শিবালয় উপজেলার আরিচা লঞ্চঘাট এলাকা থেকে তেওতা ইউনিয়নের নিহালপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পর্যন্ত ভাঙন দেখা দিত। ভাঙন রোধে সরকারিভাবে ৬ বছর আগে ৪৭ লাখ টাকা ব্যয়ে ১ হাজার ২০০ ফুট এ রাস্তার পাশে প্যালাসাইডিং তৈরি করা হয় এবং কংক্রিট ব্লক বসানো হয়। পরে সেখানে পাকা রাস্তা তৈরি করা হয়। কিন্তু বাঁধের পাশ থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের ফলে বাঁধের নিচের অংশে ভাঙন দেখা দেয়। সাম্প্রতিক সময়ে আসন্ন বর্ষাকে সামনে রেখে নদীতে পানি বেড়ে যাওয়ায় সে ভাঙন আরও বেশি করে দেখা দিয়েছে। প্রশাসন যমুনার ভাঙন রোধে বালু উত্তোলন বন্ধে এখনও কেন কার্যকর ভূমিকা পালন করছে না এবং বিগত বছরগুলোতে লাখ লাখ টাকা ব্যয় করেও কেন ভাঙন ঠেকানো গেল না, তা খতিয়ে দেখা দরকার। উল্লেখ্য, এমন অবস্থা যে শুধু মানিকগঞ্জের বেড়িবাঁধে তা নয়, দেশের অন্য অনেক বেড়িবাঁধই ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশে বেড়িবাঁধ নির্মাণ ও এর সংস্কার-পুনঃসংস্কারের বিষয়টি নতুন নয়। তবে উদ্বেগের বিষয়, বাঁধ নির্মাণ ও সংস্কারে বছরে হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় হলেও এসবের বেশিরভাগই দুর্বল ও ভঙ্গুর অবস্থায় থেকে যায়। ফলে দেখা যায়, যে উদ্দেশ্য নিয়ে বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হয় সে উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন হয় না, সাধারণ মানুষ ভুগতে থাকে ভাঙন আতঙ্কে। বোঝাই যায়, সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে ব্যাপক পরিমাণে দুর্নীতির কারণে এমনটি হয়। লক্ষণীয় বিষয়, প্রতি বছর বর্ষা মৌসুম এলেই বাঁধ নির্মাণ ও সংস্কারের ধুম পড়ে। শুকনো মৌসুমে এ কাজটি করা হয় না। এ কারণে, বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টির জন্য বাঁধ নির্মাণ ও সংস্কার পুরোপুরি শেষ করা যায় না এবং তা টেকসইও হয় না। এ সময়টি বেছে নেওয়া যে অর্থের অপচয় এবং দুর্নীতির সুযোগ করে দেওয়ার জন্য, তা সহজেই অনুমান করা যায়। কিছু অসাধু মানুষের ব্যক্তিগত লাভের জন্য রাষ্ট্রের বিশাল অঙ্কের অর্থের অপচয় হবে এবং সাধারণ মানুষের জানমাল বিপন্ন হবে, তা মেনে নেওয়া যায় না।
অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড় বাংলাদেশে এসে দুর্বল হয়ে পড়ায় সমূহ ক্ষয়ক্ষতি থেকে রক্ষা পাওয়া গেছে। তবে এর প্রভাবে কিছু এলাকায় বাঁধ ধসের মুখে পড়ে। তবে আপাতত রক্ষা পাওয়া গেলেও ভবিষ্যতে প্রাকৃতিক দুর্বিপাকে যাতে স্বস্তিতে থাকা যায়, সে জন্য টেকসই বাঁধ জরুরি হয়ে পড়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, শুকনো মৌসুমে যদি বাঁধগুলোর সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হতো তাহলে কাজও মজবুত হতো, অর্থও সাশ্রয় হতো। এক্ষেত্রে বর্ষা মৌসুম আসার আগেই ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধ ও বেড়িবাঁধগুলোর পুরোপুরি সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া উচিত বলে মনে করেন সংশ্লিষ্ট অনেকে। এছাড়া যেসব বাঁধ নির্মিত হয়েছে সেগুলো সারাবছরই তদারক করতে হবে। কীভাবে বাঁধ টেকসই করা যায়, সে পদক্ষেপও গ্রহণ করতে হবে। যেসব বাঁধ যথাযথভাবে নির্মিত ও সংস্কার হয়নি, সেগুলোর কাজ যারা করেছেন তাদের জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে। সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দেশের সব বেড়িবাঁধ রক্ষায় কার্যকর ভূমিকা পালন করবেÑ এমনটাই প্রত্যাশা। হ