দেশের পাট শিল্পের বিকাশে সরকার নানামুখী উদ্যোগ এবং বিশেষ সুযোগ দিয়েছে। সরকারি এসব সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত না হলে পাটকলগুলো বন্ধ হওয়ার আশঙ্কা করেছেন সংশ্লিষ্টরা। সরকারের পক্ষ থেকে এরই মধ্যে পাট শিল্প খাতের বকেয়া ঋণে বিশেষ সুবিধা দেওয়া হলেও ব্যাংকগুলো তা এখনও বাস্তবায়ন করেনি। এ অবস্থায় ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে তফসিলি ব্যাংকগুলোকে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের অগ্রগতি জানানোর নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
সূত্র জানিয়েছে, সরকার খেলাপি পাট ব্যবসায়ীদের বিশেষ সুযোগ দিলেও তা বাস্তবায়ন করছে না ব্যাংকগুলো। এর আগে গেল ৩ ডিসেম্বর ঋণখেলাপি পাট ব্যবসায়ীরা আগের ঋণ আদায় না করে তাদের বকেয়া ঋণ ‘ব্লক’ সুবিধা দিয়ে পরিশোধের জন্য ১০ বছর সময় বাড়িয়েছে সরকার। একইসঙ্গে ঋণখেলাপি পাট ব্যবসায়ীদের জন্য নতুন করে ঋণ দেওয়ার বিধানও রাখা হয়েছে; কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে এ সংক্রান্ত নির্দেশনার পর আড়াই মাস পার হলেও কার্যকর করছে না ব্যাংকগুলো।
এ বিষয়ে ২৩ এপ্রিল পাট শিল্পের বকেয়া ঋণ ব্লক হিসেবে স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত জরুরি ভিত্তিতে বাস্তবায়নের দাবি জানিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবীরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন বিজেএমএ চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাম-উজ জোহা। এ সময় তিনি গভর্নরকে জানান, পাটর শিল্পের সঙ্গে দেশের প্রায় ৪ কোটি মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত। বর্তমানে পাট শিল্প চরম দুরাবস্থায় রয়েছে। এজন্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ পাট শিল্পের বকেয়া ঋণ ব্লক হিসাবে স্থানান্তর ও নবায়নকৃত ঋণ হিসাব থেকে উত্তোলন সুবিধার সিদ্ধান্ত নেয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রজ্ঞাপন জারি করে; কিন্তু প্রজ্ঞাপন জারির সাড়ে চার মাস পার হলেও সে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হয়নি। এতে পাট শিল্প আরও করুণ অবস্থার মধ্যে পড়েছে।
বিজেএমএ’র দাবি ইতিবাচকভাবে নিয়ে তা বাস্তবায়নে ২ মে সব তফসিলি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে নির্দেশনা দিয়ে চিঠি পাঠিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সেখানে বলা হয়েছে, সরকারের ওই ঘোষণা বাস্তবায়ন করে ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে অগ্রগতি প্রতিবেদন কেন্দ্রীয় ব্যাংকে পাঠাতে হবে। আর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা অতি সম্প্রতি বিজেএমএ’র সব সদস্যের কাছে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংগঠনটির মহাসচিব আবদুল বারিক খান।
এর আগে গেল ৩ ডিসেম্বর কেন্দ্রীয় ব্যাংক সার্কুলার জারি করে। সেখানে বলা হয়, ঋণখেলাপি পাট ব্যবসায়ীরা আগের ঋণ আদায় না করে তাদের বকেয়া ঋণ ‘ব্লক’ সুবিধা দিয়ে পরিশোধের জন্য ১০ বছর সময় বাড়িয়েছে সরকার। একইসঙ্গে ঋণখেলাপি পাট ব্যবসায়ীদের জন্য নতুন করে ঋণ দেওয়ার বিধানও রাখা হয়েছে। এরই মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে এ সংক্রান্ত নির্দেশনা জারি করেছে। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।
এর আগে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ পাট শিল্প খাতের বকেয়া ঋণ ব্লক হিসাবে স্থানান্তরের বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, পাট খাতের প্রতিটি কেসের গুণাগুণ বিবেচনায় নিয়ে ব্যাংকার-গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে ব্যাংক ঋণের সুদ ও আবশ্যকীয় ক্ষেত্রে আসল বা এর অংশবিশেষ (৩১ অক্টোবর ২০১৮) ভিত্তিক ঋণের স্থিতি নিরূপণ করে ১০ বছরে পরিশোধের সুযোগ দিয়ে ব্লক হিসাবে স্থানান্তর করতে হবে। ব্যাংকগুলোর প্রতি আট দফা নির্দেশনাসংবলিত ওই সার্কুলারে ব্লক হিসাবে নেওয়া খেলাপি গ্রাহককে নতুন করে ঋণ দেওয়ার নির্দেশ রয়েছে। সরকারি সিদ্ধান্তের আগেও কাঁচাপাট রপ্তানিকারকদের খেলাপি ঋণ ব্লক হিসাবে রেখে নতুন ঋণ দেওয়া হয়েছে।