আজকের পত্রিকাআপনি দেখছেন ৬-০৫-২০১৯ তারিখে পত্রিকা

সব আলো মনিকায়

স্পোর্টস রিপোর্টার
| খেলা

ডি-বক্সের ঠিক ওপর সানজিদার ক্রসের বল বুটের ডগা দিয়ে ডিফেন্ডার আমিন-ওই আমারসানার মাথার ওপর দিয়ে বের করে নেন মনিকা, এরপর বাম পায়ের ট্রেডমার্ক ভলিশটে টপ কর্নারে মঙ্গোলিয়ার জালে; লাল-সবুজ উৎসবে রঙিন বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম। তবে শট নেওয়ার পরও নিশ্চিত ছিলেন না গোল হবে, বল জালে জড়ানোর পর বোঝেন গোল হয়েছেÑ ৩০ এপ্রিল বঙ্গমাতা অনূর্ধ্ব-১৯ নারী আন্তর্জাতিক গোল্ডকাপে দ্বিতীয় সেমিফাইনাল শেষে জানান ম্যাচসেরা মনিকা চাকমা। অসাধারণ গোলের রহস্য প্রসঙ্গে মনিকার কথা, ‘বলটা যখন ওপরে, তখন পরিকল্পনা ছিল ডি-বক্সের সামনে নিতে হবে। এদিকে দুই ডিফেন্ডার বলটা ক্লিয়ার করতে আসছিল। এ অবস্থায় বলটা মারা দরকার মেরেছি।’ ম্যাচের ডেডলকও ভেঙেছিল ওই গোলে। পরে বাংলাদেশ ম্যাচ জেতে ৩-০ গোলে।
কে জানত মনিকার এ গোল ফিফার ফ্যান ফেভারিট মোমেন্টে ঢুকে যাবে? ফিফা ভক্তদের কাছে প্রতি সপ্তাহের সেরা মুহূর্ত বাছাইয়ের আহ্বান করে। সেখানে সারা বিশ্ব থেকে সমর্থকরা নিজেদের পছন্দের ফুটবলের মুহূর্ত জানান। সাধারণত রোনালদো, মেসিদের আধিপত্য থাকে সেখানে। কিন্তু এবার সেখানে জায়গা হলো বাংলাদেশের একজনের, অনূর্ধ্ব-১৯ তথা জাতীয় দলের মিডফিল্ডার মনিকার। বাংলাদেশি সমর্থক তৌসিফ বি আক্কাস ভিডিওটি ফিফার ওয়েবসাইটে আপলোড করেছিলেন; ‘ম্যাজিকাল চাকমা’ শিরোনামে ভিডিওটি ফিফার ফ্যান ফেভারিট মোমেন্টের সবার ওপর স্থান করে নিয়েছে ফিফার সাইটে। পার্বত্য এলাকা খাগড়াছড়ির মনিকা নিজেই তো ভাবেননি দুর্দান্ত ভলিতে গোল হবে, সেটি যে জায়গা করে নিবে ফুটবলের সর্বোচ্চ অভিভাবক ফিফার ফ্যান ফেভারিট তালিকায় সেটি তো পরে। সেই অসাধারণ ভলি দেখে ফিফাই উপাধি দিয়েছে ‘ম্যাজিকাল চাকমা’।
খবর চাউর হতে চারদিক থেকে বাহবা পাচ্ছেন মনিকা, সতীর্থরা নাকি জড়িয়ে ধরে অভিনন্দন জানিয়েছে, ‘ভালো লাগছে ফিফায় নিজের নামটা আসায়’, এককথায় অনুভূতি মনিকার। ক্যারিয়ারে অন্তত একবার হলেও বাংলাদেশকে বিশ্বকাপে নিয়ে যেতে চান মনিকা, নিজেদের দেখতে চান আরও বড় জায়গায়। সে পথে সেপ্টেম্বরে থাইল্যান্ডে এএফসি অনূর্ধ্ব-১৬ টুর্নামেন্টের চূড়ান্ত পর্ব। প্রস্তুতিও শুরু করে দিয়েছেন মারিয়া-মনিকারা, ‘এখন সামনে এএফসি চ্যালেঞ্জ। আমাদের সব চিন্তাভাবনা। অনেক দিন ধরেই আমরা কষ্ট করছি। নিজেদের ভুলগুলো শোধরানোর চেষ্টা করছি অনুশীলনে। আশা করি, ভালো ফল আসবে।’
প্রতিপক্ষ খেলোয়াড়দের নাকাল করে বল নিয়ন্ত্রণে নেওয়া, রক্ষণ দেওয়াল ভেঙে বল জালে পাঠানোয় যতটা দক্ষ মনিকা, কথা বলায় ঠিক উল্টো। তার কাছে কথা বলা যেন পৃথিবীর সবচেয়ে কঠিন কাজের একটি। তাতে কি খেলার মাঠই তো সব। ফিফা দর্শক জড়িপে তার গোলটি সেরা হয়েছেÑ সে প্রশ্ন যেতেই বুঝিয়ে দিলেন কথা বলায় কতটা দক্ষ! বেশ কিছুক্ষণ ভেবেচিন্তে বলেন, ‘রেকর্ডের জন্য নয়, দেশের জন্য গোল করি। শুনে আমি অনেক খুশি। আগামীতে এমন গোল আরও করতে চাই।’ অক্টোবরে মিয়ানমারে এএফসি অনূর্ধ্ব-১৬ চ্যাম্পিয়নশিপের দ্বিতীয় পর্বে কর্নার থেকে একটা গোল করেছেন তিনি, এরপরও বঙ্গমাতা গোল্ডকাপে মঙ্গোলিয়ার বিপক্ষে করা আলোচিত গোলটিকে নিজের সেরা মানছেন মনিকা।