টানা ৩ দিন পর ঘূর্ণিঝড় ফণীর ধকল কাটিয়ে উঠতে শুরু করেছে বরিশালের তৃণমূল পর্যায়ের মানুষ। ক্ষতিগ্রস্তরা নতুন করে জীবন যুদ্ধে এগিয়ে চলা শুরু করেছেন। অচল নৌপথ সচল হয়েছে রোববার থেকে। নগরীতে কর্মব্যস্ততাও বেড়েছে বেশ। এদিকে গ্রামগঞ্জে ফসল কাটা এবং ক্ষতির মুখে পড়া সবজি রক্ষায় ব্যস্ত হয়ে পড়ছেন চাষিরা।
গত ৩ দিন বন্ধ থাকার পর বরিশালের অভ্যন্তরীণ রুটে সব ধরনের নৌ চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে। আবহাওয়ার উন্নতি হওয়ায় রোববার সকাল থেকে বরিশাল- ভোলা, বরিশাল-মেহেন্দিগঞ্জসহ ১২টি অভ্যন্তরীণ রুটে লঞ্চ চলাচল শুরু হয়। বরিশাল নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের উপপরিচালক আজমল হুদা মিঠু সরকার জানান, ভোর থেকে বরিশাল বিভাগের অভ্যন্তরীণ নৌরুটে সব ধরনের নৌযান চলাচল শুরু হয়েছে। রাতে বরিশাল-ঢাকা রুটে দূরপাল্লার লঞ্চগুলো যাত্রী নিয়ে চলাচল শুরু করবে। বৃহস্পতিবার থেকে ৩ দিন সব ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হয়। রোববার ভোর থেকেই বাবুগঞ্জ উপজেলার চাঁদপাশা গ্রামের চাষি বাবুল হাওলাদার ও ফারুক হাওলাদার তাদের মুগ ক্ষেত থেকে পানি অপসারণের চেষ্টা চালাচ্ছেন। সবজি ক্ষেতের সম্ভাব্য ক্ষতি কাটাতেও পরিচর্যা শুরু করেছেন। ওই চাষিরা বলেন, যেটুকু ক্ষতি হয়েছে, তা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছি।
গৌরনদীতে উঠতি বোরো ধানসহ রবিশস্যের ক্ষতি হওয়ায় ধান কাটার চেষ্টা চালাচ্ছেন কৃষক। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মামুনুর রহমান জানান, ফণীর প্রভাবে ভারী বর্ষণে ও ঝড়ো হাওয়ায় মাঠের অধিকাংশ পাকা বোরো ধান মাটিতে নুয়ে গিয়েছিল। কৃষক এখন তা কাটার চেষ্টা করছেন।
মেঘনা ঘেরা হিজলায় ফণীর আঘাতে গাছপালা পড়ে ঘরবাড়ির ক্ষতিসাধন হয়। উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান আলতাফ হোসেন বলেন, গত দুই দিন ধরে ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে থাকছেন তারা। গতকাল নৌবাহিনীর জাহাজ মেঘনাসংলগ্ন কোরবানীর রাস্তার মাথায় ক্ষতিগ্রস্তদের ত্রাণ বিতরণ করেছে। একইভাবে মেঘনাসংলগ্ন মেহেন্দীগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় নৌবাহিনীর জাহাজ ত্রাণ বিতরণ করছে।
এদিকে রোববার বিভিন্ন অফিস আদালতে দেখা গেছে কর্মব্যস্ততা। নগরীর সোনালী ব্যাংক করপোরেট শাখায় লেনদেনের জন্য গ্রাহকের ভিড় ছিল উপচে পড়া। বরিশাল জেলাপ্রশাসক এস এম অজিয়র রহমান শনিবার জানান, ফণীর আঘাতে জেলার ১০ উপজেলায় ৯ হাজার ৫৩ হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়েছে। এ ঘটনায় প্রায় ১ হাজার ঘরবাড়ি এবং বহু গালপালা উপড়ে পড়েছে। এ ছাড়া ৬৫ কিলোমিটার কাঁচা সড়ক এবং ২০ মিটার বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে মাঠপর্যায়ে সব সেক্টরে কাজ শুরু হয়েছে বলে জানান জেলা প্রশাসক। বরিশাল আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, ফণীর প্রভাব কেটে গেছে, তবে রোববার তাপমাত্রা কিছুটা বেড়েছে।