আজকের পত্রিকাআপনি দেখছেন ৬-০৫-২০১৯ তারিখে পত্রিকা

আসছে আইন : থাকছে জেল-জরিমানার বিধান

রাজনীতিতে জড়ালে বাতিল হবে এনজিও’র নিবন্ধন

আমিরুল ইসলাম
| প্রথম পাতা

স্বেচ্ছাসেবী সমাজকল্যাণ সংস্থার নিবন্ধন ও নিয়ন্ত্রণ আইন ১৯৬১ বাতিল করে সংশোধনসহ তা নতুন করে প্রণয়ন করা হচ্ছে, যা স্বেচ্ছাসেবী সমাজকল্যাণ সংস্থা (নিবন্ধন ও নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০১৯ নামে অভিহিত হবে। 

নতুন আইনের খসড়ায় বলা হয়েছে, নিবন্ধিত কোনো সংস্থা নিবন্ধনের শর্ত ভঙ্গ করে আর্থিক অনিয়ম, সংস্থার গঠনতন্ত্র বা সরকারি আদেশ পালনে ব্যর্থ হলে, প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে রাজনৈতিক কর্মকা-ে জড়ালে, দেশের সংবিধান বা প্রচলিত আইনের পরিপন্থি কোনো কাজে জড়ালে ওই সংস্থার কার্যনির্বাহী পরিষদ বাতিল করে সরকার প্রশাসক নিয়োগ অথবা পাঁচ সদস্যের তত্ত্বাবধায় পরিষদ গঠন করা হবে। তবে অভিযুক্ত সংস্থার পরিচালকদের আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেওয়া হবে। নতুন আইনের বিধানাবলী প্রতিপালন ছাড়া নিবন্ধিত কোনো সংস্থার কার্যক্রম বন্ধ করা যাবে না। একটি এনজিও নিবন্ধনের সময় একটি জেলার বাইরে কাজ করতে পারবে না। নিবন্ধিত হওয়ার পর পাঁচ জেলার বাইরে কাজ করতে পারবে না। এ বিষয়ে সমাজকল্যাণ মন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলতে গেলে তার দপ্তর থেকে সংশ্লিষ্ট ডেস্ক অফিসারের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেওয়া হয়। ডেস্ক অফিসার এজেডএম এরশাদ আহসান হাবিব আলোকিত বাংলাদেশকে বলেন, আইনটিতে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও অংশীজনের মতামত নিয়ে চূড়ান্ত করার জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বাংলা ভাষা কোষে (বাবাকো) পাঠিয়েছি। বাবাকো থেকে আসার পর তা অনুমোদনের জন্য শিগগিরই মন্ত্রিসভায় পাঠাব। আশা করছি, দ্রুত অনুমোদন পাওয়া যাবে। 
নিয়ম মেনে যখন একটি সংস্থার কার্যক্রম বন্ধ করা হবে, তার তিন মাসের মধ্যে ওই সংস্থার কাছে পাওনাদার, দাবিদার বা কোনো অভিযোগকারী পাওয়া না গেলে সংস্থাটি বিলুপ্ত করা হবে। নিবন্ধন বাতিলের তারিখ থেকে তা কার্যকর হবে। এরপর যে ব্যাংক, ব্যক্তির কাছে সংস্থার টাকা, ঋণপত্র, অন্য কোনো সম্পত্তি থাকবে সেই ব্যাংক, ব্যক্তি সরকারের লিখিত পূর্বানুমোদন ছাড়া তা হস্তান্তর করতে পারবে না। দায়, দেনা পরিশোধের পর বিলুপ্ত সংস্থার অশিষ্ট অর্থ সরকার চাইলে একই উদ্দেশে পরিচালিত অন্য কোনো সংস্থার অনুকূলে বরাদ্দ দিতে পারবে। সরকার যুক্তিসঙ্গত মনে করলে বিলুপ্ত সংস্থার অর্থ, ঋণপত্র সম্পদ গ্রহণ করে তা কোনো সমাজকল্যাণমূলক কর্মকা-ে ব্যবহারের জন্য সমাজসেবা অধিদপ্তরের অনুকূলে ন্যস্ত করতে পারবে।
এছাড়া নতুন এ আইনে শাস্তির বিধানও রাখা হয়েছে। নিবন্ধিত সংস্থার কোনো সদস্য, কার্যনির্বাহী পরিষদের কোনো সদস্য যদি আইনের বিধান ভঙ্গ করে জনস্বার্থবিরোধী রাষ্ট্রবিরোধী কাজে জড়ানোর বিষয় প্রমাণিত হয়, তা হলে তিনি কমপক্ষে এক বছরের কারাদ- এবং ৫০ হাজার টাকা অর্থদ- অথবা উভয়দ-ে দ-িত হবেন। খসড়া আইনটিতে কর্মকর্তাদের দায়মুক্তি দেওয়া হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, আইনের অধীনে সরল বিশ্বাসে বা সৎ উদ্দেশ্যে প্রদত্ত আদেশদাতা বা কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে কোনো আদালতে মামলা বা অন্য কোনো আইনানুগ কার্যধারা পরিচালনা করা যাবে না। এমন কী সরল বিশ্বাসে কৃত কোনো কাজের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হলে, ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভবনা থাকলে সরকারের কোনো কর্মকর্তা কর্মচারীর বিরুদ্ধে দেওয়ানি কিংবা ফৌজদারি মামলা করা যাবে না। কিন্তু আইনের কোথাও সরল বিশ্বাস বলতে কী বোঝোনো হয়েছে, তার উল্লেখ নেই। তবে কোনো আর্থিক অনিয়মের কারণে সংস্থার কর্মকর্তাদের প্রতি সংক্ষুব্ধ হলে আদালত মামলা করতে পারবেন। এছাড়া সরকার চাইলে কোনো সংস্থার শ্রেণি বিশেষকে এ আইনের সকল বা কোনো বিশেষ বিধানের কার্যকারিতা থেকে অব্যাহতি প্রদান করতে পারবে। 
নতুন আইনের খসড়ায় বলা হয়েছে, অলাভজনক প্রতিষ্ঠান বলতে ওইসব প্রতিষ্ঠানকে বোঝানো হয়েছে যে সংস্থার আয় ওই সংস্থার সদস্য বা অন্য কাহারো মধ্যে বিতরণ করা যাবে না। আয় কেবল সমাজকল্যাণ এবং উন্নয়নমূলক কাজে ব্যয় করতে হবে। বেসরকারি সংস্থা (এনজিও) বলতে আইনে বাংলাদেশের ভেতরে স্বেচ্ছামূলক কাজ করার জন্য এনজিও বিষয়ক ব্যুরো থেকে নিবন্ধিত কোনো সংস্থা বা বিদেশি রাষ্ট্রের প্রচলিত আইনের অধীনে নিবন্ধিত কোনো সংস্থা বা এনজিও ব্যুরোর অধীনে নিবন্ধিত বা উহার আওতাভুক্ত সংস্থাকে বোঝানো হয়েছে। স্বেচ্ছাসেবী সমাজকল্যাণ সংস্থা বলতে এক বা একাধিক সমাজকল্যাণ ও উন্নয়নমূলক কার্যসম্পাদনের জন্য জনগণ স্বেচ্ছায় প্রতিষ্ঠিত, জনগণের চাঁদা, দান, অনুদান, সরকারি সাহায্যের ওপর নির্ভরশীল কোনো অলাভজনক অরাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান সমিতি বা অনুরূপ প্রতিষ্ঠানকে বোঝানো হয়েছে। সংস্থার সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, স্বেচ্ছাসেবী সমাজকল্যাণ সংস্থা, সংগঠন, ফোরাম, সমিতি, ফাউন্ডেশন, শিশুসদন, ট্রাস্ট, পাঠাগার বা এসবের শাখা যা সমাজকল্যাণ এবং উন্নয়নমূলক কর্মকা-ে যুক্ত। এ আইনের বিধান অনুসরণ ছাড়া কোনো সংস্থা প্রতিষ্ঠা করা বা অব্যাহত রাখা যাবে না। ইতিপূর্বে নিবন্ধিত যে কোনো সংস্থা এ আইনের অধীনে রেজিস্ট্রার্ড বলে গণ্য হবে। তবে নতুন করে ছাড়পত্র নিতে হবে। প্রতারণা, বিভ্রান্তি সৃষ্টি পারে, কোনো দেশ, আন্তর্জাতিক সংস্থা, আন্তর্জাতিক চুক্তি, কনভেনশনের মাধ্যমে গঠিত কোনো সংস্থা বা অফিসের নাম পরিবর্তন, নামের আদ্যক্ষর পরিবর্তন করলে ওই সংস্থার নিবন্ধন বাতিল করা হবে। সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, স্থানীয় সরকার ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানের নামের সঙ্গে কোনো সংস্থার নামে আংশিক বা সম্পূর্ণ মিল থাকলে ওই সংস্থার নিবন্ধন বাতিল করা হবে। তবে সংস্থাটি নতুন করে নামের জন্য আবেদন করতে পারবে। 
কোনো কারণে কোনো আবেদনকারীকে নিবন্ধন না দেওয়া হলে কেন দেওয়া হলো না, তা তাকে জানানো হবে। এ আইনের তফসিলের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হলে এ আইনের অধীনে নতুন নিবন্ধন নিতে হবে। নিবন্ধিত সংস্থার গঠনতন্ত্র থাকতে হবে। নিবন্ধন কর্তৃপক্ষ তা অনুমোদন করবে। নির্ধারিত পদ্ধতি অনুসরণ ছাড়া নিবন্ধন কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ব্যতিত নিবন্ধিত কোনো সংস্থার গঠনতন্ত্রের কোনো সংশোধনই বৈধ বলে গণ্য হবে না। পাঁচ বছর পর পর নির্ধারিত হারে ফি জমা দিয়ে নিবন্ধন নিতে হবে। মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার ৩ মাস আগে নিবন্ধনের আবেদন করতে হবে। কোনো সংস্থার নিবন্ধন নবায়ন করা না হলে নিবন্ধন বাতিলের আদেশ জারি করা হবে এবং আদেশ জারির দিন থেকে তা বিলুপ্ত বলে গণ্য হবে। নিবন্ধন ছাড়া কার্যক্রম পরিচালনা করলে আইনে উল্লিখিত শাস্তির আওতায় আনা হবে। নিবন্ধন নবায়নের আবেদন নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত নিবন্ধন বহাল থাকবে।
সংস্থার নাম পরিবর্তনের ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষের পূর্বানুমোদন নিয়ে দুই তৃতীয়াংশ সদস্যের সম্মতিতে নাম পরিবর্তন সংশোধন করা যাবে। নাম পরিবর্তন করা হলেও ওই সংগঠনের বিরুদ্ধে আদালতে চলমান মামলায় কোনো প্রভাব ফেলবে না। নতুন এ আইনটির ১৩ ধারায় বলা হয়েছেÑ নিবন্ধন কর্তৃপক্ষের কাজ হবে, নিবন্ধন দেওয়া ও বাতিল করা, সংস্থার কার্যপরিধি নির্ধারণ করা, সংস্থার গঠনতন্ত্র অনুমোদন ও সংশোধন করা, লিয়াজোঁ অফিস ও শাখা অফিস খোলার অনুমতি প্রদান, কার্য এলাকা সম্প্রসারণের সুপারিশ করা, কার্যনির্বাহী পরিষদ অনুমোদন, নিবন্ধন নবায়ন করা, সংস্থার বিরুদ্ধে অভিযোগ উপস্থাপন করা হলে তা তদন্ত করা, কার্যক্রম তত্ত্বাবধান, পরিদর্শন, পরিবীক্ষণ, নিয়ন্ত্রণ এবং হিসাব নিরীক্ষা করা এবং প্রশাসক বা তত্ত্বাবধায় পরিষদ নিয়োগ করা। আইনের ১৭ ধারায় সংস্থা নিবন্ধন বাতিল বা বিলুপ্তির বিধান করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, কোনো নিবন্ধিত সংস্থা তার গঠনতন্ত্র পরিপস্থি, এ আইনের অধীনে প্রণীত বিধিবিধানের পরিপন্থি, জনস্বার্থবিরোধী, রাষ্ট্রবিরোধী বা দেশের সংবিধানবিরোধী প্রচলিত আইনের পরিপন্থি করলে কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদান করা হবে। সন্তোষজনক জবাব না পাওয়া গেলে এবং কর্তৃপক্ষ যদি মনে করে, সংস্থাটির নিবন্ধন বাতিল করা দরকার তা হলে ওই সংস্থার নিবন্ধন বাতিল করে আদেশ জারি করবে এবং ওই দিন থেকেই সংস্থাটি বিলুপ্ত বলে গণ্য হবে। তবে আইনের কোথাও জনস্বার্থ, রাষ্ট্রবিরোধী বলতে কী কী কাজকে বোঝানো হয়েছে, তার কোনো সংজ্ঞা নেই। স্বেচ্ছাসেবী সমাজকল্যাণ সংস্থাগুলো (রেজিস্ট্রেশন ও নিয়ন্ত্রণ) অধ্যাদেশ ১৯৬১ এই আইন কার্যকরের দিন থেকে রহিত বলে গণ্য হবে। আপাতত বলবৎ অন্য কোনো আইনে ভিন্নতর যাহাই থাকুক না কেন, নতুন আইনের বিধান প্রধান্য পাবে।