আজকের পত্রিকাআপনি দেখছেন ৯-০৫-২০১৯ তারিখে পত্রিকা

রমজান মাসের পবিত্রতা রক্ষায় গণমাধ্যমের ভূমিকা

মো. গনি মিয়া বাবুল
| সম্পাদকীয়

রমজান রহমত, বরকত ও নাজাতের মাস। এ মাস উম্মতের জন্য আল্লাহ তায়ালা প্রদত্ত এক বিশেষ নেয়ামত। এ মাস হচ্ছে অল্প সময়ে, কম আমলের মাধ্যমে অধিক নেকি অর্জন করার মহান সুযোগ। আল্লাহ তায়ালা বছরের বিভিন্ন মৌসুমকে বিভিন্ন ফসলের জন্য অপেক্ষাকৃত উপযোগী করে সৃষ্টি করেছেন। যদি সেই নির্দিষ্ট মৌসুমে তার উপযোগী ফসলের চাষ করা হয়; তবে অধিক লাভবান হওয়া যায়। বছরের কোনো কোনো মাস ও দিবা-রাতকেও তিনি ইবাদতের জন্য বিশেষভাবে বরকতময় ও বৈশিষ্ট্যম-িত করে রেখেছেন। এ বরকতময় সময়গুলোতে সামান্য মেহনত করে যে বিশাল প্রতিদানের অধিকারী হওয়া সম্ভব, তা অন্য সময়ে অধিক মেহনত করেও অর্জন করা সম্ভব নয়। এ ধরনের বরকতময় সময়গুলোর মধ্য থেকে পবিত্র রমজান সর্বশ্রেষ্ঠ। হজরত উবায়দা ইবনে সামেত (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) রমজান মাসের ফজিলত ও গুরুত্ব বর্ণনা প্রসঙ্গে আমাদের বলেছেন, রমজান একটি বরকতময় মাস। এ মাসে আল্লাহ তায়ালা তোমাদের দিকে বিশেষভাবে আকৃষ্ট হন এবং তোমাদের ওপর খাস রহমত অবতীর্ণ করেন। তিনি তোমাদের গোনাহগুলো ক্ষমা করে দেন। তোমাদের দোয়া কবুল করেন। আর তাঁকে সন্তুষ্ট করার উদ্দেশ্যে তোমরা নেক কাজ করার জন্য যে প্রতিযোগিতা করে থাক, তিনি আনন্দের সঙ্গে তা দেখে থাকেন। আল্লাহ তাঁর ফেরেশতাদের সঙ্গে তোমাদের বিষয়ে গৌরব করে থাকেন। ফেরেশতারা মানুষ সৃষ্টি করার প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছিলেন। তাই আল্লাহপাক মানুষের নেক কাজের প্রতিযোগিতা দেখিয়ে ফেরেশতাদের সম্মুখে গৌরব করেন। অতঃপর মহানবী (সা.) বলেন, তোমরা সাধ্যমতো আল্লাহকে নিজ নিজ নেকি দেখাও। জেনে রাখ, সে ব্যক্তি বড়ই হতভাগ্য, যে ব্যক্তি এ পবিত্র মাসে আল্লাহ তায়ালার রহমত থেকে বঞ্চিত থাকে। (তারগিব)।

পবিত্র রমজান মাস খুবই ফজিলতপূর্ণ। এ মাসের যে কোনো ইবাদতের সওয়াব অন্যান্য মাস অপেক্ষা ৭০ গুণ বেশি। এ মাসে আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআন অবতীর্ণ করেছেন, যা মানবজাতির জন্য পথপ্রদর্শক, আর এর মধ্যেই হক ও বাতিলের স্পষ্ট দলিল রয়েছে। রমজানের প্রতিটি নফল ইবাদতের মর্যাদা ফরজের সমতুল্য। এ মাসে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন উম্মতে মুহাম্মদি (সা.) এর প্রতি রোজা ফরজ করেছেন। এ মাসে এমন একটি রাত আছে, যে রাত হাজার মাসের চেয়েও অতি উত্তম রাত বলে মহান আল্লাহ ঘোষণা করেছেন। হাদিসে কুদসিতে আল্লাহপাক এরশাদ করেনÑ রোজা শুধু আমার সন্তুষ্টির জন্য এবং আমি নিজেই তার প্রতিদান প্রদান করব। শুধু কোরআনই এ মাসে অবতীর্ণ হয়নি, বরং এর আগের অন্যান্য আসমানি কিতাব এ মাসেই অবতীর্ণ হয়েছে। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেছেনÑ আমার উম্মতকে রমজান মাসে এরূপ পাঁচটি খাস নেয়ামত দান করা হয়েছে, যা আগের কোনো উম্মতকে দান করা হয়নি। সে নেয়ামতগুলো হচ্ছেÑ
১. রোজাদারের মুখের গন্ধ আল্লাহ তায়ালার কাছে মেশকের চেয়েও অধিক সুগন্ধি বলে বিবেচিত।
২. রোজাদারের জন্য পানির মাছ ও গর্তের পিপীলিকাসহ সব মাখলুকাত আল্লাহর দরবারে ক্ষমাপ্রার্থনা করে থাকে।
৩. রমজান মাসে প্রতিদিন নতুন নতুন সাজে বেহেশতকে সাজানো হয় রোজাদার নেককার বান্দাদের জন্য।
৪. রমজান মাসে শয়তানকে বন্দি করে রাখা হয়। যার কারণে এ মাসে পাপের মাত্রা কমে যায়।
৫. এ মাসের শেষ রাতে নেককার রোজাদার বান্দাদের দোজখ থেকে মুক্তির কথা ঘোষণা করা হয়।
ফলে বলা যায়, রমজান মাস খুবই পবিত্র ও বরকতময়। এ মাসের পবিত্রতা রক্ষায় গণমাধ্যম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। যথাÑ
১. মহান আল্লাহর প্রতি প্রত্যেক মুসলমানের ভালোবাসা ও ভক্তি রয়েছে। গণমাধ্যম তার প্রচারণার মাধ্যমে এসব মানুষকে আল্লাহর ইবাদতের প্রতি অধিক মনোযোগী করে তুলতে পারে।
২. রমজান মাসে অশ্লীল বিজ্ঞাপন ও ইসলাম পরিপন্থি অনুষ্ঠান প্রচার না করে ইসলামি অনুষ্ঠান গণমাধ্যম প্রচার করে তারাও আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করতে পারে এবং রমজানের পবিত্রতা রক্ষায় ভূমিকা রাখতে পারে।
৩. রমজানের দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ, যানজট নিরসন প্রভৃতি ক্ষেত্রে গণসচেতনতা সৃষ্টিতে গণমাধ্যমের যথেষ্ট ভূমিকা রয়েছে।
৪. গণমাধ্যম রমজানের গুরুত্ব ও ফজিলত সম্পর্কিত প্রতিবেদন/অনুষ্ঠান অধিক প্রকাশ ও প্রচার করতে পারে, ফলে এতে ইবাদতের প্রতি মানুষের আগ্রহ বাড়বে।
৫. সব ধরনের অশ্লীলতার বিরুদ্ধে জনমত গঠনে গণমাধ্যম ব্যাপক ভূমিকা রাখতে পারে।
৬. ইফতার, সাহরিসহ রমজান মাসে স্বাস্থ্যসম্মত খাদ্য গ্রহণে গণমাধ্যম মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে পারে।
রমজান মাসের গুরুত্ব ও ফজিলত গণমাধ্যমে প্রচারের ফলে মানুষের মধ্যে যেমন আমলের আগ্রহ বৃদ্ধি পায়, তেমনই সরকার ও প্রশাসন প্রয়োজনীয় কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে। রাষ্ট্র, সরকার ও জনগণের মধ্যে সম্পর্ক গড়ে তুলতে এমনকি যে কোনো বিষয়ে জনগণের মতামত তৈরিতে গণমাধ্যম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ফলে বলা যায়, রমজান মাসের পবিত্রতা রক্ষায় গণমাধ্যমের ভূমিকা সবচেয়ে বেশি।

ষ লায়ন মো. গনি মিয়া বাবুল
শিক্ষক, কলাম লেখক, সাহিত্যিক ও সংগঠক