মাদকাসক্তি ভয়াবহ একটি রোগ। অনেকেই অনেকটা অসচেতনতার ফলে এ রোগে আক্রান্ত হন। এদের মধ্যে কেউ কেউ আবার বোধোদয়ের ফলে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার কসরত করে। এক্ষেত্রে সফল হওয়ার সংখ্যা নেহাত কম নয়। কিন্তু প্রশ্ন হলো, স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এসে স্বাভাবিক জীবনযাপন অব্যাহত রাখা সম্ভব হচ্ছে কি না? দেখা যাচ্ছে ফের অনেকেই পুনঃমাদক নির্ভরশীল হয়ে পড়ছেন। সাম্প্রতিক সময়ে ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশনের এক গবেষণা প্রতিবেদনে প্রকাশ, মাদকাসক্ত থেকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার পর ফের মাদকাসক্ত ব্যক্তিদের ৫২.১ শতাংশ কারাবন্দি হন। তাদের মধ্যে ৪৩ শতাংশ একবার, ৪১.৯ শতাংশ দুই থেকে পাঁচবার এবং ১৫.১ শতাংশ পাঁচবারের বেশি আইনগত কারণে গ্রেপ্তার হয়। প্রতিবেদনে জানানো হয়, ৬২.৭ শতাংশ পুনঃনির্ভরশীল মাদক গ্রহণকারীরা ১৮ বছর বা আরও ছোট বয়স থেকে মাদক ব্যবহার শুরু করে, ৭০ শতাংশ রোগীর অর্থের উৎস তাদের অভিভাবক এবং নিজস্ব কৌতূহল থেকে মাদক গ্রহণ করে ৭০.৬ শতাংশ।
উল্লেখ্য, ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন মাদক পুনরাসক্তির ওপর ক্রস সেকশনাল বর্ণনামূলক গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের লাইসেন্সপ্রাপ্ত ১৭৭টি মাদক চিকিৎসাকেন্দ্রের মধ্যে দেশের মোট ১৩৮টি কেন্দ্রে চিকিৎসা গ্রহণরত ৯১১ মাদক নির্ভরশীল ব্যক্তি, যারা আগে অন্ততপক্ষে একবার মাদক ব্যবহারজনিত কারণে চিকিৎসা নেওয়ার পর আবার পুনরাসক্ত হয়ে পড়েছে। যাদের কোনো মারাত্মক মানসিক বা শারীরিক রোগ নেই, তাদের অন্তর্ভুক্ত করে ইন-ডেপথ সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করে এ গবেষণা কার্যক্রমটি পরিচালনা করা হয়েছে। দেশের মাদকাসক্তদের সমাজের মূলধারায় ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে গবেষণার তথ্যগুলো কার্যকর ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা যায়। মাদকাসক্তদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি পর্যায়ের ব্যাপক কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে আসছে। এক্ষেত্রে মাদক প্রতিরোধ এবং মাদকাসক্তদের সুষ্ঠু জীবনে পুনঃপ্রবেশে ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশনের ভূমিকা বিশেষভাবে প্রশংসিত হয়ে আসছে।
গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, অল্প বয়সি এবং আয়ের জন্য অভিভাবকের ওপর নির্ভরশীলরাই নিছক কৌতূহলের বশবর্তী হয়ে মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, মাদকমুক্ত হয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার পর ফের কেন অনেকেই পুনঃমাদক নির্ভরশীল হয়ে পড়ে? আর মাদক কেনার অর্থ জোগাড় করতে গিয়ে তারা নানা অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে। স্বাভাবিক কারণেই তারা আইনের আওতায় চলে আসে। এ অবস্থায় মাদকাসক্তে আক্রান্ত ব্যক্তির সার্বিক মুক্তির কথা ভাবতে হবে। এক্ষেত্রে সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি পরিবার ও সমাজের ওপরও ব্যাপক দায় বর্তায়। মাদকমুক্ত সমাজ গড়তে সমন্বিত পদক্ষেপের কথাই ভাবতে হবে। মাদকাসক্তির ভয়াবহতা থেকে সুরক্ষা পেতেই হবে। হ