আজকের পত্রিকাআপনি দেখছেন ৯-০৫-২০১৯ তারিখে পত্রিকা

ডায়াবেটিক রোগীর রোজা

ডা. মো. মফিজুর রহমান রাজীব
| সুস্থ থাকুন

ডায়াবেটিক রোগীরা যদি রোজা রাখবেন বলে মনস্থির করেন, তবে অবশ্যই রোজা রাখার আগে প্রস্তুতিস্বরূপ ডাক্তারের পরামর্শ নেবেন। মনে রাখবেন আল্লাহ আপনার জন্য রোজা যেমন ফরজ করেছেন, তেমনি অসুস্থতার কারণে রোজা না রাখার জন্য অনুমতিও দিয়েছেন।

ডায়াবেটিস রোগের ডাক্তার অথবা আপনার চিকিৎসক প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সিদ্ধান্ত নেবেন, আপনার স্বাস্থ্য রোজা রাখার উপযুক্ত কি না, তবে তা অবশ্যই একজন আলেম বা ধর্মীয় জ্ঞানসম্পন্ন চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী করাই ভালো। যদি রোজার জন্য আপনি উপযুক্ত হয়ে থাকেন, অবশ্যই আপনার ডাক্তার ডায়াবেটিসের ওষুধ বা ইনসুলিনের মাত্রা পরিবর্তন করে দেবেন এবং আপনি তা মেনে চলবেন। 

সাধারণ উপদেশ মুখে খাবার ওষুধ
রমজানের প্রথম ও শেষ দিন ওষুধ, বিশেষ করে সমন্বয় করে নিতে হবে।
যারা দিনে একবার ডায়াবেটিসের ওষুধ খান (যেমনÑ সালফোনাইলইউরিয়া দিনে একবার), তারা ইফতারের শুরুতে ওই ওষুধ একটু কম করে খেতে পারেন।
যারা দিনে একাধিকবার ডায়াবেটিসের ওষুধ খান (যেমনÑ সালফোনাইলইউরিয়া দিনে দুইবার), তারা সকালের মাত্রাটি ইফতারের শুরুতে রাতের মাত্রাটি অর্ধেক পরিমাণে সাহরির আধাঘণ্টা আগে খেতে পারেন।
যারা মেটফরমিন ৫০০ বা ৮৫০ মিলিগ্রাম দিনে তিনবার গ্রহণ করেন, তারা ইফতারের পর মেটফরমিন ১০০০ মিলিগ্রাম এবং সাহরির পর ভরা পেটে ৫০০ বা ৮৫০ মিলিগ্রাম খেতে পারেন।
যারা রিপাগ্লিনাইড অথবা নেটিগ্লিনাইড গ্রহণ করেন, তারা ইফতারের শুরুতে ও সাহরির আগে খেতে পারেন অথবা সন্ধ্যারাতে খাবারের আগে খেতে পারেন।
ইনসুলিন
যারা তিনবার ইনসুলিন গ্রহণ করেন, তারা ইফতারের সময় সকালের পুরো ডোজ নেবেন। সন্ধ্যারাতে দুপুরের পুরো ডোজ নেবেন। সাহরির সময় রাতের অর্ধেক ডোজ নেবেন।
যারা তিনবার (ঝযড়ৎঃ অপঃরহম) ইনসুলিন এবং রাতে (ঘচঐ) গ্রহণ করেন, তারা ইফতারের সময় সকালের পুরো ডোজ নেবেন। সন্ধ্যারাতে দুপুরের পুরো ডোজ নেবেন। সাহরির সময় রাতের অর্ধেক ডোজ নেবেন।
যারা দুইবার ইনসুলিন গ্রহণ করেন, তারা ইফতারের সময় সকালের পুরো ডোজ নেবেন। সাহরির সময় রাতের অর্ধেক ডোজ নেবেন।
যারা একবার ইনসুলিন গ্রহণ করেন, তারা ইফতারের সময় নেবেন।
আধুনিক ইনসুলিন (অহধষড়মঁব, উবমষঁফবপ) চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী নেওয়া যেতে পারে। এতে হঠাৎ করে রক্তের সুগার কমে যাওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে। তারপরও রক্তের সুগার পরীক্ষা করে মাত্রা ঠিক করা উচিত।
জেনে রাখা ভালো (বিভিন্ন আলেম-ওলামার মতামত) রোজার সময় রক্ত পরীক্ষা এবং প্রয়োজনে ইনসুলিন নিলেও রোজা ভাঙবে না।
সাহরির ২ ঘণ্টা পর, দুপুর ১২টা থেকে বিকাল ৩টা, ইফতারের আগে, এবং ইফতারের ২ ঘণ্টা পর রক্ত পরীক্ষা করা উচিত।
রোজার সময় অতিরিক্ত ব্যায়াম করার দরকার নেই। তারাবির নামাজ অনেকটাই ব্যায়ামের প্রয়োজনীয়তা পূরণ করে থাকে। তবে সক্ষম ব্যক্তিদের জন্য আরও কিছুটা হাঁটা যেতে পারে। তবে সেটা অবশ্যই ইফতারের পর।
চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী পর্যাপ্ত পরিমাণে (২.৫-৩.০ লিটার) পানি খাবেন। বিশেষ করে গ্রীষ্মকালে পানিশূন্যতার (উবযুফৎধঃরড়হ) সম্ভাবনা বেশি।
সাহরির খাবার যতটা সম্ভব শেষ সময় খাওয়ার চেষ্টা করবেন।
খেজুর বা সরবত না খাওয়ার চেষ্টা করবেন। তবে অৎঃরভরপরধষ ঝবিবঃবহবৎ (অংঢ়ধৎঃধসব, ঝঁপৎধষড়ংব) কমমাত্রায় খাওয়া যেতে পারে।
ইফতারের সময় ভাজাপোড়া, তৈলাক্ত জিনিস কম খাওয়া ভালো। ফলমূল, শাকসবজি, ডাল ও টকদই তালিকাভুক্তি করতে পারেন। কচি (শাস ছাড়া) ডাবের পানি পান করতে পারেন। শসা, খিরা, আমরা, কচি পেয়ারা, লেবুর পানি (চিনি ছাড়া) ও অন্যান্য টক ফল ইচ্ছামতো খাওয়া যাবে।
রোজা ভাঙা আবশ্যক যখন হাইপো লক্ষণ এবং রক্তে গ্লুকোজ খুব কম হয়। সাহরির ২-৩ ঘণ্টা পর ৪.০ মিলিমোল/লি (৭২ মিলিগ্রাম/ডিএল) এর কম হলে অথবা দিনের যে-কোনো সময় ৩.৩ মিলিমোল/লি (৬০মিলিগ্রাম/ডিএল) এর কম হলে রোজা ভাঙতে হবে। যদি রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ বেড়ে ১৬.৭ মিলিমোল/লি (৩০০ মিলিগ্রাম/ডিএল) হয়ে যায়, তবে প্রস্রাবে কিটোন বডি পরীক্ষা করতে হবে এবং জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
তবে অবশ্যই মনে রাখতে হবে, সবার জন্য একই ব্যবস্থা প্রযোজ্য নয়। প্রত্যেক ডায়াবেটিক রোগীর অবস্থা অনুসারে আলাদা আলাদা ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এজন্য রোজা রাখার আগে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া খুবই জরুরি। রমজান মাসের রোজার সময় রক্তে সুগারের পরিমাণ স্বাভাবিক রাখার জন্য রোগীর কী কী করণীয়, সে সম্পর্কে চিকিৎসক আপনাকে পরামর্শ দেবেন। বিশেষ করে হাইপোগ্লাইসেমিয়া যাতে না থাকে, সেজন্য সর্বদা সতর্ক থাকতে হবে।

ডা. মো. মফিজুর রহমান রাজীব
খিলগাঁও ডায়াবেটিক ও স্পেশালাইজড
ডক্টর’স চেম্বার, খিলগাঁও চৌরাস্তা, ঢাকা