‘বেস্ট নেভার রেস্ট’। সেরারা দম ফেলে না। দম ফেলার সুযোগ তাদের নেই। বার্সা কি তবে গা ছেড়ে খেলেছিল। নাকি অসম্ভব বলে কিছু নেই জার্গেন ক্লপের দল সেটি প্রমাণ করল। গত মঙ্গলবার অ্যানফিল্ডে লিভারপুল চ্যাম্পিয়নস লিগের সেমিফাইনালের দ্বিতীয় লেগে বার্সার বিপক্ষে ৪-০ গোলে জিতেছে। দুই লেগ মিলিয়ে ৪-৩ গোলে জিতে ফাইনালে উঠে গেছে।
চ্যাম্পিয়নস লিগে সেমিফাইনালের দ্বিতীয় লেগের আগে অসহায় হতে দেখা গিয়েছিল লিভারপুলকে। হওয়াটাও স্বাভাবিক। বার্সেলোনার বিপক্ষে ম্যাচের আগেই ছিটকে গেছেন তাদের আক্রমণের মূল অস্ত্র মোহাম্মদ সালাহ, ফিরমিনো। প্রাণভোমরাদের না থাকায় অনেকেই লিভারপুলের বিদায় নিশ্চিত ভেবেছিলেন! অথচ সেই লিভারপুলই বার্সেলোনার বিপক্ষে অতিমানবীয় কীর্তি গড়ে নিশ্চিত করেছে ফাইনাল। লিভারপুল কোচ ইয়ুর্গেন ক্লপের কাছেও অপ্রত্যাশিত ছিল এমন কিছু। তাই ফাইনাল জেতার পর এই দলকে ‘দৈত্য’ মনে হচ্ছে তার কাছে! অবিশ্বাস্য নাটকীয়তা হয়তো এটাকেই বলে। ইতিহাস গড়তে দরকার ছিল চারটি গোল। সঙ্গে প্রতিপক্ষকে গোলবঞ্চিত রাখা। তাই করে দেখাল দলটি। রক্ষণভাগ যে তাদের কতটা জমাট তা দেখিয়ে দিলেন ভার্জিল ভ্যান ডাইকরা। দারুণ কিছু সুযোগ পেয়েছিল বার্সেলোনা। কিন্তু তা থেকে গোল আদায় করে নিতে ব্যর্থ হয় দলটি। রবার্টসনের পরিবর্তে এদিন দ্বিতীয়ার্ধে মাঠে নামেন জর্জিয়ানো ভেইনালদাম। নেমেই গড়ে দেন ম্যাচের পার্থক্য। ১০ মিনিটেই দুই গোল করেন তিনি। জোড়া গোল করেন দিভোক ওরিগিও। অবশ্য দারুণ কৃতিত্ব রয়েছে আলেকজান্ডার-আর্নল্ডেরও। নির্ধারিত সময়ের ১১ মিনিট আগে বুদ্ধিদীপ্ত এক ক্রসেই যে বদলে দেয় সব। টানা দ্বিতীয়বারের মতো ফাইনালে লিভারপুল। দলের সেরা দুই তারকা মোহাম্মদ সালাহ ও রবার্তো ফিরমিনোকে ছাড়া বেশ দুশ্চিন্তায় ছিল লিভারপুল। ছিলেন না নেবি কেইটাও। তবে এ ত্রয়ীকে ছাড়াই শুরু থেকেই দারুণ আগ্রাসী ফুটবল খেলতে থাকে লিভারপুল। সপ্তম মিনিটে এগিয়েও যায় তারা। নিজেদের অর্ধ থেকে লম্বা বাড়ানোর বল জর্দি আলবা ঠিকভাবে ঠেকাতে না পারলে পেয়ে যান সাদিও মানে। তার বাড়ানো বলে ডি বক্সে ঢুকে দারুণ শট নিয়েছিলেন অধিনায়ক হেন্ডারসন। দারুণ দক্ষতায় ঝাঁপিয়ে ঠেকিয়ে দেন বার্সা গোলরক্ষক মার্ক টের স্টেগান। তবে আলগা বল পেয়ে যান ওরিগি। আলতো টোকায় লক্ষ্যভেদ করেন এ বেলজিয়ান। দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকেই আক্রমণের ধার বাড়ায় লিভারপুল। ভেইনালদাম মাঠে নামায় মধ্যমাঠের শক্তি বাড়ে। ৫১ মিনিটেই কর্নার থেকে ভ্যান ডাইকের ব্যাকহিল টের স্টেগান ঠেকিয়ে না দিলে তখনই ব্যবধান দ্বিগুণ হতো লিভারপুলের। পাল্টা আক্রমণে মেসির পাস থেকে একেবারে ফাঁকায় বল পেয়ে গিয়েছিলেন সুয়ারেজ। ভালো শটও নিয়েছিলেন। কিন্তু ঝাঁপিয়ে পড়ে সে যাত্রা দলকে রক্ষা করেন অ্যালিসন। ৫৪ মিনিটে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন স্বাগতিকরা। এ গোলেও দায় রয়েছে আলবার। তার কাছ থেকে বল কেড়ে ডি বক্সে ক্রস বাড়ান ট্রেন্ট অ্যালেকজান্ডার-আর্নল্ড। জোরালো শটে লক্ষ্যভেদ করেন ভেইনালদাম। এর দুই মিনিট পর জেরদান শাকিরির ক্রস থেকে ফাঁকায় লাফিয়ে দারুণ এক হেডে আবারও বল জালে জড়ান ভেইনালদাম। ৬৭ মিনিটে মেসিকে আবারও গোল বঞ্চিত করেন অ্যালিসন। ছোট কর্নার থেকে রাকিতিচের সঙ্গে দেওয়া নেওয়া করে কোণাকুণি জোরালো এক শট নিয়েছিলেন অধিনায়ক। কিন্তু তা ঠেকিয়ে দেন অ্যালিসন। ৭৯ মিনিটে কাক্সিক্ষত গোলটি করে বার্সেলোনা। কর্নার পেয়েছিল লিভারপুল। বার্সা গোলরক্ষক টের স্টেগেনসহ বার্সেলোনার রক্ষণভাগ প্রস্তুত ছিল না। তাই দেখে আচমকা শট নেন অ্যালেকজান্ডার-আর্নল্ড। ডি বক্সে ফাঁকায় বল পেয়ে জোরালো শটে জাল খুঁজে নেন ওরিগি। তাতেই আরও একবার স্বপ্নভঙ্গ হয় বার্সেলোনার। শেষ দিকে সমতায় অ্যাওয়ে গোল আদায় করে নিতে চেষ্টা করেছিল অতিথিরা। কিন্তু লিভারপুলের জমাট ডিফেন্স ভাঙতে পারেনি দলটি। ফলে সেমিফাইনাল থেকেই বিদায় নিতে হয় স্প্যানিশ দলটিকে।