পেশাদার লিগের একাদশ মৌসুম চলছে, কিন্তু ১১ বছরেও শীর্ষ লিগের ক্লাবগুলোকে পেশাদার মোড়ক দিতে পারেনি বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে)! আগের মতোই চাঁদা-অনুদানে ক্লাব চালাচ্ছেন কর্তারা; প্রতি লিগের আগে বাফুফের অ্যাপিরিয়েন্স মানির জন্য হাপিত্যেশ করে।
চার ভেন্যুতে আজ প্রিমিয়ার লিগের দ্বিতীয় পর্ব শুরু হতে যাওয়ার আগে সুসংবাদই পাচ্ছে ক্লাবগুলো, পৃষ্ঠপোষক পেয়েছে বাফুফের পেশাদার লিগ কমিটি, গতকাল বাণিজ্যিক পার্টনার হিসেবে ইন্টারন্যাশনাল স্পোর্টস পার্টনারের (আইএসপি) সঙ্গে প্রতি বছর নবায়নযোগ্য ৫ বছরের চুক্তি হয়েছে বাফুফের। যুক্তরাজ্যভিত্তিক প্রতিষ্ঠানের হাত ধরে লিগে টাইটেল স্পন্সর হয়েছে টিভিএস অটোস। মোটরসাইকেল নির্মাতা প্রতিষ্ঠানটি প্রিমিয়ারই না, চ্যাম্পিয়ন্সশিপ লিগ, ফেডারেশন কাপ, স্বাধীনতা কাপ এবং প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় বিভাগ লিগেরও পৃষ্ঠপোষক; চুক্তির আওতায় আছে নারী ফুটবলের একটি ইভেন্ট। বাংলাদেশের ফুটবলের সম্ভাবনা বুঝেই চুক্তি করাÑ জানান আইএসপির জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি দীপক সিং। জম্পেশ ফুটবল দেখা গেছে লিগের প্রথম পর্বে, ফিরতি লিগ হবে আরও জমজমাটÑ মনে করেন বাফুফে জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি আবদুস সালাম মুর্শেদী। সেটি সরাসরি দেখাতে স্বত্ব কিনেছে বাংলা টিভি।
শীর্ষে থেকে দ্বিতীয় পর্ব শুরু করবে বসুন্ধরা কিংস, দুইয়ে থাকা আবাহনীর (৩০) সঙ্গে নবাগতদের (৩৪) পয়েন্টের ব্যবধান ৪। উত্থান-পতনের লিগে শিরোপা ধরাছোঁয়ার মধ্যেই আছে শেখ রাসেল (২৭) ও সাইফ স্পোর্টিং ক্লাব (২৩)। অবনমন ঠেকানোর দ্বৈরথও হবে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ; চরম দুরবস্থায় আছে বিজেএমসি (৪) ও মোহামেডান (৬), শঙ্কায় আছে ব্রাদার্স (৮), আরেক নবাগত নোফেল স্পোর্টিং ক্লাব (৯)।
অবনমন ঠেকাতে মধ্যবর্তী দলবদলে শক্তি বাড়াতে বিদেশি নিয়েছে মোহামেডান, বিজেএমসি, ব্রাদার্স। বিজেএমসি ফিরিয়েছে পুরোনো ফুটবলার এলিটা কিংসলে। মোহামেডানের ছেড়ে দেওয়া এনকোচা কিংসলে চিগোজীকে নিয়েছে চট্টগ্রাম আবাহনী। সাদা-কালোরা নিয়েছে মালির সোলেমান দিয়াবাতে ও জিয়ান জুলেস ইকাঙ্গাকে। মোহামেডানের ল্যান্ডিং গেছেন রহমতগঞ্জে। চার বিদেশিই বদলে ব্রাদার্স নিয়েছে দক্ষিণ কোরিয়ার পার্ক জায়ে ইয়ং, ঢাকায় খেলে যাওয়া সুদানি ফরোয়ার্ড জেমস মগা, আইভরি কোস্টের ল্যানচিনে তোরে ও মিশরিয়ান ওসমান আবদেলাতে।
শিরোপা রেসে থাকা দলগুলোও ছিল মাঠে। অপরাজিত তকমা ধরে রাখা কিংস ভারতের আই লিগে গত মৌসুমের সর্বোচ্চ গোলদাতা উইলিস প্লাজাকে নিয়েছে, ত্রিনিদাদ অ্যান্ড টোবাগোর জাতীয় দলের স্ট্রাইকারকে নিতে ছেড়েছে স্প্যানিশ ডিফেন্ডার জর্জ গোটরকে। শিরোপা ধরে রাখতে আকাশি-হলুদ জার্সি গায়ে খেলা ব্রাজিলিয়ান ওয়েলিংটন প্রিয়রিকে নিয়েছে আবাহনী। জয়ের ছন্দ ফেরাতে ব্রাজিলিয়ান স্ট্রাইকার অ্যালেক্স রাফায়েলকে ছেড়ে মালদ্বীপের ক্লাব ভ্যালেন্সিয়ায় খেলা ইউক্রেন উইঙ্গার ভ্যালেরি রিশিনকে নিয়েছে। শক্তি বাড়িয়েছে সাইফ স্পোর্টিংও, প্রথম পর্ব খেলা তিন বিদেশি বিদায় করে রুয়ান্ডান ডিফেন্ডার এমরি বাইসাঙ্গে, ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড অ্যালেন আলেজান্দ্রো ও উজবেকিস্তানের মিডফিল্ডার ওতাবেক জাকিরভকে এনেছে তারা।
লিগের দ্বিতীয় পর্বকে জাতীয় দলের দরজাও বলা যায়। কয়দিন বাদেই ভিয়েনতিয়েনে বিশ্বকাপের প্রাক-বাছাই ম্যাচ। হোম অ্যান্ড অ্যাওয়ে ভিত্তিতে ম্যাচ দুটির জন্য তারুণ্যনির্ভর স্কোয়াড গড়তে চান ব্রিটিশ কোচ জেমি ডে। ফলে শুধু দল না, ফুটবলারদের মধ্যেও লড়াই হবে জাতীয় দলে স্থান পেতে।
জমবে শীর্ষ গোলদাতা হওয়ার দ্বৈরথও; ৯ গোল করে সবার উপরে আবাহনীর নাইজেরিয়ান সানডে চিজোবা। গত লিগেও ছিলেন সর্বোচ্চ গোলদাতা। এবার তার চ্যালেঞ্জার সতীর্থ নাবীব নেওয়াজ জীবন (৮) ও মুক্তিযোদ্ধার আইভরি কোস্টের ফরোয়ার্ড বাল্লো ফামুসা (৮)। ৭ গোল রহমতগঞ্জের কঙ্গোর সিও জুনাপিও ও বসুন্ধরার ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড মার্কোস ভিনিসিয়াসের, ৬টি করেছেন শেখ রাসেলের রাফায়েল, আরামবাগের জাহিদ ও সাইফের বলশাকভ।