স্বর্ণ দিয়ে বানানো আস্ত গন্ডার, যা আবিষ্কার হওয়ার পর থেকেই ঘনাচ্ছে রহস্য। এই একটা গন্ডারের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে নানা ইতিহাস। আফ্রিকায় শক্তির অন্যতম প্রতীক হলো গন্ডার। ১৯৩৪ সালে প্রথম এ স্বর্ণ দিয়ে তৈরি গন্ডারের অস্তিত্বের কথা প্রকাশ্যে আসে।
ত্রয়োদশ শতাব্দীতে সাব-সাহারান আফ্রিকার সবচেয়ে বড় রাজ্য ছিল মাপুঙ্গুবে। শ্বেতাঙ্গরা বসতি গড়ার আগে এ মাপুঙ্গুবে ছিল অন্যতম সমৃদ্ধশালী রাজ্য। জিম্বাবুয়ে সীমান্তের বেশ কাছেই অবস্থিত ছিল এটি। ত্রয়োদশ শতকের এ স্বর্ণ গন্ডারটি সেই আমলের। মাপুঙ্গুবে রাজত্ব ১২২০ থেকে ১২৯০ সাল পর্যন্ত স্থায়ী ছিল। বর্তমান তানজানিয়া থেকে সেটি প্রায় দুই হাজার মাইল দূরে অবস্থিত। সোয়াহিলি উপকূল দিয়ে মাপুঙ্গুবে স্বর্ণের বাণিজ্য চালাত সেই সময়। হাতির হাত, পশুর চামড়া, কাচের পুঁতি লেনদেন হতো মাপুঙ্গুবের অন্তর্গত বাম্বানদিয়ানালো থেকে। এটির অস্তিত্ব ছিল ১০৩০ থেকে ১০২০ সাল পর্যন্ত। কিন্তু ত্রয়োদশ শতকে স্বর্ণই হয়ে উঠল মুখ্য।
মাপুঙ্গুবের পাহাড় থেকে প্রিটোরিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ও শিক্ষার্থীদের তত্ত্বাবধানে এক রাজার সমাধি খননের সময় উদ্ধার হয় গন্ডারটি। গন্ডার ছাড়াও ২৭ জায়গা থেকে বিভিন্ন প্রতœতাত্ত্বিক সামগ্রী, স্বর্ণের কুমির, মহিষ ও বিড়াল উদ্ধার হয়। স্বর্ণের তৈরি রাজদ-, বাজুবন্ধ, বালা, পুঁতি, মুকুটও উদ্ধার হয়েছিল। তবে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ছিল গন্ডারটি। কাঠের তৈরি কাঠামোর ওপর সোনার কয়েকটি পাত হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে বসিয়ে তৈরি হয়েছিল এটি, বলেছিলেন ইতিহাসবিদরা। এশিয়া ও মিশরের সঙ্গে মাপুঙ্গুবের নানারকম বাণিজ্যিক সম্পর্ক ছিল। গন্ডারটি কোনো দেশ থেকে এসেছিল, নাকি আফ্রিকার শক্তির প্রতীক গন্ডারটি সেখানকারই তা নিয়ে ইতিহাসবিদদের মধ্যে বিতর্ক রয়েছে। সমাধির সঙ্গে গন্ডার দেওয়ার কোনো রীতি ছিল কি না, তাও অজ্ঞাত। এই গন্ডার নিয়ে এখনও গবেষণা চলছে। ১৯৯৯ সালে গন্ডারটিকে জাতীয় সম্পদের মর্যাদা দেওয়া হয়। আফ্রিকার সর্বোচ্চ সম্মানের মধ্যে চারটি শ্রেণি রয়েছে, এর মধ্যে প্ল্যাটিনাম অ্যাওয়ার্ড পেয়েছিলেন নেলসন ম্যান্ডেলা। সেই পুরস্কারেও রয়েছে এ স্বর্ণ গন্ডারের ছবি। আনন্দবাজার