আজকের পত্রিকাআপনি দেখছেন ৯-০৫-২০১৯ তারিখে পত্রিকা

চলন্ত বাসে নার্সকে ধর্ষণ ও হত্যা

চালক-হেলপারসহ পাঁচজন ৮ দিনের রিমান্ডে

কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি
| শেষ পাতা

কিশোরগঞ্জের কটিয়াদীতে চলন্ত বাসে নার্স শাহিনুর আক্তার তানিয়াকে দল বেঁধে ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার পাঁচজনকে ৮ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। বুধবার বিকালে কড়া পুলিশি প্রহরায় আসামিদের আদালতে হাজির করা হয়। অতিরিক্ত চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আল মামুনের আদালতে হাজির করে তদন্ত কর্মকর্তা সারোয়ার জাহান ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন। আদালতের বিচারক প্রত্যেককে ৮ দিনের মঞ্জুর করেছেন। তবে আসামিপক্ষে কোনো আইনজীবী ছিলেন না বলে জানা গেছে। এদিকে ভদ্র ও পরোপকারী তানিয়ার মৃত্যুতে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে। এ ঘটনায় জড়িতদের ফাঁসির দাবি জানিয়েছেন নিহতের স্বজন ও এলাকাবাসী।
রিমান্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন বাসচালক গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার সালুয়াটেকি গ্রামের মৃত গিয়াস উদ্দিনের ছেলে নূরুজ্জামান (৩৯), বাসের হেলপার একই উপজেলার বীর উজলি গ্রামের মৃত আবদুল হামিদের ছেলে লালন মিয়া (৩২), একই উপজেলার লোহাদি গ্রামের নজর আলীর ছেলে রফিকুল ইসলাম রফিক (৩০), কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলার ভোগপাড়া গ্রামের দুলাল মিয়ার ছেলে খোকন মিয়া (৩৮) ও বাজিতপুর উপজেলার নীলক্ষ্মী গ্রামের মৃত আবদুস শহীদের ছেলে বকুল মিয়া ওরফে ল্যাংড়া বকুল (৫০)।
এ ঘটনায় নিহতের বাবা গিয়াস উদ্দিন বাদী হয়ে মঙ্গলবার রাতে বাজিতপুর থানায় একটি মামলা করেন। এ মামলায় বাসচালক, হেলপারসহ চারজনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাত আরও কয়েকজনকে আসামি করা হয়। 
এদিকে ময়নাতদন্ত শেষে মঙ্গলবার রাতেই তানিয়ার লাশ নিজ বাড়ি কটিয়াদী উপজেলার লোহাজুড়ি ইউনিয়নের বাহেরচর গ্রামে মায়ের কবরের পাশে দাফন করা হয়। তানিয়ার লাশের ময়নাতদন্তে ধর্ষণ ও নির্যাতনের প্রমাণ পাওয়া গেছে বলে চিকিৎসক জানান।
তানিয়াকে ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনায় এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে। চার ভাই ও দুই বোনের মধ্যে তানিয়া ছিল সবার ছোট। পরিবারের সদস্যরা জানান, মাত্র চার মাস আগে তানিয়ার মা মারা যান। বাবাকে শান্ত¡না দিতেই ঢাকা থেকে বাড়িতে আসছিলেন তানিয়া। স্বজন ও এলাকাবাসী আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসির দাবি জানিয়েছেন।
উল্লেখ্য, স্বর্ণলতা পরিবহনের বাসটি ঢাকার মহাখালী থেকে সোমবার সন্ধ্যার দিকে কিশোরগঞ্জের বাজিতপুর উপজেলার পিরিজপুরের উদ্দেশে ছেড়ে আসার পথে এ ঘটনা ঘটে। ঢাকার বিমানবন্দর স্টেশন থেকে তানিয়া ওই বাসে ওঠেন। কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী পর্যন্ত বাসটিতে ১৯ জন যাত্রী ছিল। এর মধ্যে কটিয়াদী বাসস্ট্যান্ডে ১৬ জন যাত্রী নেমে যান। এ সময় বাসটিতে তানিয়া ছাড়াও দুই পুরুষ যাত্রী ছিলেন। বাসটি কটিয়াদী থেকে ছাড়ার পর অন্য দুইটি স্টেশনে দুই পুরুষ যাত্রীও নেমে যান। এর পরই ধর্ষণের পর শারীরিক নির্যাতন করে হত্যা করা হয় বলে অভিযোগ ওঠে। 
ঘটনার পরের দিন বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী পিরিজপুর বাজারে স্বর্ণলতা পরিবহনের টিকিট কাউন্টার ভাঙচুর ও স্বর্ণলতার কয়েকটি বাস ভাঙচুর করে। পুলিশ রাতেই বাসটির চালক-হেলপারসহ পাঁচজনকে আটক করে। এদিকে তানিয়া হত্যার প্রতিবাদ ও দোষীদের ফাঁসির দাবিতে কটিয়াদী, বাজিতপুর ও পাকুন্দিয়ায় মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।