আজকের পত্রিকাআপনি দেখছেন ৯-০৫-২০১৯ তারিখে পত্রিকা

সিঁড়ি পাহারার দায়িত্বে ছিল শাকিল

সাতজনের সাক্ষ্যগ্রহণ তিনজন ফের রিমান্ডে

সোনাগাজী (ফেনী) প্রতিনিধি
| প্রথম পাতা

ফেনীর সোনাগাজীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় আদালতে সাতজন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়েছে। আর তিন আসামির নতুন করে ফের একদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। তারা হলেন আগে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেওয়া জাবেদ হোসেন, সাইফুর রহমান জোবায়ের ও শাহাদাত হোসেন শামীম। বুধবার ফেনীর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. জাকির হোসাইনের আদালত এ রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এদিকে নুসরাত হত্যার মামলায় আসামি মহিউদ্দিন শাকিল স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ফেনীর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট জাকির হোসাইনের আদালতে তিনি ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন। ঘটনার দিন তিনি সাইক্লোন শেল্টারের সিঁড়ি পাহারার দায়িত্বে ছিলেন। এছাড়া নুসরাত হত্যাকা-ের ঘটনায় সব পরিকল্পনার ব্যাপারে তিনি জানতেন বলে জবানবন্দিতে জানিয়েছেন।
পিবিআইয়ের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. মনিরুজ্জামান জানান, আগে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেওয়া আসামি জাবেদ হোসেন, সাইফুর রহমান জোবায়ের ও শাহাদাত হোসেন শামীমকে আদালতে হাজির করে অধিকতর তদন্তের জন্য ফের তিন দিনের রিমান্ড আবেদন করলে আদালত প্রত্যেকের একদিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এদিকে আরও চার আসামি রিমান্ডে রয়েছেন। পিবিআইয়ের আশাবাদ আরও চারজন আসামি দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিতে পারে। তাদের রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়েছেন। যাচাই-বাছাই চলছে। হত্যায় জড়িত ১৬ জনসহ ২২ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পিবিআই। এরই মধ্যে দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন ১২ জন। চলতি মাসে অভিযোগপত্র দাখিল হওয়ার সম্ভাবনার কথা জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা। 
পিবিআই সূত্র জানায়, নুসরাত জাহান হত্যাকা-ে যে ১২ জন আদালতে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন, তাদের মধ্যে সরাসরি হত্যাকা-ে অংশ নেওয়া দুই তরুণীসহ পাঁচজন রয়েছেন। সর্বশেষ মঙ্গলবার ফেনীর আদালতে জবানবন্দি দেন মহিউদ্দিন ওরফে শাকিল। শাকিল অবশ্য ঘটনার দিন ৬ এপ্রিল মাদ্রাসা চত্বরে পাহারার দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন।
৬ এপ্রিল ফেনীর সোনাগাজীতে মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি আলিম পরীক্ষা দিতে গেলে দুর্বৃত্তরা তার গায়ে আগুন লাগিয়ে দেয়। গুরুতর অবস্থায় ওই দিন তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ও প্লাস্টিক ইউনিটে ভর্তি করা হয়। ১০ এপ্রিল রাত সাড়ে ৯টার দিকে তিনি মারা যান। এ হত্যাকা-ে সরাসরি পাঁচজন অংশ নেন। মামলার এজাহারভুক্ত আসামি আটজন।
পিবিআই কর্মকর্তারা জানান, নুসরাতের ওপর অগ্নিসন্ত্রাসের দিন অন্যতম প্রধান তিন আসামি শাহাদাত হোসেন ওরফে শামীম (১), জুবায়ের আহমেদ ও জাবেদ হোসেন বোরকা পরিহিত ছিলেন। বোরকাগুলো কিনেছিলেন আরেক ছাত্রী কামরুন নাহার ওরফে মণি। মণিও গ্রেপ্তার হয়ে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। ১৪ এপ্রিল ফেনীর আদালতে দায় স্বীকার করে প্রথম জবানবন্দি দেন শাহাদাত হোসেন ওরফে শামীম (১) ও নুর উদ্দিন। ২৭ মার্চ নুসরাতের শ্লীলতাহানি থেকে শুরু করে ৬ এপ্রিল তার ওপর অগ্নিসন্ত্রাস চালানোর ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ দেন তারা। এই হত্যাকা-ের পর খুনিরা বিষয়টি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রুহুল আমিন এবং পৌর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ও ওয়ার্ড কাউন্সিলর মাকসুদ আলমকে জানিয়েছেন।
নুসরাত হত্যাকা-ের আগে অধ্যক্ষ ‘সিরাজ উদদৌলা সাহেবের মুক্তি পরিষদ’ নামের ২০ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছিল। এ কমিটির আহ্বায়ক ছিলেন নুর উদ্দিন এবং যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন শাহাদাত হোসেন শামীম।
এদিকে নুসরাত হত্যার মামলায় আসামি মহিউদ্দিন শাকিল স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ফেনীর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট জাকির হোসাইনের আদালতে সে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেয়। পরে এ নিয়ে সংবাদ ব্রিফিং করেন পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) চট্টগ্রাম বিভাগের বিশেষ পুলিশ সুপার মো. ইকবাল। তিনি বলেন, শাকিল আদালতকে বলেছে, ঘটনার দিন সে সাইক্লোন শেল্টারের সিঁড়ি পাহারার দায়িত্বে ছিল। এছাড়া নুসরাত হত্যাকা-ের ঘটনায় সব পরিকল্পনার ব্যাপারে সে জানত। এর আগে ২ মে শাকিলকে আদালতে হাজির করে সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. শাহ আলম। আদালত শাকিলের পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।