আজকের পত্রিকাআপনি দেখছেন ৯-০৫-২০১৯ তারিখে পত্রিকা

রূপগঞ্জে আবাসন কোম্পানির ‘আগ্রাসনে’ দিশাহারা কৃষক

রিয়াজ হোসেন, রূপগঞ্জ
| দেশ

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার শিমুলিয়া এলাকায় ব্রাহ্মণখালী মৌজায় কৃষিজমিতে আবাসন কোম্পানির বালু ভরাট- আলোকিত বাংলাদেশ

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে আবাসন প্রতিষ্ঠান ‘পূর্বাচল ট্রাস্ট সিটি’ প্রকল্প এলাকায় ‘ব্যাপক আগ্রাসন’ চালাচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। অভিযোগ রয়েছে, অনেকের জমি ভুয়া দলিলবলে নিজের দাবি করছে প্রতিষ্ঠানটি। এমনকি অনেক কৃষকের ফসলি জমিতে জোর করে বালু ভরাট করে দখলে নেওয়া হচ্ছে। প্রতিবাদ করলেই বিভিন্ন মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়া হচ্ছে ওই পরিবারকে। অথচ, প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ করার জন্য রয়েছে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের স্থায়ী নিষেধাজ্ঞা।
প্রাপ্ত অভিযোগ থেকে জানা যায়, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাউজক) পূর্বাচল নতুন শহরের ২১ নম্বর সেক্টর সংলগ্ন উপজেলার দাউদপুর ইউনিয়নের কুলিয়াদী ও রঘুরামপুর মৌজায় গড়ে তোলা ‘পূর্বাচল ট্রাস্ট সিটি’ প্রকল্প অঞ্চলে জমি না কিনেই মাত্রাতিরিক্ত প্লট বিক্রি করেছে। এতে প্রতিষ্ঠানটি গ্রাহকের শত শত কোটি টাকা হাতিয়ে নিলেও গ্রাহকদের প্লট দিতে পারছে না। এ কারণে অনেক গ্রাহক প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। আর গ্রাহকদের শান্ত করতে প্রতিষ্ঠানটি প্রকল্প এলাকার কৃষকদের ফসলি জমিতে হঠাৎ করেই বালু ভরাট শুরু করে। এমনকি অনেক কৃষকের জমি ভুয়া দলিল করে নিজেদের বলে দাবি করতে শুরু করে। এছাড়া এ কোম্পানি হুমকি ও ভয়ভীতি দেখিয়ে কুলিয়াদী মৌজায় কুলিয়াদী এলাকার নাসির মিয়া, আমজাদ হোসেন, শিমুলিয়ার হামিদ মিয়া, রঘুমারপুর মৌজায় রঘুরামপুর এলাকার ঈমান খান, হারুনুর রশিদসহ প্রায় ১৩৬ জনের মোট ১০০ বিঘা জমিতে জোর করে কোম্পানির সাইবোর্ড লাগিয়ে দিয়েছে। এ ব্যাপারে প্রতিবাদ করায় মুরাদ হাসান শিপন, রতন মিয়া, আমরান হোসেন, ইমান আলী, সজল মিয়া, খানজা মিয়া, কামাল হোসেন, ফরহাদ মিয়া, নুরাজ্জল খান, খোকন, মেহের আলীসহ অন্তত অর্ধশত কৃষককে রূপগঞ্জ ও রাজধানীর বিভিন্ন থানায় মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হয়েছে। অনেকে দীর্ঘদিন জেল খেটেছেন এ প্রতিষ্ঠানের ‘মিথ্যা’ মামলায়।
২০১৭ সালের ১৫ মে স্থানীয় ১৩৬ জন জমির মালিকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) ট্রাস্ট পূর্বাচল নামক আবাসন কোম্পানি তার প্রকল্পে ন্যূনতম জমি না কিনে এবং রাজউক থেকে প্রকল্পের অনুমোদন না নিয়ে প্রকল্পের বিজ্ঞাপন প্রচার, জমি, দখল, বালু ভরাটসহ প্লট বিক্রয়র কার্যক্রমের ওপর ২০১৭ সালের ১২ জুলাই নিষেধাজ্ঞা জারি করে। রাউজকের সচিব সুশান্ত চাকমা স্বাক্ষরিত ওই নিষেধাজ্ঞার অনুুলিপি দুর্নীতি দমন কমিশনে পাঠায় রাউজক, যার স্বারক নং-২৫.৩৯.০০০০. ০৩০. ৩২. ০০৪.১৭-১০০২(৩)। এরপরও কোম্পানিটি রাউজকের নিষেধাজ্ঞাকে বৃদ্ধাঙুলি দেখিয়ে এখনও এ কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। এ ব্যাপারে ট্রাস্ট সিটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহবুবুর রহমান বলেন, একটি বড় প্রকল্প তৈরি করতে গেলে কিছু ভুলত্রুটি থাকবেই। সাধারণ কৃষকের সঙ্গে আমাদের কোনো দ্বন্দ্ব নেই। ট্রাস্ট একটি সফল আবাসন প্রতিষ্ঠান। পূর্বাচলে এখন পর্যন্ত ৭০০ এর বেশি প্লট বিক্রি হয়েছে আমাদের। সম্পূর্ণভাবে কিস্তি পরিশোধ ও এককালীন টাকা প্রদান করায় ২৫ জনকে এরই মধ্যে প্লট রেজিস্ট্রি করে দেওয়া হয়েছে।
এ ব্যাপারে রূপগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মাহাদুল ইসলাম বলেন, মামলা দিয়ে স্থানীয় জমি মালিকদের জমিতে সাইবোর্ড ও বালু ভরাটের বিষয়ে পুুলিশ তদন্ত করছে। পুলিশ অকারণে কাউকে হয়রানি করবে না বলেও তিনি জানান।