নিরাপদে গন্তব্যে পৌঁছতে মানুষের প্রথম পছন্দ ট্রেন। অথচ টেনযাত্রায় এমন কিছু ভীতিকর ঘটনা ঘটে, যা কিছুতেই প্রত্যাশিত নয়। প্রায়ই চলন্ত ট্রেনে পাথর ছোড়ার ঘটনা ঘটে, আহত হন যাত্রীরা। এমনকি জানালা বন্ধ রেখেও রেহাই পাওয়া যায় নাÑ এসব ক্ষেত্রে ছুড়ে দেওয়া পাথরের কারণে জানালার কাচ ফেটে আহত হন যাত্রীরা। এ ধরনের পাথর ছোড়ার ঘটনায় যাত্রীর মৃত্যু পর্যন্ত ঘটেছে। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের হিসাবে, গত পাঁচ বছরে ট্রেনে পাথর ছুড়ে ২ হাজারের বেশি জানালা-দরজা ভাঙার ঘটনা ঘটেছে। বিষয়টি নিঃসন্দেহে পীড়াদায়ক।
আলোকিত বাংলাদেশে প্রকাশ, বর্তমানে রাজশাহী-ঢাকা-রাজশাহী রুটের ট্রেনযাত্রীদের মূল আতঙ্ক দুর্বৃত্তের ছোড়া পাথর। এমনকি এ রুটে নতুন চালু হওয়া বিরতিহীন ‘বনলতা এক্সপ্রেস’ ট্রেনটিও দুর্বৃত্তদের পাথর হামলা থেকে রেহাই পায়নি। পাথর নিক্ষেপে ট্রেনটির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া এক মাসে এ রুটে চলাচলকারী ট্রেনে অন্তত ১৭টি পাথর নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে। অথচ কাউকেই আটক করা যায়নি। সর্বশেষ গত রোববার সন্ধ্যার পর সিরাজগঞ্জের জামতৈল ও মনসুর আলী স্টেশনের মাঝামাঝি স্থানে রাজশাহী থেকে ঢাকাগামী আন্তঃনগর পদ্মা এক্সপ্রেস ট্রেনে দুর্বৃত্তদের পাথর নিক্ষেপে গুরুতর জখম হয় সালমান জাহান জিসান নামে সাড়ে চার বছরের এক শিশু, তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে মাথায় অস্ত্রোপচার করা হয়। ট্রেনের মতো একটি নিরাপদ সড়ক ব্যবস্থা শুধু কিছু দুর্র্র্বৃত্তের কারণে অনিরাপদ হয়ে যাবে, তা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। এর প্রতীকার জরুরি। দ্রুত পাথর নিক্ষেপকারীদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনতে হবে।
রেলওয়ে আইনের ১২৭ ধারা অনুযায়ী, ট্রেনে পাথর ছোড়া হলে সর্বোচ্চ যাবজ্জীবন কারাদ-সহ ১০ হাজার টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে। পাথর নিক্ষেপে কারও মৃত্যু হলে ৩০২ ধারা অনুযায়ী মৃত্যুদ-ের বিধান রয়েছে। বোঝা যাচ্ছে, এসব আইনের যথাযথ প্রয়োগ করা হচ্ছে না। প্রয়োগ করা হলে নিশ্চয়ই এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটত না। দেশে ট্রেনের সংখ্যা বাড়ার পাশাপাশি রেলের যাত্রীও বেড়েছে। সন্দেহ নেই, ট্রেনে পাথর নিক্ষেপের ঘটনা এভাবে চলতে থাকলে যাত্রীরা ট্রেনবিমুখ হয়ে পড়বেন। এতে সরকারই প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তাই যাত্রীদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে অচিরেই ট্রেনে পাথর নিক্ষেপকারীদের চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় আনতে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কার্যকর ভূমিকা পালন করবেÑ এমনটাই প্রত্যাশা।