আজকের পত্রিকাআপনি দেখছেন ১০-০৫-২০১৯ তারিখে পত্রিকা

অলৌকিক আমস্টারডামের পর ফাইনালে টটেনহ্যাম

স্পোর্টস ডেস্ক
| খেলা

মাথিয়াস ডি লিট ও হাকিম জিয়েচের গোলের পরও ফাইনালে যেতে এত ভুগতে হবে, হয়তো ভাবেনি আয়াক্সও। লুকাস মউরার জোড়া গোলে ম্যাচে ফেরা টটেনহ্যাম হটস্পার পেল কর্নার, ইয়ান ভার্টনহেনের শট ফিরে আসল ক্রসবারে প্রতিহত হয়ে, ফিরতি বলও আয়াক্স ফিরিয়ে দিল লাইন থেকে। স্বপ্নের ফাইনাল থেকে মাত্র মিনিট কয়েক দূরে আয়াক্স। কিন্তু চ্যাম্পিয়ন্স লিগে এবার যেন শেষের জন্যই বরাদ্দ ছিল সব রোমাঞ্চ; যোগ করা সময়েরও ১০ সেকেন্ড বাকি থাকতে ফার্নান্দো ইয়োরেন্তের দেওয়া বল ডি-বক্সে পেলেন লুকাস, আবারও খুঁজে পেলেন জাল। লুকাসের হ্যাটট্রিকে অবিশ্বাস্য এক প্রত্যাবর্তনে আয়াক্সকে টপকে ২০১৮-১৯ চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে টটেনহাম, সেখানে তাদের জন্য অপেক্ষা করছে আরেক অবিশ্বাস্য জয় পাওয়া স্বদেশি লিভারপুল। ৩-২ গোলের জয়, অ্যাগ্রিগ্রেটে ৩-৩। ‘অ্যাওয়ে’ গোলে বিদায় আয়াক্স, চ্যাম্পিয়ন্স লিগে প্রথমে গোল করে এবারই প্রথম কোনো ম্যাচ হারল।

১৯৯৬-এর পর চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনালের এত কাছে আসা হয়নি আয়াক্সের। ম্যাচ শেষে ডি বিক-ডি ইয়ংরা কান্নায় ভেঙে পড়লেও আমস্টারডাম ছিল উৎসবমুখর। ফাইনালে যেতে না পারায় দুয়ো নয়, এতদূর আসতে পারায় প্রিয় দলকে অভিবাদনই জানায় তারা। প্রথমার্ধ শেষে হয়তো মাদ্রিদের টিকিট কাটার প্রস্তুতিই নিচ্ছিলেন তারা। ২ গোলের লিডে শেষ করা অর্ধে স্পার্সকে পাত্তাই দেয়নি তারা। ইয়োহান ক্রুইফ অ্যারেনায় প্রথমার্ধ যেন গত সপ্তাহেরই ‘কার্বন কপি’। কিকঅফ থেকে স্বভাবসুলভ প্রেসিং ফুটবলে স্পার্সকে চেপে ধরে আয়াক্স। অসাধারণ পাসিং, রক্ষণ ছেড়ে মাথিয়াস ডি লিটদের আক্রমণে যোগ দেওয়াÑ আক্ষরিক অর্থেই নিজেদের ‘ট্রেডমার্ক’ ‘টোটাল’ ফুটবলের সব টোটকাই দেখিয়েছে এরিক টেন হাগের দল। লিড নিতেও প্রথম লেগের মতো সময় নেয়নি তারা।
চতুর্থ মিনিটে কর্নারে হেড করে আয়াক্সকে এগিয়ে দেন ১৯ বছর বয়সি অধিনায়ক ডি লিট। চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ইতিহাসে মাত্র চতুর্থ ‘টিনএজার’ হিসেবে সেমিতে গোল পেলেন তিনি, একমাত্র অধিনায়ক হিসেবে গোল করেছেন কোয়ার্টার ও সেমিতে। গোলের পর থেকে প্রথমার্ধের বাকি সময় আমস্টারডাম অ্যারেনায় সমর্থকেরা মেতেছিলেন কিংবদন্তি গায়ক বব মার্লির ‘থ্রি লিটল বার্ডস’ গানে, ‘এভরিথিংস গনা বি অলরাইট’ কোরাসে মুখর ছিল স্টেডিয়াম। প্রথমার্ধে শুধু গোল নয়, পুরো খেলা ছিল চোখে লেগে থাকার মতো, বল দখলের লড়াইটাও ছিল দারুণ। রোজা রেখে মৌসুমের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে নেমেছিলেন আয়াক্সের হাকিম জিয়েচ ও মাজরাউই। ম্যাচের মধ্যেই করেছেন ইফতার। সারা দিনের রোজাও এতটুকু গ্রাস করতে পারেনি তাদের। উল্টো আয়াক্সকে আবারও উল্লাসে মাতিয়েছেন তারাই। ৩৫ মিনিটে নিজেদের অর্ধে হিউঙ-মিন সন থেকে বল কেড়ে নিয়েছিলেন মাজরাউই। পাস দিয়েছিলেন তাদিচকে, স্পার্স বক্সে থাকা জিয়েচকে পাস বাড়ান তিনি। প্রথম টাচেই আগুনে শটে লরিসকে পরাস্ত করেন তিনি। প্রথমার্ধের শেষ দিকে প্রায় পুরো মাঠ দৌড়ে জিয়েচ বল কেড়ে নিয়েছিলেন ড্যানি রোজের পা থেকে। ‘জিয়েচ! জিয়েচ!!’ চিৎকারেই শেষ হয়েছে প্রথমার্ধ।
দ্বিতীয়ার্ধে আয়াক্সের প্রেসিং ফুটবল দেখা যায়নি, উল্টো স্পার্সকে আটকাতে কিছুটা রক্ষণাত্মকই খেলতে হয়েছে। ৫৫ মিনিটে ১-২ করেন ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড লুকাস। ৫৯ মিনিটে শোনেকে কাটিয়ে ২-২ করেন তিনিই। সন-ইয়োরেন্তে থাকলেও লুকাসকে সামলাতেই গলদঘর্ম হচ্ছিল আয়াক্স রক্ষণ। দ্বিতীয়ার্ধে আক্রমণের ধার কমলেও গোলের সুযোগ পেয়েছিল আয়াক্স, ৭২ মিনিটে আবার লিড নেওয়ার সুযোগ নষ্ট হারায়। লুকাস হ্যাটট্রিক করলেও স্পার্সকে ম্যাচে টিকিয়ে রেখেছিলেন লরিস, ভাগ্যও সহায় ছিল বিশ্বকাপজয়ী ফ্রেঞ্চ অধিনায়কের। শেষ দিকে জিয়েচের শট প্রতিহত হয় বারপোস্টে। ভার্টনগেনের মিসে স্বপ্ন ধূলিসাৎ ভাবলেও শেষ পর্যন্ত শেষ হাসি হাসে স্পার্সই, প্রথমবার চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনালে। ২০০৭-০৮ মৌসুমের পর ‘অল ইংলিশ’ ফাইনাল পেল চ্যাম্পিয়ন্স লিগ।