চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠের পাশে থোকায় থোকায় ফুটে আছে গ্রীষ্মের সোনালু ফুল। বৃহস্পতিবার তোলা ছবি ষ আলোকিত বাংলাদেশ
গ্রীষ্মের ঝাঁজালো কড়া রোদ আর গরমে জনজীবন যখন ওষ্ঠাগত, ঠিক তখনই প্রকৃতিতে আনাগোনা শুরু গুলমোহরের লালের ছটায়। হারিয়ে দেয় ফর্সা ও মেঘমুক্ত আকাশের ঝাঁজালো সূর্যালোককেও। তাতানো রোদে মানব জাতিকে স্বস্তি দিতেই যেন প্রকৃতি সাজে অনন্য সাজে। ঋতুরাজ বসন্তের শেষে গ্রীষ্মের শুরুতেই দাউ দাউ আগুনের ফুলকিতে ছেয়ে গেছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) রূপসী ক্যাম্পাস। তবে এ আগুন সত্যিকারে আগুন নয়, এটি হলো গ্রীষ্মের সোনালু ফুলের আগুন। সোনালু ফুলের ঝলমলে রূপ দেখে মনে হয় কোনো রূপসী কন্যা এইমাত্র হলুদের পিঁড়িতে বসল। পুরো গাছ থেকে হলুদ যেন বয়ে বয়ে পড়ছে। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের আইন অনুষদের সামনে, শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট প্রাঙ্গণ, কেন্দ্রীয় খেলার মাঠ এলাকা, বিবিএ অনুষদ প্রাঙ্গণ, লাইব্রেরি চত্বর, লেডিস হল ঝুপড়িসহ ক্যাম্পাসের প্রায় সর্বত্রই ফুটেছে গ্রীষ্মের এ ফুল। এ ফুলের মনমাতানো বৈশাখি হাওয়ায় কিশোরীর কানের দুলের মতো দুলতে থাকা সোনালু ফুলের থোকাগুলো নাড়িয়ে যায় শিক্ষার্থীদের মনও।
জানা গেছে, সোনালু ফুলের আদি নিবাস হিমালয় অঞ্চল। তবে বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান ও মিয়ানমার অঞ্চলজুড়ে এর বিস্তৃতি রয়েছে। অস্ট্রেলিয়ায় নিউ সাউথ ওয়েলস ও কুন্সল্যান্ডের উষ্ণ অঞ্চলে এদের প্রচুর দেখা মেলে। সোনালু গাছ সাধারণত ১৫ থেকে ২০ মিটার উঁচু হয়ে থাকে। উঁচু থেকে মাঝারি উঁচু ভূমি সোনালু গাছ উৎপাদনের জন্য উপযোগী স্থান। পত্র ঝরাবৃক্ষ, শীতে গাছের সব পাতা ঝরে গিয়ে গাছ থাকে পত্র শূন্য এবং বসন্তের শেষে ফুলকলি ধরার আগে গাছে নতুন পাতা গজায়। গ্রীষ্মে গাছের শাখা-প্রশাখাজুড়ে ঝুলন্ত মঞ্জুরিতে সোনালি হলুদ রঙের ফুল ফোটে এবং এর ব্যাপ্তি থাকে গ্রীষ্মকালজুড়ে। ফুলের পাপড়ি পাঁচটি, মাঝে পরাগ অবস্থিত। পাতা হালকা সবুজ, মধ্য শিরা স্পষ্ট। ইংরেজি বিভাগের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী বুশরা জাহান জানান, যখন সারি সারি গাছে সোনালু ফুল ফোটে তখন মনে হয় সোনালি আলোকচ্ছটায় চারপাশ আলোকিত হয়ে গেছে। প্রকৃতিকে নয়নাভিরাম রূপে সাজাতে এবং প্রকৃতি ও পরিবেশের শোভা বর্ধনে সোনালু ফুল অতুলনীয়। সোনালু ফুলকে যত দেখি ততই মুগ্ধ হই। শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী হাফিজুল ইসলাম জানান, প্রতি বছর গ্রীষ্মকালের এ সময় ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে সোনালু ফুলে ছেয়ে যায়। দেশীয় এ ফুলগুলো সবচেয়ে বেশি ফোটে শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের আঙিনা এবং কেন্দ্রীয় খেলার মাঠের আশপাশে। একসঙ্গে এত সোনালু ফুলের সম্ভার ক্যম্পাসকে এক টুকরো স্বর্গে পরিণত করে যা স্বচক্ষে না দেখলে বিশ্বাস করা যাবে না। চবির সৌন্দর্যের অন্যতম উৎস সোনালু ফুলের গাছগুলো দিন দিন নির্বিচারে কাটা হচ্ছে। চবি এ সৌন্দর্যকে ধরতে রাখে প্রশাসনকে তৎপর ও দায়িত্বশীল হতে হবে। আরবি বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মাইনউদ্দীন জানান, গ্রীষ্মের প্রচ- তাপপ্রবাহে জনজীবন যখন অতিষ্ঠ ঠিক তখনই যেন মানুষকে একটু স্বস্তি দিতে ধরাধামে আবির্ভূত হয় সোনালু ফুল। আমাকে মুগ্ধ করে ক্যাম্পাসের সবুজ বৃক্ষের ফুলের সমাহার।