আজকের পত্রিকাআপনি দেখছেন ১০-০৫-২০১৯ তারিখে পত্রিকা

বাড়ছে যানজট দুর্ঘটনা জনদুর্ভোগ

রংপুর নগরীতে ৩৫ হাজার অবৈধ ব্যাটারিচালিত যান

আবদুর রহমান মিন্টু, রংপুর
| নগর মহানগর

রংপুর সিটি করপোরেশনে (রসিক) ৪ হাজার ৮০০ লাইসেন্সের বিপরীতে নগরজুড়ে প্রতিদিন প্রায় ৩৫ হাজারের বেশি অটোরিকশা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। ফলে নগরীতে চলাচল করা দুর্বিষহ হয়ে পড়েছে। প্রতিদিন যানজটের কারণে মানুষের কর্মঘণ্টা গড়ে দেড় ঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে। এজন্য রংপুর নগরীতে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ও অটোবাইক চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি হয়ে পড়েছে। বিকল্প সড়ক নির্মাণ করা প্রয়োজন বলেও মনে করছেন নগরবাসী। 

মহানগরীর অর্জন মোড় (মডার্ন মোড়), পার্কের মোড়, কলেজ রোড, লালবাগ, শাপলা চত্বর, গ্র্যান্ড হোটেল মোড়, শহীদ অঙ্গন চত্বর (জাহাজ কোম্পানি মোড়) সুপার মার্কেট ট্রাফিক মোড়, সিটি বাজার মোড়, কাচারি বাজার জিরো পয়েন্ট, মেডিকেল মোড়, সাতমাথা মোড়, মাহীগঞ্জ, কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল রোডে প্রতিদিনই কোনো না কোনো সময় যানজটে আটকা পড়তে হয় নগরবাসীকে। এতে অনেক সময় চরম ভোগান্তিতে পড়ছে প্রতিদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগামী শিক্ষার্থী, চাকরিজীবী ও নানা কাজে নগরীতে চলাচলকারী সাধারণ মানুষ। নগরীর প্রধান সড়কগুলো সূর্য ওঠার পরই ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ও অটোবাইকের দখলে চলে যায়। অদক্ষ চালক দ্বারা এসব ব্যাটারিচালিত যানবাহনের কারণে প্রায় সময় মারাত্মক দুর্ঘটনা ঘটছে। 
রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও নগরীর বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সড়ক দুর্ঘটনায় যারা আহত হয়ে এসব হাসপাতাল-ক্লিনিকে চিকিৎসার জন্য আসেন, তাদের ৯০ শতাংশই ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ও অটোবাইক দুর্ঘটনার শিকার। নগরীতে প্রবেশের একটি মাত্র সড়ক, যা নগরীর দক্ষিণ, পূর্ব, উত্তর থেকে মেডিকেল মোড় পর্যন্ত বিস্তৃত এবং রেলস্টেশন, সাতমাথা, অর্জন মোড়, হারাগাছ সড়কের সঙ্গে যুক্ত। এ একটি মাত্র সড়কপথে নগরীতে চলাচল করতে হচ্ছে নগরবাসী ও বিভিন্ন কাজে আসা সাধারণ মানুষকে। আদিকাল থেকে এ একটি মাত্র সড়ক ছাড়া আর কোনো বিকল্প সড়ক নির্মাণ হয়নি নগরে। তাই চলাচলের একমাত্র সড়ক এটি। এখন নগরীতে জনসংখ্যা প্রায় সাড়ে সাত লাখ। প্রতিদিন নগরীর বাইরে থেকে চিকিৎসা, চাকরি, ব্যবসাসহ নানা কাজে ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যাতায়াত করে প্রায় ৭০ হাজার মানুষ। সব মিলিয়ে একটি মাত্র সড়ক যা নগরীর এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তকে সংযুক্ত করেছে। এ একটিমাত্র সড়কে অবাধে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে লাইসেন্সবিহীন প্রায় ৩৫ হাজার ব্যাটারিচালিত রিকশা ও আটোবাইক। এছাড়া পায়ে চালিত রিকশা ও ব্যক্তিগত মোটরবাইকসহ কার-মাইক্রোবাস চলাচল করে থাকে। ফলে প্রতিনিয়ত ঘর থেকে বাইরে বের হলে যানজটের ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে নগরবাসীকে। 
সুধী মহল মনে করেন, নগরীর যানজট নিরসনে জনগণ, ব্যবসায়ী, জেলা প্রশাসন, সিটি করপোরেশন, জেলা ও মেট্রোপলিটন পুলিশের জরুরি সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন। একা কোনো সংস্থার পক্ষে এ কাজ করা সম্ভব নয়। যত দ্রুত সম্ভব নগরীর যানজট নিরসনে উদ্যোগ নেওয়া উচিত। নগরীর গুপ্তপাড়া এলাকার সাইদ বাবু বলেন, রংপুরে এখন হাজার হাজার অটোরিকশা চলছে। শহরের পাশাপাশি পাশের উপজেলাগুলো থেকেও এখানে অটোরিকশা আসছে। এতে প্রতিদিনই নগরীর প্রধান সড়কসহ অলিগলির সড়কে যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। বাসা থেকে বের হয়ে ভালোভাবে যাতায়াত করা কঠিন হয়ে পড়েছে। সিটি করপোরেশন ও মেট্রোপলিটন পুলিশ চাইলে সবকিছু করতে পারে। রংপুর প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক রশীদ বাবু বলেন, নগরীর অধিকাংশ অটোরিকশার চালক অদক্ষ। মাত্রাতিরিক্ত অটোরিকশার কারণে দুর্ঘটনা ঘটছে, যা সিটি করপোরেশনসহ আইন প্রয়োগকারী সংস্থা নজরদারি করছে না। আমরা সাংবাদিকরা পুলিশের নগর কমিশনার ও মেয়রকে আলাদা আলাদাভাবে বলেছি এর সমাধান করতে। কিন্তু আজ পর্যন্ত তা করা হয়নি। 
রংপুর জেলা ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা মালিক শ্রমিক সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার কবির সুমন বলেন, অবৈধ অটোরিকশা কমাতে আমরা একাধিকবার সিটি করপোরেশনকে অনুরোধ করেছি। কিন্তু সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে না নেওয়ায় লাইসেন্সবিহীন অটোরিকশার নগরীতে পরিণত হয়েছে রংপুর।