ফেনীর সোনাগাজীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফির শরীরে আগুন দেওয়ার সময় যে গ্লাসে করে অগ্নিসংযোগকারীরা কেরোসিন তেল ছিটিয়েছিলেন, সেই গ্লাসটি মামলার আলামত হিসেবে উদ্ধার করেছে পুলিশ। সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার প্রশাসনিক ভবনের দ্বিতীয় তলায় অধ্যক্ষের দপ্তরের সামনের ওয়াল কেবিনেটের ভেতর থেকে গ্লাসটি উদ্ধার করা হয়। বুধবার বিকালে তদন্তকারী সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) দল গ্লাসটি উদ্ধার করে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই’র পরিদর্শক মো. শাহ আলম গ্লাসটি উদ্ধারের তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
পিবিআই’র পরিদর্শক মো. শাহ আলম বলেন, রিমান্ডে থাকা মামলার আসামি শাহাদাত হোসেন ওরফে শামীম ও জাবেদ হোসেন ও যোবায়ের আহম্মদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে বিকালে তাদের তিনজনকে নিয়ে সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসায় আসে পিবিআই। এ সময় অভিযান চালিয়ে মাদ্রাসার প্রশাসনিক ভবনের দ্বিতীয় তলায় অধ্যক্ষে দপ্তরের সমানের ওয়াল কেবিনেট থেকে গ্লাসটি উদ্ধার করা হয়।
এ সময় পিবিআই’র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. মনিরুজ্জামান, পরিদর্শক মো. মোনায়েম হোসেন, পরিদর্শক লুৎফুর রহমানসহ প্রশাসনের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। পরে তাদের তিনজনকে ফেনীর পিবিআই কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। অগ্নিদগ্ধ নুসরাত ১০ এপ্রিল বুধবার রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে মারা যান। ৬ এপ্রিল সকালে আলিম পরীক্ষা দিতে সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসায় যান নুসরাত। এ সময় কয়েকজন তাকে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে করা মামলা তুলে নিতে চাপ দেন। তিনি অস্বীকৃতি জানালে তার গায়ে আগুন দেওয়া হয়। রিমান্ড শেষে ৩ জন কারাগারে : ফেনীর সোনাগাজীতে মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি হত্যা মামলার অন্যতম আসামি শাহাদাত হোসেন শামীমসহ তিনজনকে আরও এক দিনের রিমান্ড শেষে বৃহস্পতিবার দুপুরে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. জাকির হোসাইনের আদালতে হাজির করা হয়। বিচারক তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। এর আগে তিনজনই নুসরাত হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও ফেনী পিবিআইয়ের পরিদর্শক মো. শাহ আলম বলেন, নুসরাত হত্যার আলামত উদ্ধার ও শনাক্তকরণের জন্য মামলার অন্যতম আসামি শাহাদাত হোসেন শামীম, জাবেদ হোসেন ও জোবায়ের আহমেদকে এক দিনের রিমান্ড শেষে আদালতে তোলা হলে বিচারক তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। আলোচিত এ মামলায় এখন পর্যন্ত ২২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
এরা হলেনÑ সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ এসএম সিরাজ-উদ-দৌলা, কাউন্সিলর ও পৌর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাকসুদ আলম, শিক্ষক আবছার উদ্দিন, নুসরাতের সহপাঠী আরিফুল ইসলাম, নূর হোসেন, কেফায়াত উল্লাহ জনি, মোহাম্মদ আলা উদ্দিন, শহিদুল ইসলাম, অধ্যক্ষের ভাগ্নি উম্মে সুলতানা পপি, জাবেদ হোসেন, জোবায়ের আহমেদ, নূর উদ্দিন, শাহাদাত হোসেন শামীম, মো. শামীম, কামরুন নাহার মনি, আবদুর রহিম ওরফে শরিফ, ইফতেখার হোসেন রানা, এমরান হোসেন মামুন, মহিউদ্দিন শাকিল, হাফেজ আবদুল কাদের, জান্নাতুল আফরোজ মনি এবং উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও ওই মাদ্রাসার সাবেক সহ-সভাপতি রুহুল আমিন। এ মামলায় অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ-দৌলাসহ ১২ জন আদালতে হত্যার দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন।