আজকের পত্রিকাআপনি দেখছেন ১০-০৫-২০১৯ তারিখে পত্রিকা

বেতন বকেয়া ১৬ কোটি ৪৪ লাখ টাকা

হতাশায় খুলনার পাটকলের সহস্রাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী

মুহাম্মদ নূরুজ্জামান, খুলনা
| শেষ পাতা

৯ দফা দাবিতে রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল শ্রমিকরা বৃহস্পতিবার ফের ডেমরায় ধর্মঘট ও সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন ষ আলোকিত বাংলাদেশ

আন্দোলরত শ্রমিকদের মতো খুলনা অঞ্চলের রাষ্ট্রায়ত্ত ৯টি পাটকলের সহস্রাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীও মাসের পর মাস বেতন না পেয়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। বর্তমানে রাষ্ট্রায়ত্ত ৯টি পাটকলের ১ হাজার ১৮৭ কর্মকর্তা-কর্মচারীর ১৬ কোটি ৪৪ লাখ ১৭ হাজার টাকা বেতন বকেয়া রয়েছে। দীর্ঘদিন বেতন বকেয়া থাকায় এসব মিলের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে চরম হতাশা বিরাজ করছে।

বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশন খুলনা অঞ্চল (বিজেএমসি) ও সংশ্লিষ্ট মিল সূত্র জানায়, খুলনা অঞ্চলে রয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত ৯টি পাটকল। এসব পাটকলে ১ হাজার ১৮৭ কর্মকর্তা-কর্মচারী কাজ করেন। এদের মধ্যে ৪১৪ জন কর্মকর্তা ও ৭৭৩ জন কর্মচারী বর্তমানে কর্মরত আছেন। তাদের বকেয়া বেতনের পরিমাণ ১৬ কোটি ৪৪ লাখ ১৭ হাজার টাকা। সূত্র জানায়, আলিম জুটমিলে ১৭ জন কর্মকর্তা ও ২০  কর্মচারীসহ ৩৭ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর গেল চার মাসের বেতন বাবদ বকেয়া রয়েছে ১ কোটি ৩ লাখ ৬৮ হাজার টাকা, ক্রিসেন্ট জুটমিলে ৮৬ কর্মকর্তা ও ১৬৩ কর্মচারীসহ ২৪৯ কর্মকর্তা-কর্মচারীর গেল চার মাসের বেতন বাবদ বকেয়া রয়েছে ৩ কোটি ৮০ লাখ টাকা, দৌলতপুর জুটমিলে ২২ জন কর্মকর্তা ও ৫২ জন কর্মচারীসহ ৭৪ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর গেল তিন মাসের বেতন বাবদ বকেয়া রয়েছে ৬৮ লাখ ৮৫ হাজার টাকা, খালিশপুর জুটমিলে ৭৫ কর্মকর্তা ও ১৬০ কর্মচারীসহ ২৩৫ কর্মকর্তা-কর্মচারীর গেল তিন মাসের বেতন বাবদ বকেয়া রয়েছে ১ কোটি ৮০ টাকা, প্লাটিনাম জুবিলি জুটমিলে ৬৫ জন কর্মকর্তা ও ১৩১ জন কর্মচারীসহ ১৯৬ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর গেল চার মাসের বেতন বাবদ বকেয়া রয়েছে ৩ কোটি টাকা, ইস্টার্ন জুটমিলে ৩২ কর্মকর্তা, ৭১ কর্মচারীসহ ১০৩ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর গেল চার মাসের বেতন বাবদ বকেয়া রয়েছে ১ কোটি ৬০ লাখ ৬৮ হাজার টাকা, স্টার জুটমিলে ৫৬ কর্মকর্তা, ৯১ কর্মচারীসহ ১৪৭ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর চার মাসের বেতন বাবদ বকেয়া রয়েছে ১ কোটি ৯৬ লাখ ৯৬ হাজার টাকা, কার্পেন্টিং জুটমিলে ২০ কর্মকর্তা, ৫২ কর্মচারীসহ ৭২ কর্মকর্তা-কর্মচারীর গেল তিন মাসের বেতন বাবদ বকেয়া রয়েছে ৬৬ লাখ টাকা এবং জেজেআই জুটমিলে ৪১ কর্মকর্তা ও ৯৮ কর্মচারীসহ ১৩৯ কর্মকর্তা-কর্মচারীর গেল চার মাসের বেতন বাবদ ১ কোটি ৪৪ লাখ টাকা বকেয়া রয়েছে। 

সূত্র জানান, চলতি বছর শুরুর পর গেল চার মাস আলিম, ক্রিসেন্ট, ইন্টার্ন, প্লাটিনাম, স্টার ও জেজেআই জুটমিলের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বেতন পাচ্ছেন না। এছাড়া কার্পেটিং,দৌলতপুর ও খালিশপুর জুটমিলের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের তিন মাসের বেতন বকেয়া রয়েছে। আলিম জুটমিলের প্রকল্প প্রধান (জিএম) মো. খলিলুর রহমান বলেন, গত চার মাস ধরে আমাদের মিলে ৩৭ কর্মকর্তা-কর্মচারী বেতন পাচ্ছে না। আরও একটি মাস শুরু হয়েছে, এখনও বেতন পাইনি। বর্তমানে পরিবার-পরিজনসহ মিলের শ্রমিকদের মতোই মানবেতর জীবনযাপন করছি। টাকার অভাবে প্রয়োজনীয় নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনতে পারছি না’। ইস্টার্ন জুটমিলের প্রকল্প প্রধান (জিএম) ড. মাহবুবুর রহমান জুলফিকার বলেন, ‘গত চার মাস ধরে আমরা বেতন পাচ্ছি না। এ মাসেও বেতন পাব কি না, জানি না।’ দীর্ঘদিন বেতন বকেয়া থাকায় এসব মিলের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে চরম হতাশা বিরাজ করছে। তাদের মতো একইভাবে হতাশা প্রকাশ করেছেন বাকি আটটি জুটমিলের প্রকল্প প্রধানসহ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। খুলনা অঞ্চলের রাষ্ট্রায়ত্ত ৯টি পাটকলে প্রায় ৩২৫ কোটি টাকার পাটজাত রপ্তানি পণ্য অবিক্রিত অবস্থায় মজুদ রয়েছে। বাংলাদেশের পাটজাত পণ্যের মূল বাজার সুদান, ঘানা, সিরিয়া, ইরান ও ভারত। কিন্তু প্রায় এক বছর ধরে এসব দেশে পণ্য বিক্রি বন্ধ রয়েছে। ফলে মিলগুলো আর্থিক সংকটে পড়েছে। বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশন খুলনা অঞ্চলের (বিজেএমসি) সমন্বয়কারী মো. সাজ্জাদ হোসেন বলেন, খুলনা অঞ্চলের রাষ্ট্রায়ত্ত ৯টি পাটকলের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন বকেয়া রয়েছে ১৬ কোটি ৪৪ লাখ ১৭ হাজার টাকা। ফলে শ্রমিকের মতো তাদের মধ্যেও হতাশা বিরাজ করছে। তিনি জানান, বিদেশে পাটপণ্য বিক্রি না হওয়ায় মিলগুলোয় আর্থিক সংকট তৈরি হয়েছে। এ সংকট সমাধানে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও সরকারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।