কঙ্গোতে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে দায়িত্ব পালনকালে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত বাংলাদেশ পুলিশের শীর্ষ নারী কর্মকর্তা পুলিশ স্টাফ কলেজের রেক্টর (অতিরিক্ত আইজিপি) রৌশন আরা বেগমকে অশ্রুসিক্ত অন্তিম বিদায় জানিয়েছেন শুভাকাক্সক্ষীরা। বৃহস্পতিবার বাদ জোহর রাজধানীর রাজারবাগ পুলিশ লাইনসে এসআই শিরু মিয়া মিলনায়তনে তার সর্বশেষ জানাজা শেষে বিদায় জানানো হয়। মরহুমাকে রাজধানীর আজিমপুর কবরস্থানে তার মায়ের কবরের পাশে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয়েছে।
রৌশন আরা বেগমের প্রথম জানাজা বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় রাজধানীর নয়াটোলা জামে মসজিদে, দ্বিতীয় জানাজা দুপুর ১২টায় মগবাজার ওয়্যারলেস জামে মসজিদে অনুষ্ঠিত হয়। রাজারবাগ পুলিশ লাইনসের এসআই শিরু মিয়া মিলনায়তনে বাদ জোহর সর্বশেষ জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। ওই জানাজায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নুরুল হুদা, আইজিপি ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব মো. নজিবুর রহমান, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব মোস্তাফা কামাল উদ্দিনসহ ঢাকার পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটের প্রধানরা, মরহুমার দীর্ঘদিনের সহকর্মী, পরিবারের সদস্য এবং আত্মীয়স্বজনরা অংশগ্রহণ করেন। জানাজা শেষে পুলিশের বিভিন্ন ইউনিট, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, র্যাব, পিবিআই, সিআইডি, পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন, পুলিশ সদর দপ্তর, স্থানীয় সংসদ সদস্যরা পুষ্পস্তবক অর্পণ করে তাকে শ্রদ্ধা জানান।
মহিলা পরিষদের নেতারা বাংলাদেশ পুলিশের পতাকা মোড়ানো মরহুমার কফিনে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে তার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এরপর পুলিশের একটি সুসজ্জিত দল মরহুমাকে ফিউনারেল গার্ড অব অনার প্রদান করে। এ সময় বিউগলে করুণ সুর বাজানো হয়। জানাজার আগে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আছাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, ‘সারাজীবন এ পুলিশ কর্মকর্তা নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করে গেছেন। অনেক পরিশ্রম করে তিনি আজকের পজিশনে এসেছিলেন। আমরা মনে করি, তিনি যেভাবে নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন, তাতে আরও ভালো পজিশনে যাওয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছিল। তার অকালে চলে যাওয়া পুলিশের জন্য তো বটেই, দেশের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি।’ মরহুমার সপ্তম বিসিএসের সহকর্মী র্যাব মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ বলেন, এক সঙ্গে পুলিশে যোগদান করেছি। ট্রেনিং করেছি, অনেক অনেক স্মৃতি জড়িয়ে। দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে তিনি কখনও অসততার আশ্রয় নেননি; নিষ্ঠার সঙ্গে পুঙ্খানুপুঙ্খ দায়িত্ব পালন করে গেছেন। তাকে দেখে উদীয়মান, মেধাবী অনেক ছাত্রী বিসিএস দিয়ে পুলিশে আসার স্বপ্ন দেখেছে। তার অকাল মৃত্যু সত্যিই অপূরণীয়।
বৃহস্পতিবার ভোরে টার্কিশ এয়ারওয়েজের একটি বিমানযোগে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছায় মরহুমার লাশ। এ সময় পরিবারের সদস্য, আত্মীয়স্বজনসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। লাশ বিমান থেকে নামার পরই প্রিয়জন হারানোর বেদনায় কান্নায় ভেঙে পড়েন স্বজনরা। ৩ মে ডেমোক্র্যাটিক রিপাবলিক অব কঙ্গোতে শান্তিরক্ষা মিশনে কর্মরত বাংলাদেশ নারী ফর্মড পুলিশ ইউনিটের মেডেল প্যারেড উপলক্ষে গিয়েছিলেন রৌশন আরা বেগম। সেখানে রোববার স্থানীয় সময় সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় সড়ক দুর্ঘটনায় তিনি নিহত হন।