শিঙা লাগানো প্রিয় নবীজির সুন্নত। শিঙার আরবি হলো হেজামা। রোজা অবস্থায় যদি কোনো মোমিন শিঙা লাগায়, তখন তার রোজা ভঙ্গ হবে না। শিঙার দরুন রোজাদারের রোজার কোনো প্রকার ক্ষতি হয় না। শিঙা গ্রহণকারীর রোজা আপন অবস্থায় বহাল থাকবে। নবীজি (সা.) স্বয়ং রোজাবস্থায় শিঙা লাগাতেন। সুতরাং শিঙার দ্বারা রোজা নষ্ট হয় না। তবে শিঙা লাগাতে গিয়ে যদি রক্ত শিঙাদাতার মুখে ঢুকে পেটের ভেতর প্রবেশ করে, তখন তার রোজা ভেঙে যাবে, আর রক্ত বের করার কারণে যদি শিঙা গ্রহণকারীর শরীর দুর্বল হয়ে যায়, তখন তা মাকরুহ হবে। তাই মুসলিম উম্মাহর উচিত রোজার সময় শিঙা লাগানোর ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করা। এতে রোজার পবিত্রতা রক্ষা হবে। এ মর্মে রাসুল (সা.) বললেন, ‘তিন জিনিস রোজাদারের রোজা নষ্ট করে নাÑ শিঙা লাগানো, বমি করা ও স্বপ্নদোষ।’ (তিরমিজি : ৭২৩)।
হাদিসে আরও আছেÑ ‘হজরত আব্বাস (রা.) বলেন, নবী করিম (সা.) হজের ইহরাম অবস্থায় শিঙা গ্রহণ করেছেন এবং রোজা অবস্থায়ও শিঙা গ্রহণ করেছেন।’ (বোখারি : ১৯৭৩)।
রোজা অবস্থায় রাতে শিঙা লাগানো উত্তম : হেজামা লাগানো সুন্নত। এটি শরীরের জন্য বেশ উপকারী। বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের মতানুসারে সুস্বাস্থ্যর জন্য হেজামার গুরুত্ব অপরিসীম। সাধারণত রোজা অবস্থায় শিঙা লাগানো ইসলামি শরিয়ত মতে বৈধ। তবে দিনের বেলায় না লাগিয়ে রাতে লাগানো উত্তম। এতে রোজাদারের অন্তরে রোজা ভাঙার সন্দেহ সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা নেই। কেউ কেউ রোজার সময় দিনে শিঙা লাগানোকে মাকরুহ বলেছেন। নবী করিম (সা.) রোজা অবস্থায় রাতেই শিঙা লাগাতেন। এটাই রোজাদারের জন্য শিঙা লাগানোর উত্তম সময়। হাদিসে আছেÑ ‘হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) প্রথমে রোজা অবস্থায় শিঙা লাগাতেন অতঃপর তা ছেড়ে দিয়েছিলেন এবং রাতে তিনি শিঙা লাগাতেন।’ (মেশকাত : ১৯২০)।
শিঙা লাগান যখন মাকরুহ : শিঙা লাগানো শারীরিক সুস্থতা আনয়ন করে। তবে অনেক সময় শরীরে দুর্বলতাও সৃষ্টি করে। তাই শিঙা লাগানোর দরুন যদি রোজাদারের শরীর দুর্বল হওয়ার আশঙ্ক থাকে, তখন তার জন্য শিঙা লাগানো মাকরুহ। কারণ রোজা পালনের জন্য শারীরিক শক্তি ও সুস্থতার প্রয়োজন বেশি। তাই রোজাদারের জন্য শিঙা লাগানোর ক্ষেত্রে শারীরিক দুর্বলতার আশঙ্কামুক্ত হতে হবে। তাবেয়ি সাবেত বুনানি (রহ.) বলেন, একদা হজরত আনাস ইবনে মালেক (রা.) কে জিজ্ঞেস করা হলো, রাসুল (সা.) এর যুগে কি আপনারা রোজাদারের পক্ষে শিঙা লাগানোকে মাকরুহ মনে করতেন? তিনি বললেন, না। কিন্তু দুর্বলতা আসার কারণে তা মাকরুহ মনে করতাম। (বোখারি : ১৯৭৫)।
লেখক : শিক্ষক, নাজিরহাট বড় মাদ্রাসা ফটিকছড়ি, চট্টগ্রাম